বিরল রোগে আক্রান্ত মেদিনীপুরের ছাত্রী চায় ডাক্তার হতে; সহায়তার হাত বাড়ালেন চিকিৎসক-মন্ত্রী

হার না মানার গল্প এটা।

author-image
Anusmita Bhattacharya
New Update
WhatsApp Image 2025-05-29 at 9.11.10 AM

নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুর: মাত্র ৩ বছর বয়সে শরীরে বাসা বাঁধে বিরল স্নায়ুরোগ এসএমএ বা স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি। মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর থানার তাতারপুর গ্রামের কৃষক পরিবারের। কোটি কোটি টাকা জোগাড় করে মেয়ের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিল না পেশায় সামান্য কৃষক সর্বরঞ্জন বেরার। ওই বয়স থেকেই তাই মেধাবী স্বর্ণাভার এগিয়ে চলার সাথী হয় 'হুইল চেয়ার'। খাওয়া-দাওয়া, শোয়া-বসা সবকিছুর জন্যই বাবা-মা'র উপর নির্ভর করতে হয় স্বর্ণাভাকে। আর পড়াশোনা? হ্যাঁ, সেটার জন্যও বাবা-মায়ের উপরই নির্ভর করতে হয় তাকে। তবে, কোনও বাধাই অবশ্য শেষ পর্যন্ত রুখে দিতে পারেনি পশ্চিম মেদিনীপুরের 'গর্ব' স্বর্ণাভা বেরাকে। আনন্দপুর থানার সাহসপুর ঘোষাল হাইস্কুল থেকে ২০২৩ সালে ৬৫৭ নম্বর (৯৪ শতাংশ) পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে স্বর্ণাভা। তখন থেকেই 'ডাক্তার' হওয়ার স্বপ্ন দেখত স্বর্ণাভা। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করে প্রায় ৯৫ শতাংশ নম্বর (৪৭৪) পেয়েছে সে। নিট পরীক্ষাও ভালো হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে স্বর্ণাভা। 

এদিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে জেলার ৩৩ জন কৃতি ছাত্রছাত্রীকে সংবর্ধিত করা হয়। সেখানে হাজির হয়েছিল স্বর্ণাভাও। স্বর্ণাভাকে দেখে ও তার লড়াইয়ের কথা শুনে আবেগে ভেসে যান সকলেই। স্বর্ণাভাকে সংবর্ধিত করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন ও সেচ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী তথা পেশায় চিকিৎসক ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়াও। ছলছল চোখে মন্ত্রী তার কাছে জানতে চান, "তুমি কি হতে চাও মা?" দৃপ্ত কন্ঠে স্বর্ণাভা বলে, "আমি ডাক্তার হতে চাই। নিট পরীক্ষা ভালো হয়েছে"। মন্ত্রী তার মাথায় হাত দিয়ে বলেন, "তুমি যতদূর পড়তে চাও, পড়া চালিয়ে যাও। আজ থেকে তোমার পড়াশোনার সব দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। পারিবারিকভাবে আমরা একটি এনজিও চালাই। সেই এনজিও প্রতি বছর ২২ জন ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনার দায়িত্ব নেয়। তোমার দায়িত্বও আমরা নিলাম"। স্বাভাবিকভাবেই এরপর আর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কেউই। রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী এরপর স্বর্ণাভার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "ওর পড়া যেন না থামে। আমরা আপনার নাম-ঠিকানা সব নিয়ে নিচ্ছি। ওকে এগিয়ে যেতে দিন। ওর স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব নিলাম আমরা"।

WhatsApp Image 2025-05-29 at 9.11.11 AM