মেদিনীপুর শহরের লচি পোদ্দারের পুজোর ইতিহাস

জেনে নিন লচি পোদ্দারের পুজোর ইতিহাস।

author-image
Debjit Biswas
New Update
WhatsApp Image 2025-10-19 at 6.53.51 PM

lochi poddar

নিজস্ব সংবাদদাতা : স্বপ্নে আদেশ পেয়েছিলেন পুজো শুরু করার। সেই আদেশ পেয়েই ৪০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই পুজো। কিন্তু বর্তমান সময়েও মা কালীর নূপুরের শব্দ শুনেছেন অনেকেই। গল্প এখানেই শেষ নয়। পুরনো রীতি মেনে কালী মায়ের আরাধনার করা হয়। পাশাপাশি এখনও হয় কবি গানের আসর। একইসঙ্গে বিসর্জনের সময় জ্বালানো হয় মশাল। গল্পটা মেদিনীপুর শহরের লচি পোদ্দারের পুজোর। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, এবছরও ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন শুরু হয়েছে। পুজো উপলক্ষ্যে এখন নতুন রঙে রঙিন করা হচ্ছে পুজোর মণ্ডপ। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই , বিদেশ থেকেও এই পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়েছেন। মেদিনীপুর শহর ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, আগে বিসর্জনের জন্য মা কালীকে গরুর গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বর্তমানেও ঠেলা গাড়ি ব্যবহার করেই ঠাকুরের বির্সজন হয়।
 এদিন কথা হচ্ছিল পরিবারের সদস্য অরবিন্দ দে , দিলীপ দে বলেন, পুরোনো ঝাড়বাতি দিয়ে পুজোর স্থান সাজানো হয়। এই পুজোকে কেন্দ্র করে বহু স্মৃতি রয়েছে। মা খুবই জাগ্রত। অনেকেই মায়ের নূপুরের শব্দ শুনেছেন। তান্ত্রিক মতেই পুজো হয়।

digbijay da add


 প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরের লচি পোদ্দার বাড়ির কালীপুজো অন্যতম বিখ্যাত। এটি জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজো হিসাবেই পরিচিত। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে পুরনো এই পুজো হয়ে আসছে। তৎকালীন সময়ে কোনও এক ব্যক্তি স্বপ্নাদেশে কালী পুজো শুরু করেন। কালী ঠাকুরের রূপ ও গয়নার ডিজাইনে ওড়িশা রাজ্যের সংস্কৃতির ছোঁয়া লক্ষ্য করা যায়। যা আজও বর্তমান। শোনা যায়, এই কালী পুজো জাঁকজমকভাবে শুরু হয় লক্ষ্মী নারায়ণ দে -র হাত ধরে। তাঁর আমল থেকেই এই কালী পুজোর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। লক্ষ্মী নারায়ণ বাবু ধানের আড়ত দেখাশোনা করতেন। তাঁকে পোদ্দার বলে ডাকা হতো। লক্ষ্মী নারায়ণ নামের অপভ্রংশ হয়ে লচি পোদ্দার নামটি এসেছে। জেলার নানা প্রান্তের মানুষ এই পুজো দেখতে আসতেন। জানা গিয়েছে, তৎকালীন সময়ে পুজো উপলক্ষ্যে সুবিশাল কবি গানের আসর বসত। যা আজও বর্তমান। পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, পুজোর সময় প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরিবারের সদস্যরা নির্জলা উপবাস করেন। একেবারে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত পুজো হয়। বিসর্জনের সময় মশাল জ্বালানো হয়। সেই মশাল দেখতেও প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। পুজো শুরুর দিকে বলি প্রথা ছিল। কিন্তু ১৯৩৫ সাল নাগাদ বলি প্রথা উঠে যায়। তার বদলে আখ , কুমড়োর বলি দেওয়া হয়। মূলত গান্ধীজীর অহিংস নীতি ও পশু হত্যা উচিত নয় বলেই বলি প্রথা বন্ধ হয় বলে পরিবারের সদস্যরা মনে করেন। পরিবারের সদস্য অভিজিৎ দে, জিৎ নারায়ণ দে বলেন, এবছরও প্রচুর মানুষ আসবেন বলে আশাবাদী।