মেদিনীপুরের বিখ্যাত উগ্র তারা মায়ের মন্দিরের পুজোর ইতিহাস

জেনে নিন এক বিখ্যাত পুজোর ইতিহাস।

author-image
Debjit Biswas
New Update
WhatsApp Image 2025-10-19 at 6.54.17 PM

ugro tara ma

নিজস্ব সংবাদদাতা : দেশ যখন স্বাধীন হয়নি সেইসময় এই পুজোর শুরু হয় ভিনদেশী এক সাধুবাবার হাত ধরে। ওই সাধুবাবার পরিচয় জানা যায়নি আজও। এলাকাবাসীরা বলেন, 'বড়োদের মুখে শুনেছি, ওই সাধু নাকি হিন্দি ও বাংলা মিশিয়ে কথা বলতেন।' সেই সাধুবাবাই মেদিনীপুর শহরের মহতাবপুর এলাকায় মা কালীর মন্দির গড়ে তোলেন এবং নিজেই এই পুজো শুরু করেন। যা উগ্র তারা মায়ের মন্দির নামেও পরিচিত। ওই মন্দিরের পাশেই রয়েছে মেদিনীপুর শহরের হিন্দুদের দাহ করার একমাত্র শ্মশানঘাট। যা পদ্মাবতী মহাশ্মশান নাম পরিচিত। স্বাভাবিকভাবেই মেদিনীপুর শহরবাসীর কাছে এই পুজো আসরে শ্মশান-কালী মায়ের পুজো হিসেবেই খ্যাত। যথেষ্ট বিখ্যাত এই পুজো। 

এই মন্দির ও দেবীকে ঘিরে রয়েছে নানা অলৌকিক কাহিনী। মন্দির কমিটির সদস্য তথা বর্তমানে অন্যতম সেবাইত তপন পাখিরা বলেন, "আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনকালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ভিনদেশী এক সাধুবাবার হাত ধরে।" তিনি এও বলেন, মাঘ মাসের রটন্তী চতুর্দশীকে মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন ধরা হয়। তপনবাবু এও বলেন, "একসময় এই জায়গাটা ছিল ঝোপজঙ্গলে পূর্ণ। হঠাৎই এখানে এক সাধুবাবা থাকা শুরু করেন। তিনি কোথা থেকে এসেছিলেন, এলাকাবাসীরা তা জানতে পারেননি! তিনি তন্ত্রসাধনা করতেন। একসময় তিনিই এই এলাকার বাসিন্দা, স্বর্গীয় পশুপতিনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে একটু জমি নিয়ে মন্দির গড়ে তোলার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।" এরপরই তপনবাবু যা শোনান, তাতে গা ছমছম করতে বাধ্য! তিন বলেন, "মেদিনীপুর শহরের বক্সীবাজার এলাকার এক বাহ্মণ পরিবারের তরুণী (অবিবাহিত)-র অপঘাতে মৃত্যু হলে, তাঁর শরীরের হাড়গোড় ও মাথার খুলি দিয়ে মূর্তি গড়ে তোলেন সাধুবাবা। সেইসঙ্গেই রটন্তী চতুর্দশীর রাতে পুজো শুরুর আগে 'নরবলি'-ও দেওয়া হয় বলে শুনেছি। যদিও, সাধুবাবার অলৌকিক ক্ষমতাবলে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে ধরতে এসেও নরবলির প্রমাণ পায়নি!

digbijay da add

তপন বলেন, মূর্তিতে খড়ের পরিবর্তে কুশ ব্যবহার করা হয়েছে। তার উপরে মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছে অবয়ব। একথা যে সত্য সেই প্রমাণ আজও আমরা পাই।" প্রতি ১২ বছর ছাড়া দেবীর 'নব কলেবর' হয় বলে জানান তপন পাখিরা, দুর্গাশঙ্কর মিশ্ররা। সেই নব-কলেবরের সময়, দেবীর মূর্তি কাঁসাই নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। আর নিরঞ্জনের আগে দেবীর শরীর থেকে বের করে নেওয়া হয় সমস্ত হাড়গোড়। নতুন মূর্তিতেও ঠিক একইভাবে হাড়গুলি দিয়ে কাঠামো তৈরি করা হয়। ২০২৮ সালের রটন্তী চতুর্দশীর দিন পরবর্তী নব-কলেবর হবে বলে জানান তপন, দুর্গাশঙ্কররা। মন্দিরের পুরোহিত দুর্গাশঙ্কর মিশ্র বলেন, "মাঝেমধ্যেই দেবী নানা রূপে দেখা দেন। সাত-আট বছর আগে, দুর্গাপুজোর ঠিক আগে আগে এক সন্ধ্যায় হঠাৎই এক তরুণী রূপে তিনি আবির্ভূতা হয়েছিলেন। ওই সন্ধ্যায় আমার আরতি করতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমি আসলে ঢাকির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎই অজ্ঞাত-পরিচয় এক তরুণী এসে আমাকে বলে, তুই কখনো কারোর জন্য অপেক্ষা করবি না, নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিদিন আরতি করবি। এরপর আমি আরতিতে ব্যস্ত হয়ে যাই। দেখি ওই তরুণী উধাও! তারপর আর কখনো কোনদিন এই এলাকায় তাকে দেখিনি।" মন্দিরের সেবাইত তপন বলেন, "রটন্তী চতুর্দশীর সাথে সাথেই এখানে কালীপুজোও ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হয়। অন্নভোগ খাওয়ানো হয়। তবে আমরা এখানে ছাগ বলি বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমানে শুধু লাউ, চালকুমড়ো প্রভৃতি বলি দেওয়া হয়।"