নববধূর কোলে কার্তিক দেওয়া! প্রাচীন প্রথা মেনে ৩০৮ বছরে পদার্পণ পড়্যা পরিবারের পুজো

সাত্ত্বিক মতেই মায়ের পুজো আরাধনা হয়।

author-image
Atreyee Chowdhury Sanyal
New Update
WhatsApp Image 2025-09-23 at 10.14.40

File Picture

নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুর: প্রাচীনকাল থেকে প্রথা মেনে চলে আসছে কনকাঞ্জলির পর পড়্যা পরিবারের নববধূর কোলে কার্তিক দেওয়ার বিশেষ রীতি! নববধূও সাদরে বরণ করে নেয় তাঁর সন্তান-সন্ততি কামনায়। এভাবেই এক এক করে ৩০৮ বছর ধরে প্রাচীন প্রথাকে মান্যতা দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের অন্তর্গত খেতুয়া গ্রামের পড়্যা পরিবারের দুর্গাপুজো! 

মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে মা উমার আরাধনায় মেতে উঠেন পড়্যা পরিবারের সদস্যরা। বনেদি বাড়ির আদি পূর্বপুরুষদের নিয়ম অনুযায়ী, সাত্ত্বিক মতেই মায়ের পুজো আরাধনা হয়। বিষ্ণু মন্দির থেকে আরাধ্য কূল দেবতাকে মায়ের মন্দিরে নিয়ে এসে পুজোর পর্ব শুরু করেন পুরোহিত। প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায় মা উমার আরাধনা। ষষ্ঠীতে বেলতলায় হয় মা এর বেলবরন! সপ্তমীতে পড়্যা পরিবারের বধূরা নারকেল ও চিনি সহযোগে বিশেষ লাড্ডু তৈরি করে মা কে নিবেদন করেন। 

WhatsApp Image 2025-09-23 at 10.14.39

তিথি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় মেনেই পূজোর হোম-যজ্ঞ শুরু করতে হয়। অষ্টমী-নবমী সন্ধিক্ষণে, সন্ধী পুজোতে মায়ের বিশেষ উপাচার হিসেবে ১০৮ পদ্মফুলের সঙ্গে লাল শালুকফুল ও শ্যামা ঘাস নিবেদন করতে হয়। প্রতিদিন ওই মৃত্তিকা দিয়ে শিবলিঙ্গ তৈরি করতে হয়। প্রথমে বিষ্ণু, তারপর শিব এবং সবশেষে মা দুর্গার পুজো শুরু হয় চন্ডিপাঠ এর মধ্যে দিয়ে। দশমীর দিন ভোর বেলায় মঙ্গল আরতিতে যোগদান করেন পরিবারের ৮ থেকে ৮০ সকলেই। 

সারা বছর কর্মের জন্য বাড়ির বাইরে থাকলেও পুজোর সময় সকল সদস্যই ফিরে আসেন মায়ের আরাধনার জন্য। বাইরে কোথাও ঠাকুর দেখতে যাওয়া, ঘোরা নয় বরং নিজেদের মন্দিরে পরিবারের লোকজনেরা সকলে মিলে একসাথে খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ করাটাই তাদের কাছে দুর্গাপুজোর মূল প্রাধান্য। ইদানিংকালে দশমীর দিন পড়্যা পরিবারের বিবাহ যোগ্যা ছেলেদের কোলে লক্ষ্মী দেওয়ার বিশেষ রীতি শুরু হয়েছে। যাতে পরিবারে নববধূরা মা লক্ষ্মী রূপ নিয়ে আসে। মনের মধ্যে একরাশ বিষাদের সূর নিয়েই দশমীর সন্ধ্যায় মায়ের বরণ শেষে পরিবারের সকলে মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। মায়ের বিদায় শেষে অপেক্ষা শুরু হয় আবারও একটি বছরের!