হোয়াটসঅ্যাপে কাঁদছিল মেয়েটি, কেউ শুনল না—চতুর্থ তলা থেকে ঝাঁপ দিল ৯ বছরের ছাত্রী

জয়পুরের ৯ বছরের ছাত্রী আত্মহত্যায় স্তব্ধ দেশ। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে বুলিং ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকরা। মৃত্যুর আগে বারবার স্কুল না যেতে কেঁদে অনুরোধ করেছিল ছোট্ট মেয়েটি। স্কুল কর্তৃপক্ষের নীরবতায় উঠছে ক্ষোভের ঝড়।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
crime aaa

নিজস্ব সংবাদদাতা:  জয়পুরের এক নামী স্কুলে চাঞ্চল্যকর মৃত্যু নয় বছরের এক ছাত্রীর। বৃহস্পতিবার স্কুলের চতুর্থ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। কিন্তু ঘটনার পরেই বেরিয়ে আসছে একের পর এক ভয়াবহ তথ্য।

অভিভাবকদের দাবি, ওই শিশুটি গত এক বছর ধরে স্কুলে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছিল। বারবার শিক্ষক ও সমন্বয়কদের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মেয়েটির মায়ের মোবাইলে পাওয়া এক বছর আগের হোয়াটসঅ্যাপ অডিও রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, মেয়েটি কাঁদছে এবং বলছে, “আমি স্কুলে যেতে চাই না… আমাকে ওখানে পাঠিও না।”

অভিভাবকদের কথায়, সেই অডিও রেকর্ডিং পাঠানো হয়েছিল ক্লাস টিচারকেও। কিন্তু ফলস্বরূপ কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মেয়েটির মা জানিয়েছেন, “আমি বারবার শিক্ষক ও কোঅর্ডিনেটরদের জানিয়েছি, কিন্তু তাঁরা বিষয়টি হালকাভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন।”

Crime

অভিযোগ, স্কুলে মেয়েটিকে বারবার ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হত, এমনকি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করা হত। তবুও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন, “শিক্ষক বলেছিলেন—এটা কো-এড স্কুল, ওকে ছেলেদের সঙ্গেও কথা বলতে শেখাতে হবে। আমি বলেছিলাম, কথা বলা আমার মেয়ের ইচ্ছার বিষয়, বাধ্য করতে পারেন না।”

একটি প্যারেন্ট-টিচার মিটিংয়ের সময় একবার মেয়েটিকে এক সহপাঠীর সঙ্গে ঠাট্টা করা হয়েছিল বলে জানান বাবা। তিনি বলেন, “সেদিন মেয়েটি আমার পিছনে লুকিয়েছিল লজ্জা ও ভয়ে।” কিন্তু অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার কিছুক্ষণ আগে স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মেয়েটি দু’বার তার শিক্ষককে কাছে গিয়েছিল। তবে ক্যামেরায় অডিও না থাকায় কী কথা হয়েছিল, তা জানা যায়নি।

ছাত্রীর কাকা সাহিল ক্ষোভে বলেন, “৫,০০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে ছয় তলা স্কুল ভবন, অথচ কোনও সুরক্ষা জাল নেই! অনুমতি পেল কীভাবে? কেন সিসিটিভিতে শব্দ নেই? ১৫ দিনের ফুটেজও রাখা হয়নি! এরা মোটা ফি নেয়, কিন্তু দায়িত্ব কোথায়?”

জয়পুরের পুলিশ কমিশনার রাজর্ষি রাজ বর্মা জানান, “সব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিভাবকদের বক্তব্যও রেকর্ড করা হবে।”

জেলা শিক্ষা আধিকারিক রামনিবাস শর্মা জানিয়েছেন, কিছু ছাত্রছাত্রী বলেছে যে, মেয়েটি সেদিন স্কুলে যেতে চাইছিল না। কয়েকজন আবার অভিযোগ করেছে, ওই মেয়েটি ক্লাসে “অশালীন ভাষা” ব্যবহার করত—যদিও এই অভিযোগ নিয়েও চলছে বিতর্ক।

অন্যদিকে, এখনো পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।

দেশজুড়ে এই মৃত্যুর ঘটনায় স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার দায়, শিশু নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রশ্নে নতুন করে ক্ষোভ উথলে উঠেছে।