তোমার মতো মুখ হলে আমি ঘর থেকে বের হতাম না! তীব্র উপহাসের পর এখন ব্রিটেনের অনুপ্রেরণা এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত

জটিল রোগে মুখের বিকৃতি হয়। সারা জীবন উপহাস পাওয়ার পর এখন ব্রিটেনের শিশুদের অনুপ্রেরণা অমিত ঘোষ।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
indian origin amit sgosh


নিজস্ব সংবাদদাতা: ৩৫ বছর বয়সি অমিত ঘোষ জন্মেছেন ‘নিউরোফাইব্রোমেটোসিস টাইপ ১’ নামে একটি জটিল রোগ নিয়ে। এই রোগে শরীরে নার্ভ বরাবর টিউমার গজায়, যদিও তা ক্যানসারজাতীয় নয়। কিন্তু রোগের কারণে তাঁর মুখে এমন পরিবর্তন এসেছে, যা তাঁকে সারাজীবন সমাজের কটাক্ষ ও হেনস্তার শিকার করেছে। মাত্র ১১ বছর বয়সে অস্ত্রোপচারে হারান বাম চোখ, যার ফলে মুখে আরও বিকৃতি ঘটে।

অমিত বলেন, একবার হ্যালোইন উৎসবের আগে স্কুলে এক শিশু তাঁকে বলেছিল, "তোমার হ্যালোইনের মুখোশের দরকার নেই, তুমি তো সারাজীবনের জন্য মুখোশ পরে আছো।" এই কথা তাঁকে খুব কষ্ট দিয়েছিল। বহু বছর নিজের মুখ আড়াল করে বাঁচতেন তিনি। বলেন, “আমি মুখটা দেখাতেই চাইতাম না। আমি কখনই স্বস্তি পাইনি নিজের মুখ নিয়ে।”

কয়েক বছর আগেই লন্ডনের এক ক্যাফেতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন। সার্ভিস চালু থাকা অবস্থাতেই তাঁকে জানানো হয়, "আর সার্ভ করছি না," এবং তাঁকে উপেক্ষা করে চলে যান কর্মীটি। আবার একদিন পার্কে হাঁটতে গেলে অপরিচিতরা তাঁকে দেখে হাসাহাসি করে বলে, "আমার যদি তোমার মতো মুখ হতো, আমি তো ঘর থেকেও বের হতাম না।"

োসগূ

এই নির্মম অভিজ্ঞতাগুলিই তাঁকে শিশুদের জন্য বইয়ে তুলে ধরতে অনুপ্রাণিত করেছে। লিখেছেন ‘বর্ন  ডিফারেন্ট’ নামের একটি বই, যাতে শিশুরা ছোটবেলা থেকেই নিজেদের ভিন্নতাকে গ্রহণ করতে শেখে। অমিত বলেন, “আমার ছোটবেলায় যদি এমন একটা বই থাকত, তাহলে আমার জীবনটা অনেক সহজ হতো।”

ক্রিকেট তাঁকে জীবনের প্রথম আত্মবিশ্বাস দেয়। মানুষ তাঁকে ‘অমিত, যার মুখটা অদ্ভুত’ বলে চেনার বদলে চিনতে শুরু করে ‘ক্রিকেট খেলে যে ছেলেটা’ বলে। স্ত্রী পিয়ালির উৎসাহে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে শুরু করেন টিকটকে। এখন তাঁর প্রায় ২ লাখ অনুসারী। তিনি বলেন, “আজ আমি দুনিয়াকে বলি, এটাই আমি — পছন্দ করো বা দূরে থাকো।” 

২০২৩ সালে তিনি নিজের কর্পোরেট আইনজীবীর চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি মোটিভেশনাল স্পিকারের জীবন বেছে নেন। এখন তিনি একটি পডকাস্ট শুরু করতে চলেছেন, যেখানে এমন আরও ভিন্ন জীবনযাত্রার মানুষদের কণ্ঠ তুলে ধরবেন।