২২৬ বছরের ঐতিহ্য! ইতিহাসের সাক্ষী জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো আজও জাঁকজমকপূর্ণ

ইতিহাসের সাক্ষী জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে ২২৬ বছরের ঐতিহ্য।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
COVER (7)


নিজস্ব সংবাদদাতা: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের জাড়া গ্রামের জমিদার বাড়ি আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই রায়বাবুদের জমিদার বাড়ি শুধু একটি প্রাসাদ নয়, এটি একসময় ছিল বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল।

এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু কিংবদন্তি। রাজা রামমোহন রায় নিজে এসেছিলেন এখানে, কারণ তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন জমিদার রাজীবলোচন রায়। বিদ্যাসাগরের সঙ্গেও ছিল জমিদার পরিবারের গভীর সম্পর্ক। বিদ্যাসাগরের অনুপ্রেরণায় জাড়া স্কুলের সূচনা হয় জমিদার বাড়িরই উদ্যোগে। শুধু তাই নয়, বাংলা সিনেমার মহানায়ক উত্তমকুমারও এসেছিলেন এই জমিদারবাড়িতে। তাঁর বিখ্যাত ছবি অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি-র একটি গান শুট হয়েছিল এখানেই— “কি করে বললি জগা, জাড়ার গোলক বৃন্দাবন...”
যা আজও গর্বের সঙ্গে মনে করিয়ে দেয় এই প্রাসাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। শোনা যায়, ভোলা ময়রা নিজেই এখানে কবিগান গেয়েছিলেন।

১৭৪৮ সালে (বঙ্গাব্দ ১১৫৫) রামগোপাল রায় এই জমিদারবাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর ছেলে রাজীবলোচন রায় বর্ধমান রাজা থেকে ‘রাজা’ উপাধি পান। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয় এই বাড়ির দুর্গাপুজো, যা এখনও টিকে আছে। তখনকার দিনে পুজোয় আমন্ত্রিত হতেন রাজা-রাজড়ারা, মনীষীরা। চলত কবিগান, যাত্রাপালা, নরনারায়ণ সেবা। গ্রামবাসী দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমাতেন। রুপোর পালকিতে নবপত্রিকার শোভাযাত্রা হত, যা ছিল দর্শনীয়।

durga

আজ জমিদারি না থাকলেও, সেই প্রাসাদ এখনও দাঁড়িয়ে আছে—যদিও ভগ্নপ্রায়, আগাছায় ঢাকা। বর্তমানে প্রায় ২১টি পরিবার এখানে থাকেন, তবে অনেকে কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। দুর্গাপুজোর সময় তাঁরা আবার ফিরে আসেন, মিলিত হন ইতিহাস ও আবেগের টানে। এবছর জাড়া জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো ২২৬তম বছরে পা দেবে।

পুজোয় আগের মতো জাঁকজমক নেই, কিন্তু আজও রীতি মেনেই হয় পূজা। বৈষ্ণব মতে এই পুজো হয় বলে বলি দেওয়া হয় না। নবপত্রিকা স্নান, শোভাযাত্রা, বিসর্জনের দিন পরিবারের সদস্যদের গান গেয়ে বিদায় জানানো—সবই সেই পুরনো নিয়মে হয়। ভোগ, নাড়ু তৈরি, রান্নাবান্নার দায়িত্ব আজও পরিবারের মহিলারাই সামলান। গ্রাম-শহরের বহু মানুষ আসেন, সবার জন্য থাকে খিচুড়ি প্রসাদ ও নরনারায়ণ সেবার আয়োজন।

প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। প্রতিমা বাইরে থেকে আনা হয় না, জমিদার বাড়ির দালানেই বংশপরম্পরায় একই কুমোর পরিবার তৈরি করে আসছে মা দুর্গা ও অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি। তাই প্রতিবারের মতো এ বছরও পুজোর দিনগুলিতে আবারও জীবন্ত হয়ে উঠবে জাড়া জমিদার বাড়ি।