১৯৭১ এর যুদ্ধে একটি সিক্রেট মিশনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কন্ডোম ব্যবহার করেছিল ভারতীয় সেনা ! কিন্তু কেন ?

যুদ্ধে কন্ডোম ব্যবহারের এই ইতিহাস আপনি জানেন কি ?

author-image
Debjit Biswas
New Update
1971

নিজস্ব সংবাদদাতা : ভারত ও পাকিস্তান ইতিমধ্যে চারবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে - ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯। আর এই সংঘাত থেকেই  সাহসিকতা এবং কৌশলগতভাবে শত্রুকে পরাজিত করার অসংখ্য গল্প ইতিমধ্যেই আমাদের সামনে এসেছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর দক্ষতা এবং কৌশলের প্রমাণ দেয়। আর সবচেয়ে বড় কথা এই ঘটনার সাথে কন্ডোম জড়িত ছিল, যা কখনও কোনও যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে না।

ক্যাপ্টেন এমএনআর সামন্ত এবং সন্দীপ উন্নিথানের লেখা ''অপারেশন এক্স'' বইটিতে গেরিলা অভিযানের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী কৌশলগত উদ্দেশ্যে হাজার হাজার কন্ডোম ব্যবহার করেছিল। এই ঘটনাটি ১৯৭১ এর প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই ঘটেছিল। আসলে ভারতীয় নৌবাহিনী দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পাকিস্তানের পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করার জন্য একটি গোপন অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই অভিযানটি পাকিস্তানি যুদ্ধ জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল। তাই ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানি জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে এই গোপন অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ঘাঁটি স্থাপন করেছিল এবং খাদ্য, অস্ত্র সহ অন্যান্য জিনিসপত্রের তাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। পাকিস্তান থেকে তাদের কাছে এই জিনিসপত্র বহন করার জন্য বণিক এবং অন্যান্য জাহাজ ব্যবহার করা হত। ভারতীয় নৌবাহিনী এই জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে তাদের ন্যাভাল মাইন্ ব্যবহার করে তাদের নেটওয়ার্ক ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, এই মাইনগুলিকে নীচে আটকে রাখার প্রয়োজন ছিল এবং কেবল দক্ষ ডুবুরিরাই এই কাজটি করতে পারত।

ভারতীয় বাহিনীর হাতে সেইসময় মাত্র কয়েকজন এমন লোক ছিল যারা কিলোমিটারের পর কিলোমিটার সাঁতার কাটতে পারত। সেই সময়ে, পাকিস্তান বাংলাদেশে চরম নৃশংসতা চালাচ্ছিল, যার ফলে বাংলাদেশের বাসিন্দারা ভারতে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছিল। ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোককে বেছে নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সাঁতার কাটার প্রশিক্ষণ দেওয়ার এবং জাহাজগুলিকে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সময়ে, ভারতীয় নৌবাহিনীকে লিম্পেট মাইন ব্যবহার করতে হয়েছিল, যা একটি দেশীয় প্রযুক্তিতে  তৈরি অস্ত্র যা জাহাজগুলিকে উড়িয়ে দিতে পারে। তাই, সামুদ্রিক ডুবুরিদের একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল এবং তাদের শরীরে মাইন বেঁধে সাঁতার কাটার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। এরকম বেশ কয়েকটি ব্যাচ তৈরি করা হয়েছিল এবং প্রতিটি ব্যাচে প্রায় 300 জনকে 5-10 কিলোমিটার সাঁতার কাটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরেও, ভারতীয় নৌবাহিনী একটি বড় ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল।

1971

লিম্পেট মাইনের সমস্যা

লিম্পেট মাইনে একটি দ্রবণীয় প্লাগ ছিল যা জল স্পর্শ করার 30 মিনিটের মধ্যে মাইনটিকে উড়িয়ে দিতে পারতো। এই সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময়, ভারতীয় অফিসাররা একটি অদ্ভুত সমাধান বের করলেন। তারা ঠিক করলেন যে এই প্লাগগুলিকে কন্ডোম দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। প্রথমে, এটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। কিন্তু তারা চেষ্টা করেন এবং পরীক্ষা চালান। এবং এটি কাজ করে। এরপর তারা প্রচুর পরিমাণে কন্ডোমের অর্ডার দিতে শুরু করেন। নৌবাহিনীর সদর দপ্তর পর্যন্ত কন্ডোমের এই ব্যাপক অর্ডার দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এরপর তাদের কাছে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়, এবং তাদের মধ্যে কিছু জনের সামনেই এই পরিকল্পনাটি আর একবার কার্যকর করা হয়। 

এরপর প্রতিটি ডুবুরি তার শরীরে প্রায় চার থেকে পাঁচটি মাইন বেঁধে জাহাজের ঘাঁটিতে আটকে দিত। এই অভিযানে পাকিস্তান তার বেশ কয়েকটি জাহাজ হারিয়েছিল, আর এই অভিযানের ফলে অন্যান্য দেশও এই অঞ্চলে তাদের জাহাজ পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিল। যুদ্ধে কন্ডোমের ব্যবহার  সম্পর্কে এই আকর্ষণীয় গল্পটি বিশ্ববাসীর কাছে এখনও খুব একটা পরিচিত নয়।