অতি বৃষ্টি, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই, বিপাকে এক হতদরিদ্র পরিবার

বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর শাসকদলের নেতাকর্মী থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজন দেখে গিয়েছে কিন্তু কোনো সাহায্য মেলেনি বলে দাবি পরিবারের।

author-image
SWETA MITRA
New Update
COVER rain.jpg

 

নিজস্ব প্রতিনিধি, চন্দ্রকোনাঃ আবাস যোজনা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও মেলেনি বাড়ি। অতি বৃষ্টিতে একচিলতে মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়ে বিপাকে দিনমজুর পরিবার। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক নাবালক ছেলেকে নিয়ে ঝুলতে থাকা ভাঙা বাড়িতেই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস চন্দ্রকোনার (Chandrakona) চাষীবাড় গ্রামের আদর আলি গায়েন ও আনোয়ারা বিবির। ভরা বর্ষার মরসুমে একনাগাড়ে বৃষ্টিতে একের পর এক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে বাঁকুড়ায় তিন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা হোক বা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনায় মাটির বাড়ি ভেঙে দুজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আর এসব ঘটনা নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য টানাপোড়েন শুরু হয়েছে আবাস যোজনা প্রকল্পকে ঘিরে। এবার অতিবৃষ্টিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে বিপাকে এক হতদরিদ্র দিনমজুর পরিবার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চাষীবাড় গ্রামের বাসিন্দা আদর আলি গায়েন,পেশায় দিনমজুর সাথে প্লাস্টিক লোহালক্কড় কুড়িয়ে দিন যাপন করেন। পরিবার বলতে স্ত্রী আনোয়ারা বিবি ও নাবালক তিন মেয়ে ও এক ছেলে। আদর আলি গায়েন ও আনোয়ারা বিবির ১০ বছর বয়সী এক নাবালক ছেলে আবার জন্ম থেকেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন,হাঁটাচলা করতে পারে না সে।  বলা চলে বিছানা সজ্জা। পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে দু কামরার একচিলতে মাটির বাড়ি।

গত সোমবার রাতে অতিবৃষ্টির জেরে বাড়ির একাংশ ভেঙে গিয়ে ঝুলছে। একটি কামরা ভেঙে গিয়েছে, অবশিষ্টাংশ কামরা কোনো রকমে টিকে রয়েছে তাকে বাঁচানোর জন্য বাড়ির চারিদিকে বাঁশ দিয়ে আগলে রাখা হয়েছে।টিকে থাকা কামরার ভিতরেও ফাটল ধরেছে,বৃষ্টি থামার লক্ষ্মণ নেই সেটিও যেকোনো মুহুর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। স্বামী স্ত্রী ছেলে মেয়েদের নিয়ে টিকে থাকা একটি রুমে রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন । বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর শাসকদলের নেতাকর্মী থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েতের লোকজন দেখে গিয়েছে কিন্তু কোনো সাহায্য মেলেনি বলে দাবি পরিবারের। আদর আলি গায়েন ও আনোয়ারা বিবি জানাচ্ছেন, ‘জরাজীর্ণ এই মাটির বাড়িটি মাথার গোঁজার সম্বল ছিল সেটিও বৃষ্টিতে ভেঙে গিয়েছে।বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক নাবালক ছেলে সহ তিন মেয়েকে নিয়ে স্বামী স্ত্রী ভাঙাচোরা একটি রুমে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেকে নিয়ে অন্যত্র কোথাও গিয়ে থাকা দুষ্কর।‘ 

পরিবারের দাবি, আবাস যোজনা তালিকায় নাম ছিল তাদের কিন্তু বাড়ি মিলেনি।সরকার যদি তাদের বাড়ি দিত তাহলে আজ এভাবে দিন কাটাতে হতো না। সরকার তাদের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করে দিক দাবি পরিবারের। প্রতিবেশীরাও চাইছেন এই পরিবারটির দিকে নজর দিক প্রশাসন,হতদরিদ্র পরিবার তারউপর একটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নাবালক ছেলেকে নিয়ে ভাঙাচোরা বাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে কোনো সময় বড়সড় বিপদের আশঙ্কা করছেন প্রতিবেশীরাও। এ বিষয়ে ভগবন্তপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সাথে যোগাযোগ করা হলে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আশরাফুল ইসলাম মল্লিক জানান, ‘বাড়িটি জরাজীর্ণ ছিল তাতে বসবাস করতো ওই পরিবার,বাড়িটি ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে আমি নিজে পরিদর্শন করে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে এসেছি। পরিবারকে বলা হয়েছে ওই বাড়িতে না থেকে কোনো সরকারি স্কুল বা নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে।"

আবাস যোজনা তালিকায় নাম থাকা সত্বেও কেনো বাড়ি পেল না যোগ্য ওই পরিবারটি? এ প্রশ্নের জবাবে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অবশ্য আবাস যোজন নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনাকেই দায়ী করেছেন। তিনি জানান,আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে মোট ২৬০০ নাম পাঠানো হয়েছিল তারমধ্যে চুড়ান্ত তালিকা তৈরি হয় ১১০০ টির মতো।১১০০ টির মধ্যে আবার ৩৮৫ টি প্রথম দফার জন্য অনুমোদন পায়।প্রথম দফায় যে ৩৮৫ টি বাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয় এখনো অবধি তার কোনো অর্থবরাদ্দ হয়নি ফলে বিশবাঁও জলে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির কাজ।ওই পরিবারটির নাম আবাস যোজনা তালিকায় যে যে ছিল এবং বাড়ি পাওয়ার যোগ্য তা স্বীকার করে নিয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। আবাস যোজনা নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগের পাল্টা তৃণমূল ও তার সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি।বিজেপির চন্দ্রকোনা ১ নং মন্ডলের সভাপতি সুকান্ত দোলই জানান,ওই পরিবার সত্যিকারের বাড়ি পাওয়ার যোগ্য কিন্তু তৃণমূল সরকারের জমানায় সাধারণ মানুষ সুরক্ষিত নই।কেন্দ্র সরকার প্রতিবছর গরীব মানুষের বাড়ি তৈরির জন্য অর্থবরাদ্দ করেছে কিন্তু এই সরকার শুধু স্বজনপোষণ আর দুর্নীতি করেছে।যারা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য তাদের নাম তালিকায় না রেখে যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে।যোগ্য প্রাপকেরা বঞ্চিত হয়েছে যার ফল স্বরুপ এই সমস্ত মানুষেরা ভুগছে।তৃণমূল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এখন কেন্দ্রের ঘাড়ে দায় ঠেলছে।"