নিজস্ব সংবাদদাতা: মেঘালয়ের শিলং থেকে নিখোঁজ হয়ে রহস্যময়ভাবে মৃত উদ্ধার হলেন ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশী। ২৬ বছর বয়সী রাজা এবং তাঁর স্ত্রী সোনমের রহস্যময় নিখোঁজ হওয়া শেষ হল এক গভীর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দিয়ে। তাঁদের হানিমুন ভ্রমণ শুধুমাত্র প্রেমের গল্প নয়, বরং ছিল বিশ্বাসঘাতকতা, চুক্তিভিত্তিক খুন এবং বহু রাজ্যের পুলিশের যৌথ অভিযান।
রাজা ও সোনমের বিয়ে হয়েছিল ১১ মে ইন্দোরে। তারা প্রথমে কাশ্মীর হানিমুনের জন্য ঠিক করলেও পরে গন্তব্য পরিবর্তন করে মেঘালয় ঠিক করেন। ২০ মে গুয়াহাটিতে পৌঁছান, তারপর কামাখ্যা মন্দির দর্শনের পর ২২ মে শিলং রওনা দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খুনের পেছনে ছিল সোনম ও তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়ারার চতুর পরিকল্পনা। রাজ মেঘালয়ে না গিয়েও ফোনে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন। পুলিশ অভিযোগ করেছে, রাজ তিনজন কন্ট্রাক্ট কিলার – আকাশ, বিষ্ণু ও আনন্দকে ভাড়া করেছিলেন। এই তিন জনই সোনম ও রাজার সঙ্গে ভ্রমণে ছিলেন।
২২ মে রাজা ও সোনম ভাড়া করা স্কুটিতে শহরের চারপাশ ঘুরতে বের হন। ২৩ মে সকালে সোনম তার শাশুড়িকে ফোন করে তাঁদের ঘোরার পরিকল্পনা জানিয়ে বলেন যে তিনি উপবাস পালন করছেন। এর পর থেকে তাদের ফোন দুটোই বন্ধ পাওয়া যায়। একই দিনে সোহরার এক গ্রামের প্রধান একটি স্কুটি দেখতে পান, যেখানে চাবি লাগানো ছিল, যা সন্দেহের সৃষ্টি করে।
/anm-bengali/media/media_files/2025/06/09/ZGTu7rEph7osayWthID1.JPG)
পরিবারের সদস্যদের ফোনে যোগাযোগ না হওয়ায় রাজার ভাই বিপিন ২৪ মে শিলং পৌঁছে নিখোঁজের অভিযোগ করেন। এরপর এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ সহ পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল পূর্ব খাসি পাহাড়ের জঙ্গলে তল্লাশি শুরু করে। ২৭ মে রাজা ও সোনমের স্কুটি একটি ক্যাফে কাছে পাওয়া যায়। কাছেই একটি খাদ থেকে দুই ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
বৃষ্টির মধ্যে চলা তল্লাশিতে ২ জুন রাজার দেহ উদ্ধার করা হয়, যা ওয়াইসাওডং জলপ্রপাতের কাছে ছিল। মৃতদেহ শনাক্ত হয় তাঁর ডান হাতের উপর ‘রাজা’ ট্যাটু এবং স্মার্টওয়াচ দেখে। মৃতদেহের কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি সাদা শার্ট, ওষুধের একটি স্ট্রিপ, ভাঙা মোবাইল স্ক্রিন এবং একটি ধারালো নতুন অস্ত্র।
ময়নাতদন্তে জানা যায়, রাজার দেহে বেশ কয়েকটি ধারালো আঘাতের চিহ্ন ছিল, যার মধ্যে মাথার সামনে ও পেছনে গুরুতর দুটি আঘাত ছিল। পুলিশ জানায় যে, খুনের অস্ত্রটি গাছ কাটার জন্য ব্যবহৃত একটি দার ছিল।
পুলিশ আরও তদন্ত চালিয়ে সোনমের ফোন রেকর্ড দেখে রাজ কুশওয়ারার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের তথ্য পায়। সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে তারা লালিতপুরে আকাশ রাজপুতকে আটক করে। এরপর বিষ্ণু ও রাজ কুশওয়ারাকে ইন্দোর থেকে এবং আনন্দকে সাগর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
৯ জুন উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর থেকে সোনম আত্মসমর্পণ করেন, যেখানে তিনি তার ভাইয়ের সাহায্যে একটি ধাবায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
তদন্তে জানা গেছে, খুনের পর সোনম ও তিন কিলার একসঙ্গে গুয়াহাটিতে এক দিন থাকেম এবং পরে আলাদা হয়ে যান যাতে ধরা না পড়ে। পুলিশ দাবি করে, সোনম রাজাকে এক নির্জন রাস্তা নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে খুনিরা অপেক্ষা করছিল। তারা মিলে রাজাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
এক স্থানীয় গাইড জানায়, রাজা ও সোনমের সঙ্গে আরও তিন জন লোক ছিল, যারা হিন্দি ভাষায় কথা বলছিলেন, যা পুলিশ অভিযানের তত্ত্বকে সমর্থন করে।
মেঘালয় পুলিশ বলেছে, পাঁচ অভিযুক্ত—সোনম, রাজ কুশওয়ারা, আকাশ, বিষ্ণু ও আনন্দকে শিলং এ নিয়ে আসা হবে এবং আদালতে তাদের হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
অন্যদিকে, সোনমের পিতা এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মেঘালয় পুলিশ মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসাচ্ছে। তিনি সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং বলেন, সোনম তাঁকে জানিয়েছিলেন যে মেঘালয়ে অপহরণ ও লুটপাট করা হয়েছে এবং তিনি কিভাবে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছেছেন তার কোনো স্মৃতি নেই।