পুজোর ছুটিতে ভিড় নয়, নির্জনতায় হারিয়ে যেতে চান? পেডং আপনার জন্য অপেক্ষায়!

কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে লুকিয়ে থাকা রূপকথার গ্রামে ঘুরে আসতে পারেন পুজোর ছুটিতে।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
3


নিজস্ব সংবাদদাতা: পুজোর ছুটিতে যদি ভিড় এড়িয়ে শান্ত, নির্জন অথচ মন ভরানো কোনো পাহাড়ি জায়গায় যেতে চান, তাহলে পেডং হতে পারে সেরা গন্তব্য। কাঞ্চনজঙ্ঘার গাঢ় নীল আকাশছোঁয়া সৌন্দর্য, পাহাড়ি গ্রাম আর ইতিহাস মিশে এখানে তৈরি করেছে এক অদ্ভুত আবহ।

পেডংয়ের প্রধান আকর্ষণ সাঙ্গচেন দর্জি মঠ, যাকে পেডং মঠও বলা হয়। ১৮৭৩ সালে ভুটানের রাজার উদ্যোগে নির্মিত এই বৌদ্ধ মঠ ভুটানি সংস্কৃতি আর টানট্রিক বৌদ্ধধর্মের অনন্য নিদর্শন। এর ভেতরের রঙিন ফ্রেস্কো আপনাকে নিয়ে যাবে কয়েক শতক আগের ইতিহাসে।

5

এখানেই আছে রিকিসুম, একসময় ব্রিটিশদের বিশ্রামাগার। আজ তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও এখানকার ভ্যানটেজ পয়েন্ট থেকে ভোরের সূর্যোদয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবে। পেডং থেকে দশ কিলোমিটার দূরে সিলারি গাঁও পাহাড়ের কোলে এক শান্ত গ্রাম, ৬০০০ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে থাকা এই জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা মানেই স্বর্গীয় অনুভূতি। সবুজ বনভূমি আর অসংখ্য হিমালয়ি পাখির কলতানে সকাল যেন হয়ে ওঠে সুরের উৎসব।

সিলারি গাঁওয়ের কাছেই রামিতি ভিউপয়েন্ট, ৬৪০০ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে এখান থেকে একসাথে দেখা যায় বিশাল কাঞ্চনজঙ্ঘা আর তিস্তা নদীর প্রলম্বিত পথ। বিশেষ করে নদীর চৌদ্দটি বাঁক একসাথে চোখে ধরা পড়া সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

পেডংয়ের আরেক ঐতিহাসিক নিদর্শন দামসাং দুর্গ, সপ্তদশ শতকে লেপচারা ভুটানিদের আক্রমণ ঠেকাতে এটি তৈরি করেছিল। যদিও পরে ব্রিটিশরা তা ধ্বংস করে, তবুও ধ্বংসাবশেষ আজও মনে করিয়ে দেয় সেই অতীত লড়াইয়ের কাহিনি।

আধঘণ্টার হাঁটা দূরে রয়েছে ক্রস হিল। ১৮৮২ সালে ফরাসি মিশনারি ফাদার দেশগোডিন এখানে একটি ক্রস স্থাপন করেছিলেন। পাহাড়ের ঢাল থেকে এখানকার দৃশ্য এতই পরিষ্কার যে তিব্বত আর চীনের সীমান্ত পর্যন্ত চোখে পড়ে।

পেডংয়ের কাছাকাছি তিনচুলে ভিউপয়েন্টও বেশ বিখ্যাত। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও নাথু লা, জেলেপ লা পাস আর সিকিমের পাহাড়গুলো একসাথে দেখা যায়। নিচের কাশ্যম গ্রামের ধানক্ষেত আর সবুজ বন যেন পাহাড়ের ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো।

সব মিলিয়ে পেডং এমন এক পাহাড়ি গন্তব্য, যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি আর সংস্কৃতি মিলে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। পুজোর ছুটিতে নাগরিক কোলাহল থেকে মুক্তি চাইলে, কাঞ্চনজঙ্ঘার মহিমা আর পাহাড়ি নির্জনতার টানে পেডংয়ের তুলনা সত্যিই হয় না।