নিজস্ব প্রতিনিধি, পূর্ব মেদিনীপুর: পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার ঘোষপুর এলাকার এরাপুরের গোঁসাই মন্দিরে পুতুল দিয়ে পুজো দেওয়ার রীতি বেশ পুরনো। মন্দিরে রোজ গড়ে ৪০টি করে মানতের পুতুল জমা হয়। পুজোর পরে সেগুলো বিলিয়ে দেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। মাটির তৈরি পুতুল যেমন ছেলে-মেয়ে, বর-কনে, গরু-বাছুরের আদলে তৈরী পুতুলের পাশাপাশি বড় মাপের পুতুল দিয়েও মন্দিরে পুজো দেন ভক্তরা।
পাঁশকুড়ার ঘোষপুর এলাকার এরাপুরে গোঁসাই মন্দির এলাকার তিনটি পরিবার এই পুতুল তৈরির সঙ্গে যুক্ত। ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের পুতুলের চাহিদা মেটাতে ওই তিন পরিবার বেশ কয়েক বছর আগে নিজেদের পেশা বদলে পুতুল তৈরি শুরু করে। এটাই এখন তাদের রোজগার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরাপুরের পুতুল শুধুমাত্র কর্মসংস্থানের নতুন দিশা নয়, মৃৎ-শিল্পকলার এক স্বতন্ত্র নিদর্শনও বটে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথে ক্ষীরাই ও হাউর স্টেশনের মাঝে রেল লাইনের উত্তর দিকে রয়েছে এই গোঁসাই মন্দির। মন্দিরটি আসলে বৈষ্ণবসাধক রামানন্দ গোস্বামীর সমাধিসৌধ। জনশ্রুতি অনুযায়ী, রামানন্দ ছিলেন শ্রী চৈতন্যদেবের পার্ষদ। ১৫১০ সালে চৈতন্যদেব তমলুক হয়ে পুরী গিয়েছিলেন। সেই সময়ে তাঁর সঙ্গী ছিলেন রামানন্দ। বেহুলা নদীর দক্ষিণ পাড় (অধুনা তমলুক-পাঁশকুড়া রাজ্য সড়ক) ধরে তৎকালীন কটক রাস্তা সংলগ্ন এরাপুরে আসার পরে রামানন্দ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি সেখানেই থেকে যান। চৈতন্যদেব তাঁকে কথা দেন, নবদ্বীপে ফেরার সময়ে তিনি রামানন্দকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। চৈতন্যদেব পশ্চিমমুখী কটক রাস্তা ধরে নীলাচলে যাত্রা করেন। চৈতন্যদেবের প্রতীক্ষায় পশ্চিম দিকে মুখ করে সাধন-ভজন করতে-করতে একদিন দেহত্যাগ করেন রামানন্দ। তাঁকে সমাধিস্থ করে সেখানে মন্দির গড়ে তোলা হয়। মন্দিরটি বেশ প্রাচীন। ১৮৯৮-৯৯ সালে তৎকালীন বেঙ্গল-নাগপুর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মন্দিরটি ভেঙে ওই জায়গা দিয়ে রেললাইন পাতার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তখন সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। পরে রেলপথ নির্মাণের সময়ে মন্দিরটিকে রক্ষা করেই নকশা করা হয়েছিল। ওই মন্দিরের পাশ দিয়েই দ্রুত গতিতে ছুটে চলে নানান ট্রেন। রামানন্দ গোস্বামীর মন্দিরে আগে কাছেপিঠে পুতুল পাওয়া যেত না। তাই অন্য জায়গা থেকে পুতুল কিনে এনে মন্দিরে পুজো দিতে শুরু করেন ভক্তরা।
কথিত আছে চিরাচরিতভাবে গোঁসাই বাবার মাহাত্ম্যে মাটির পুতুল দিয়ে পুজো দিলে অনেকেই সন্তান লাভ করেন। যারা সন্তান লাভের পর পুতুল দিয়ে পুজো দেন তাদের সেই পুতুলগুলি আবার যাদের সন্তান হচ্ছে না তারা বাড়ি নিয়ে চলে যান।