পরদা নয়, ব্যাট হাতে ইতিহাস— ভারতীয় মেয়েদের লড়াই শিউরে ওঠাবে আপনাকে

ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটারদের লড়াই, ত্যাগ ও বিশ্বজয়ের যাত্রা— শেফালি, হরমনপ্রীত, রিচা, জেমাইমা, অমনজ্যোতদের সংগ্রামী পথচলা। তাদের সাফল্যে উঠে এসেছে নারীশক্তির জয়গাথা এবং ভারতের গর্বের ইতিহাস।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
indian women cricket team aaa


নিজস্ব সংবাদদাতা: চোখ বন্ধ করুন। একটু মনে করার চেষ্টা করুন সেই দিনগুলো। যখন স্বপ্ন ছিল বিলাসিতা। ইচ্ছাশক্তি ছিল, পরিশ্রম ছিল, অনমনীয় জেদ ছিল— কিন্তু সাহস ছিল না চোখ তুলে বলা, “আমিও পারব।” তখন ভারতীয় মেয়েরা শুধু খেলার মাঠেই নয়, সমাজের চোখেও প্রতিনিয়ত লড়াই করত। ভেঙে পড়া মনকে বারবার তারা বোঝাত, হার মানলে হবে না। এই পথ কোনও ফুলের বিছানা নয়। কাঁটার পথেই হাঁটতে শিখেছে ভারতীয় নারী ক্রিকেট।

আজ আলো ঝলমলে স্টেডিয়াম, ক্যামেরা, করতালি—এই বিশ্বের বাইরেও আছে অন্ধকার স্মৃতি। পৃথিবী কি জানে সেই গল্পগুলো? রাতের অশ্রু, দিনের অনুশীলন, টিটকিরি আর অসম্ভবকে সম্ভব করার সব লড়াই?

ছোট্ট শেফালি বর্মা— যাকে ক্রিকেট খেলতে স্কুলে ছেলেদের মতো করে চুল কাটতে বাধ্য হতে হয়েছিল। শুধু যাতে কেউ না বলে, “মেয়েরা আবার ক্রিকেট খেলে নাকি?” যারা হাসত, আজ সেই পৃথিবীই দাঁড়িয়ে আছে তাঁর ব্যাটের আগুনে। একসময় টিটকিরি ছিল অস্ত্র, আজ গর্ব তাঁর সাজ।

হরমনপ্রীত কৌর— পাঞ্জাবের সেই মেয়ে, যাকে বলা হয়েছিল খেলাধুলো মেয়েদের কাজ নয়। সেই সমাজের চোখ ফাঁকি দিয়ে, চুপচাপ নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে, আজ তিনি ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাঠে দাঁড়িয়ে তিনি শুধু খেলেন না— তিনি বলেন, “স্বপ্নের সামনে নিয়ম বদলায়।”

অন্ধ্রের ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা শ্রী চরণী। কাঁধে প্লাস্টিক ব্যাট নিয়ে মায়ের সঙ্গে খেলতে খেলতে একদিন শুনেছিলেন— “আমার মেয়েই ভারতের হয়ে খেলবে।” সেই প্লাস্টিক ব্যাট আজ দেশের গৌরব। স্পিনে প্রতিপক্ষের নিশ্বাস আটকে দেন তিনি। স্বপ্ন তাঁর কাছে শুধু শব্দ নয়— জীবন।

অমনজ্যোত কৌর— কাঠমিস্ত্রির মেয়ে। টাকাপয়সা ছিল না, সুযোগ ছিল না, ছিল শুধু অটল বিশ্বাস আর বাবার মুঠোয় ধরা সাহস। সেই মেয়ে আজ সারা দেশের বুক ভরিয়ে দিয়েছে গর্বে।

shafali verma

‘আমাদের মেয়ে’ রিচা ঘোষ। শিলিগুড়ির মাঠ থেকে বিশ্বমঞ্চ। কতটা সংগ্রাম, কতটা ঘাম, কত স্বপ্নের জল মিশে আছে সেই যাত্রায়। পরীক্ষা ফেলতে হয়েছিল ক্রিকেটের জন্য— কিন্তু আজ তিনি ভারতকে ফাইনালে তুলে এনেছেন নিজের ব্যাটের ঝড়ে। সেই চোখে আজ শুধু আগুন— দেশ জেতানোর আগুন।

জেমাইমা রদ্রিগেজ— একসময় মানসিক যন্ত্রণায় ভেঙে পড়েছিলেন। বাইরের দুনিয়া, বিতর্ক সব ভুলে বাইবেল আর প্রার্থনাকে সঙ্গী করে ফের উঠে দাঁড়িয়েছেন। আবারো তিনি প্রমাণ— আলো জ্বলে যখন, অনেক অন্ধকারকে পেরোতে হয়।

এই মেয়েরা শুধু ক্রিকেট খেলছে না। তারা ইতিহাস লিখছে। সমাজের আগল ভেঙে, শেকড় তছনছ করে দেখাচ্ছে— মেয়ে মানেই ঘর নয়, মেয়ে মানেই আকাশ।

শান্তা রঙ্গস্বামীর কথা মনে আছে? প্রথম ভারতীয় মহিলা অধিনায়ক। কখনও ট্রেনে হুল্লোড়, কখনও ডরমিটরির মেঝে, নিজের ব্যাগ নিজে টানা— খেলা ছিল দুঃসাহস। আর আজ? আজ স্টেডিয়াম ভরে যায় তাদের জন্য। কোটি কণ্ঠে ওঠে “ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া!”

তারা শিখিয়েছে— আলো কেউ দেয় না, আলো ছিনিয়ে আনতে হয়।

আজ যখন ভারতীয় মেয়েরা বিশ্বকাপ ফাইনালে লড়ছে, তখন তারা শুধু ট্রফির লড়াই লড়ছে না— শত বছরের বন্ধন ভাঙার গল্প লিখছে। প্রতিটা ছক্কায় ভেঙে যাচ্ছে সমাজের গোঁড়ামি। প্রতিটা রান হচ্ছে মেয়েদের কান্নার বদলা, আশার জয়, মা-বাবার লড়াইয়ের সম্মান।

তারা আগুন। তারা আলো। তারা ভারত। আর আজ, কোটি হৃদয়ের ধ্বনি—
“তোমরা জিতেছো, ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই।”