শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়নি, মনের জোরেই মাধ্যমিকে সুজাতা

সবং ব্লকের ৭ নং নারায়ণবাড় অঞ্চলের রামবাড় কন্যা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সুজাতা।

author-image
Adrita
New Update
দ

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ঘরে আর্থিক অসচ্ছলতা। কোনও গৃহশিক্ষক নেই। স্কুলে যেতেও সাহায্য নিতে হয় অন্যের। তাও হার মানেনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার নারায়ণবাড় অঞ্চলের সুজাতা সাহু। প্রতিবন্ধকতা তুচ্ছ। মনের জোরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসল সুজাতা। ছোটবেলা থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধীকতা ছিল। কিন্তু অদম্য জেদ আর সাহস ছিল মনের মধ্যে ভরপুর। সঙ্গে বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণা। ছোট থেকেই ছোট হাত পা নিয়ে হাঁটতে পারত না। তিন বছর বয়সেও হামাগুড়ি দিতে পারত না। সব সময় পেট উপুড় করে পড়ে থাকত। লড়াইটা শুরু থেকেই ছিল দ্বিগুণ। সেই সময় কলকাতা পিজি থেকে শুরু করে বড় বড় হাসপাতালে অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করালেও পুরো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি সুজাতা। সুজাতার বাবা নকুল চন্দ্র সাহু,তিনি পেশায় দিনমজুর। সম্বল মাত্র ২ কাঠা জমি। যতটুকু উপার্জন আসে তা দিয়ে কোনওরকমে চলে সংসার। আর্থিক অস্বচ্ছলতায় মেয়ের ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি বাবা-মা। মেয়ের পড়াশোনার জন্য কোনদিনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি তার বাবা-মায়ের আর্থিক দুরাবস্থা। তাঁরা উৎসাহ জুগিয়েছেন মেয়েকে। তাতে ভর করেই নিজেকে তৈরি করেছে সুজাতা। সবং ব্লকের ৭ নং নারায়ণবাড় অঞ্চলের রামবাড় কন্যা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সুজাতা। তার মাধ্যমিকের সেন্টার পড়েছিল রুইনান উচ্চ মাধ্যমিক হাইস্কুলে।

নিজের পায়ে দঁড়াতে পারলেও,বেশিক্ষণ হাঁটাচলা করতে পারে না সে। তাই আজ অর্থাৎ শুক্রবার  বাবার সঙ্গেই জীবনের বড় পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে পৌঁছায় সুজাতা। সুজাতার মা আল্পনা সাহু বলেন,আমার মেয়ে অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মত সুস্থ নয়। বয়স তখন তিন বছর পার,তারপরেও হামাগুড়ি তো দূরের কথা। সবসময় ও পেট উপুড় করে পড়ে থাকত। দিনমজুর করলেই সংসার চলে কোনরকম।  তৎকালীন সময়ে অনেক টাকা খরচ করেও মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে পারিনি। পরবর্তীতে বড় হওয়ার পর নিজে থেকে হাঁটতে পারলেও বেশি দূর যেতে পারে না সুজাতা। হাত-পায়ের যন্ত্রণায় হয় তার। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কোন প্রাইভেট শিক্ষকও দিতে পারেনি পরিবার। নিজেই পড়াশোনা করে আজ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে সে। এতেই আমরা খুব খুশি। মেয়ে সুজাতা বাড়িতে এসে বলছে মা পরীক্ষাটা মোটামুটি হয়েছে,আরো ভালো হলে ভালো হতো। অন্যদিকে রুইনান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার বর্মন বলেন,সেন্টারে আসার পর আমরা ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সুজাতা সাহু নামে ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ও বলল নিজে থেকেই বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিতে পারবে। আমরা ওর জন্য সব রকম ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। এবং সে ভালোভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক থেকে সহকর্মীরা সবাই সতর্কতা ছিল যদি সুজাতা কোন সাহায্য চাই তাহলে তাকে সব রকম সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়া হবে। 

স

স্ব

স