মাত্র ৩১% ভোট—বেইজিংয়ের ‘নতুন গণতন্ত্রে’ কি বিশ্বাস হারাচ্ছে মানুষ?

হংকং আইনসভা নির্বাচনে ৩১.৯% ভোট; নতুন ‘দেশপ্রেমিক’ নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিরোধীহীন ভোটে জনরোষ বাড়ছে। অগ্নিকাণ্ডে ১৫৯ মৃত্যুর পর সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা তুঙ্গে।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
hongkong aa

নিজস্ব সংবাদদতা:হংকংয়ে নতুন ৯০ সদস্যের আইনসভা নির্বাচনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সরকারি দৃষ্টিকোণ থেকে এটি স্বস্তির, কারণ এর ফলে খুব কম টার্নআউটের লজ্জা এড়ানো গেল। তবে এতেও স্পষ্ট সমর্থন মেলেনি নতুন নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি, যা বদলে ফেলেছে পুরো রাজনৈতিক পরিবেশ এবং কার্যত সরিয়ে দিয়েছে দীর্ঘদিনের বিরোধী শিবিরকে।

ভোটের হার ছিল ৩১.৯ শতাংশ, যা ২০২১ সালের তুলনায় সামান্য বেশি হলেও আগের সিস্টেমে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ত। চীনা সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রমাণের কঠোর যাচাই ব্যবস্থার পর থেকেই বহু মানুষ, বিশেষ করে গণতন্ত্রপন্থীরা, রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন। সরকার দাবি করেছে, ২০১৯ সালের গণবিক্ষোভের পর স্থিতিশীলতার জন্যই এই পরিবর্তন জরুরি ছিল।

ভোটার বাড়াতে প্রশাসন ব্যাপক প্রচার চালায়—ভোটকেন্দ্র বাড়ানো, সময় বাড়ানো, প্রচুর পোস্টার, বুথে পৌঁছাতে সহায়তা—সবই করা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের ঠিক আগেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৫৯ জনের মৃত্যু ঘটে। সরকারের ত্রুটিপূর্ণ দায়িত্ববোধ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধে, যা ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। তবুও শেষ পর্যন্ত কিছুটা ভোট পড়ায় সরকার স্বস্তি পায়।

hongkong fire

বৃদ্ধ ভোটার কওন ল্যাম বলেন, তিনি দায়িত্ববোধ থেকে ভোট দিয়েছেন, তবে প্রার্থীদের নিয়ে তাঁর স্পষ্ট ধারণা নেই। তিনি বেছে নিয়েছেন সেই প্রার্থীকে যিনি বয়স্কদের জন্য কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

চীনা কর্তৃপক্ষ ভোটের আগে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সতর্ক করে জানায়, তাদের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। আগুন লাগার পর ‘ভোট বয়কট’ উসকে দেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে উঠে এসেছে বছরের পর বছর ধরে ভবন সংস্কারে দুর্নীতি, বিড-রিগিংয়ের অভিযোগ। এরই মধ্যে কিছু প্রার্থী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই চক্র ভাঙার। শহরের প্রধান নির্বাহী জন লি বলেন, নির্বাচন দেরি না করে করা উচিত, কারণ নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা জনগণের দুঃখ বুঝে সরকারের সঙ্গে কাজ করবেন।

নতুন ব্যবস্থায় ৯০ আসনের মধ্যে সাধারণ ভোটে পাওয়া যায় মাত্র ২০টি। ৪০টি নির্বাচিত হয় প্রো-বেইজিং নির্বাচন কমিটির মাধ্যমে, বাকি ৩০টি বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও শিল্প গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের জন্য। নতুন ‘দেশপ্রেমিক বাধ্যতামূলক শর্ত’ কার্যত সব বিরোধী দলকে বাইরে ঠেলে দিয়েছে।

কিছু বিশ্লেষকের মতে, প্রার্থী বাছাইয়ে বেইজিং আরও সরাসরি প্রভাব খাটাচ্ছে, এমনকি নিজস্ব শিবিরের উপরেও কড়াকড়ি বাড়ছে। আর টার্নআউট কম হলে তা সরকারের প্রতি আস্থার ঘাটতিই দেখাত।

বিদেশি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে সরকারের দুর্যোগ-ব্যবস্থাপনা নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগ এনে সতর্কতা জারি করেছে বেইজিংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা। অগ্নিকাণ্ডকে রাজনৈতিক করে তুললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই এক ব্যক্তিকে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।