“তারা আমাদের গ্রাম উড়িয়ে দিচ্ছে”— সীমান্তবাসীর আর্তনাদে কেঁপে উঠছে আফগান-ভূমি

পাকিস্তানের হামলায় আফগানিস্তানের ২০০ জন তালিবান সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
taliban army

নিজস্ব সংবাদদাতা: দক্ষিণ এশিয়ার সীমান্তরাজনীতিতে ফের আগুন! পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে (দুরন্দ লাইন) গত কয়েক দিন ধরেই চলছে তীব্র গুলির লড়াই। খবর পাওয়া গেছে, শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত হওয়া সংঘর্ষে পাকিস্তানের অন্তত ২৩ জন সেনা এবং ২০০-রও বেশি তালিবান যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি, ওই সংঘর্ষে পাকিস্তানের ৫৮ জন সেনা নিহত হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও তীব্র আকার নিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী তথা তালিবান নেতা আমির খান মুতাক্কির ভারতের সফরের মধ্যেই হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সীমান্ত। সীমান্তের দুই প্রান্ত থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, তালিবান সেনারা সীমান্ত পেরিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে, আর আফগানিস্তান দাবি করছে, পাকিস্তানি বাহিনী নিরীহ আফগান গ্রামগুলিতে গোলাবর্ষণ করছে।

pakistan taliban

সূত্রগুলির মতে, এই সংঘর্ষের জেরে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার আফগান নাগরিককে জোর করে পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিপুলসংখ্যক পরিবার নিজেদের দেশছাড়া হয়ে সীমান্ত ঘেঁষে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন নতুন চেকপোস্ট ও সেনা টহল বসানোর ফলে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও অপমানের মুখে পড়তে হচ্ছে। সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতে ফুঁসে উঠছে ক্ষোভ, আর তাতে উস্কে উঠেছে পুশতুন জাতিসত্তার রাজনীতি।

তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী প্রদেশ নানগারহার, কুনার, ওয়াজিরিস্তান, পাকতিয়া ও খোস্ত অঞ্চলে এখন আফগান বাহিনীই কৌশলগত দিক থেকে এগিয়ে আছে। তবে সামরিক শক্তির বিচারে পাকিস্তান আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে অনেক এগিয়ে। পাকিস্তান সেনার কাছে উন্নত অস্ত্র, প্রশিক্ষিত বাহিনী এবং বিমান সমর্থন রয়েছে, যেখানে আফগান যোদ্ধারা এখনও সোভিয়েত আমলের একে-৪৭, মর্টার আর মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় ফেলে যাওয়া কয়েকটি হালকা অস্ত্রে নির্ভর করছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, আফগান সেনার গোলাবারুদের ঘাটতি আর বড় কোনও আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী না থাকা।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হয়, পাকিস্তান তার আধুনিক সামরিক শক্তির জোরে প্রাধান্য ফিরে পেতে পারে। তবে বর্তমানে, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও পাহাড়ি এলাকায় অবস্থানের কারণে আফগান সেনার কৌশলগত আধিপত্য রয়েছে। তালিবান-ঘনিষ্ঠ সংগঠন টেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) এবার এই সংঘাতে মূল মিত্র হিসেবে উঠে আসছে। তাদের ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ প্রশিক্ষিত গেরিলা যোদ্ধা আছে, যারা পাকিস্তান সেনার তুলনায় পাহাড়ি গেরিলা যুদ্ধে অনেক দক্ষ।

এই সংঘর্ষ কেবল সীমান্ত রাজনীতির নয়, দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির ভবিষ্যতও নির্ধারণ করতে পারে। ভারত, চীন ও ইরান ইতিমধ্যেই ঘটনাপ্রবাহের উপর নজর রাখছে।