নিজস্ব সংবাদদাতা, চন্দ্রকোণাঃ লাইগেশন তথা বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশনে একসময় রাজ্যে প্রথমস্থান করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতাল। পরপর বেশ কয়েক বছর শীর্ষস্থান ধরে রাখলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। দু'বছর বন্ধ থাকার পর ফের চালু হয়েছে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশন ও চিকিৎসা। কেন এতোদিন বন্ধ ছিল হাসপাতালের এই পরিষেবা ? হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক ছিলেন ডঃ গৌতম প্রতিহার,পাশাপাশি একটা সময় তিনি হাসপাতালে বিএমওএইচ এর দায়িত্বও সামলেছেন। গৌতম বাবু সেরা স্ত্রী রোগ চিকিৎসক হিসাবে সেরার পুরস্কারও পেয়েছিলেন বর্তমান রাজ্য সরকারের কাছ থেকে।
বন্ধ্যাত্বকরণ বিশেষজ্ঞ হিসাবেও চিকিৎসক মহলে রাজ্য জুড়ে ডঃ গৌতম প্রতিহারের পরিচিতি রয়েছে। গত ২০২১ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর অবসর নেন ডঃ গৌতম প্রতিহার। তার অবসরের পরেই বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশনে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের যে গৌরব ছিল তা হারিয়ে যেতে বসে। বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশন। আর যার জেরে চরম সমস্যা ও ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই অপারেশনে আগ্রহী মহিলা থেকে তাদের পরিবারকে। চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের সাথে সংযোগ কেবল চন্দ্রকোণাবাসীরই নই।
আশপাশের গড়বেতা থেকে কেশপুর ব্লকের একটা বড়ো অংশের মানুষ নির্ভরশীল এই হাসপাতালের যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবার উপর। বিকল্প বলতে,হয় ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল অন্যথায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটতে হয়। এই অপারেশন বন্ধ থাকাকালীন অনেকেই হাসপাতালে এসেও ফিরে গিয়েছেন, এখন পুনরায় অপারেশন চালু হওয়ায় খুশি বন্ধ্যাত্বকরণ করতে আসা মহিলা থেকে তাদের পরিবারের সদস্যরা এমনটাই জানান তারা। জানা গিয়েছে,হাসপাতালে স্ত্রীরোগের শল্য চিকিৎসক থাকলেও কেউ এই অপারেশনের ঝুঁকি নিতে চাননি। যার জেরে বন্ধ হয় এই অপারেশন, সমস্যায় পড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে হাসপাতালের বিএমওএইচ ডঃ স্বপ্ননীল মিস্ত্রির প্রচেষ্টায় চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশন পুনরায় চালু করার জন্য গত ৫ ই ডিসেম্বর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডঃ গৌতম প্রতিহারকে দায়িত্ব দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুরোধে বিশেষজ্ঞ হিসাবে গৌতম প্রতিহার ৬ই ডিসেম্বর চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। ফের শুরু হয়েছে হাসপাতালে বন্ধ থাকা বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহে দু'দিন হাসপাতালে এই বন্ধ্যাত্বকরণ অপারেশন করা হয়। ডঃ গৌতম প্রতিহার জানান,'' জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুরোধে এবং চিঠি পেয়ে আমি সম্মতি দিই। এখন সপ্তাহে দু'দিন অপারেশন করা হয়,প্রতিদিন ২০-২৫ টি অপারেশন করা হয়। দু'বছর বন্ধ থাকায় মায়েদের সমস্যা হচ্ছিল,আমার উপর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর আস্থা রাখায় খুশি। "
এবিষয়ে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের বিএমওএইচ ডঃ স্বপ্ননীল মিস্ত্রি জানান,অনেকদিন থেকেই হাসপাতালে লাইগেশন অপারেশন বন্ধ ছিল,অ্যানাস্থিসিস্ট না থাকায় তা চালু করা যায়নি। এটা নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানানো হয়। সিএমওএইচ দপ্তর থেকে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের পূর্বতন বিএমওএইচ ডঃ গৌতম প্রতিহার তাকে দিয়ে কাজ শুরুর জন্য চিঠি পেয়ে অপারেশনের কাজ চলছে। অন্য কেউ এই অপারেশন যাতে করতে পারে তার ব্যবস্থাও করা হবে। ভবিষ্যতে এটা বন্ধ না হওয়ার জন্য। " অপারেশন বন্ধ থাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল তা মানছেন এবং হাসপাতালের উপরও চাপ বাড়ছিল বলে জানান হাসপাতালের বিএমওএইচ ডঃ স্বপ্ননীল মিস্ত্রি। আর দীর্ঘ দু'বছর পর হাসপাতালে পুনরায় এই অপারেশন চালু হওয়ায় খুশি সকলেই।