হাঁড়িতে ভাত ফুটছিল, তখনই হামলা... মালদার ত্রাণ শিবিরে আতঙ্কে দিন কাটছে বেতবনা গ্রামের বাসিন্দাদের

মালদার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া গ্রামবাসীদের এখনও আতঙ্ক তাড়া করছে।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
murshidabad     1

নিজস্ব সংবাদদাতা: এক কাপড়ে ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে মালদার বৈষ্ণবনগরের ত্রাণ শিবিরে। এখনও আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় তাঁদের—যখনই স্মৃতিতে ফিরে আসে সেই ভয়াল রাতের ছবি।

মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানার বেতবনা গ্রামের বহু মানুষ দুর্বৃত্তদের হামলার মুখে পড়ে রাতারাতি ছেড়ে দিয়েছেন নিজেদের ঘরবাড়ি। পাড়ার যাঁদের ‘দাদা’, ‘কাকা’, ‘জ্যাঠা’ বলে ডাকতেন, সেই পরিচিত মুখগুলিই একরাতে হয়ে উঠেছিল আততায়ীরূপী! অস্ত্র হাতে হামলা চালায় ঘরে ঘরে, তাণ্ডব চালানো হয়—ভাঙচুর, লুঠপাটের পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ঘরবাড়ি।

বেতবনা গ্রামের বাসিন্দা কালীচরণ প্রামাণিক ও তৃপ্তি প্রামাণিক সহ বহু পরিবার প্রাণ বাঁচাতে নদী পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মালদার পারলালপুর হাইস্কুলের ত্রাণশিবিরে। এক একটি পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৯ থেকে ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বিড়ি শিল্পে যুক্ত শ্রমিক।

তৃপ্তিদেবীর কণ্ঠ এখনো কাঁপছে সেই রাতের স্মৃতি মনে করে। রান্নাঘরে তখন ভাত ফুটছে, সেই সময়েই আক্রমণ। ঘর ছেড়ে পালাতে হয় প্রাণের দায়ে। বিড়ির দোকানে সঞ্চিত সামান্য জমানো টাকা, মেয়ের বিয়ের জন্য সযত্নে তুলে রাখা গয়না—সবই লুঠ হয়ে গেছে।

murshidabad     b

একটি পরিবারের তিন মেয়ে, ৯ জন সদস্য—সব হারিয়ে এখন দিন কাটছে ত্রাণশিবিরে। তৃপ্তিদেবী জানালেন, “মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো দেড় লক্ষ টাকার গয়না-টাকাপয়সা সব নিয়ে গেল। ভাবতেই পারছি না, এত আপন মানুষগুলো কীভাবে এমন শত্রু হয়ে উঠল একরাতে।”

স্থানীয়দের অভিযোগ, ওয়াকফ জমি সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে অশান্তির সৃষ্টি হয়। সেই ঘটনাকেই কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা বেতবনা অঞ্চল। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে, প্রাণ বাঁচাতে একাধিক পরিবারকে রাতারাতি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।

আজ তাঁরা নিজভূমে পরবাসী। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধ-প্রৌঢ়রা গাদাগাদি করে রয়েছেন স্কুলের শ্রেণিকক্ষে গড়ে ওঠা অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে। নেই নিরাপত্তা, নেই নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের দিশা। একটাই আর্তি—“আমাদের নিরাপদে ফেরার পথটা যেন খুলে দেওয়া হয়।”

এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছেন বহু নাগরিক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।