সোনারপুরে ফের তৃণমূল বিতর্ক! গণপিটুনিতে মৃত যুবক, গ্রেফতার পঞ্চায়েত সদস্য

সোনারপুরে সাইকেল নিয়ে বচসার জেরে গণপিটুনিতে প্রাণ গেল যুবকের।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
SONARPUR A

নিজস্ব সংবাদদাতা: সোনারপুরে সাইকেল নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে ভয়াবহ পরিণতি ঘটল। স্থানীয়দের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে রঞ্জিত মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির। বয়স মাত্র ৩৫ বছর। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থানার শীতলা এলাকায়, সোনারপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত অঞ্চলে। এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের এক পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনায় তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সন্তোষ জানা-র দোকানে আসেন রঞ্জিত মণ্ডল। তিনি জানান, একজন অসুস্থ, তাই ওষুধ আনতে হবে, আর এজন্য সন্তোষবাবুর সাইকেলটি কিছু সময়ের জন্য নিতে চান। মানবিক কারণে তিনি রঞ্জিতকে সাইকেলটি দিয়ে দেন। কিন্তু প্রায় দুই ঘণ্টা পর রঞ্জিত ফিরে এলেও, সাইকেলটি ফেরত দেননি।

dead

সন্তোষ জানা বলেন, “আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, সাইকেল কোথায়? তখন রঞ্জিত বলে, কোন সাইকেল? আমি তো কিছু নেইনি।” এই উত্তর শুনে দু’জনের মধ্যে তর্ক শুরু হয়। সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য নারায়ণ রায়। সন্তোষ জানা অভিযোগ করেন, রঞ্জিত তখন অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে শুরু করে। পরে কেউ একজন রঞ্জিতকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।

এরপরই শুরু হয় চাঞ্চল্যকর অধ্যায়। অভিযোগ, রাতেই রঞ্জিতকে বেধড়ক মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে সুভাষগ্রাম গ্রামীণ হাসপাতাল এবং পরে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি—সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এই ঘটনায় পঞ্চায়েত সদস্যসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যে তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তবে বাকিরা এখনও পলাতক। তাঁদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার পর থেকেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ছত্রছায়াতেই এমন দুঃসাহস। সিপিএম নেতা ও আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সোনারপুরের তৃণমূল বিধায়কের আশ্রয় ছাড়া এমন ঘটনা ঘটতেই পারে না। গণপিটুনিতে শুধু একজন পঞ্চায়েত সদস্য নয়, আরও অনেকে জড়িত। পুলিশকে এবার সত্যিই সক্রিয় হতে হবে।”

অন্যদিকে তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছে, কেউ অপরাধ করলে তাকে রেয়াত করা হবে না। সোনারপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রবীন সর্দার বলেন, “আমরা শুনেছি, একটি মারপিটের ঘটনা ঘটেছে, এরপর একজন মারা গেছেন। আমাদের এক পঞ্চায়েত সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আইন তার নিজস্ব পথে চলবে, প্রশাসন বিষয়টি দেখছে।”

পুলিশ যখন পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়, তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি মুখ খোলেননি। তবে এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। এলাকায় তৃণমূলের ভাবমূর্তি নিয়ে এখন তীব্র সমালোচনা চলছে।