হাতিদের সুরক্ষা, সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা মহাবিদ্যালয়ে

বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যের জন্য প্রতিটি প্রাণ গুরুত্বপূর্ণ।

author-image
Anusmita Bhattacharya
New Update
WhatsApp Image 2025-08-20 at 6.42.02 PM

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: দক্ষিণবঙ্গের ঝাড়গ্রামে হাতির উপর অত্যাচারের ঘটনায় হাতি সুরক্ষা নিয়ে সরব হয়েছিল একাধিক পশুপ্রেমি সংগঠন। তারপরও বিভিন্ন এলাকায় হাতির উপর আগুনের মশাল ছুড়তে দেখা গিয়েছে। নিত্যদিন বেড়ে চলেছে হাতিদের উপর অত্যাচারের ঘটনা। শুধু তাই নয়, তাদের বাসস্থানও একপ্রকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। জঙ্গল উধাও হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে কৃষিজমি। হাতির করিডরে গড়ে উঠছে ইমারত। এমনই নানা ঘটনা নিয়ে বুধবার বিশেষ আলোচনা হলো রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের আয়োজনে। প্রধান আলোচক ছিলেন প্রাক্তন বনাধিকারিক সমীর মজুমদার। প্রায় ১oo জন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাত্রীরা অংশ নেন। 

দক্ষিণবঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় হাতির হানায় ধানক্ষেত, ঘরবাড়ি নষ্ট হচ্ছে আবার উল্টোদিকে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে হাতিদের বাসস্থান সঙ্কটে পড়ছে। এদিন আলোচনায় প্রাক্তন বনকর্তা বলেছেন, "টানা ৩০ বছরের কর্মজীবনে জঙ্গলকে দেখেছি, জঙ্গলে হাতিদের আচরণও দেখেছি। জঙ্গল জীবনের অভিজ্ঞতা তরুণ শিক্ষার্থীদের বাস্তব জগতের বন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করা একাডেমিক শিক্ষা এবং ব্যবহারিক সংরক্ষণের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করতে পারে, যার ফলে পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ আরও গভীরভাবে জাগ্রত হয়"। দক্ষিণবঙ্গ ছিল হাতিদের প্রাকৃতিক আবাসভূমি। মানুষের আধিপত্য আর অযত্নে এই বৃহৎ প্রাণী ক্রমশ হয়ে উঠছে অসহায়। বনভূমি কমে যাওয়ায় হাতিরা বাধ্য হচ্ছে মানুষের গ্রামে চলে আসতে। খাদ্যের খোঁজে ধান খেত আর বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে তারা। আর সেই মুহূর্তে মানুষ তাদের প্রতিপক্ষ ভেবে শুরু করছে আক্রমণ। বিদ্যুতের ফাঁদ, বাঁশের কাঁটা, পাথর নিক্ষেপ—এসব দিয়ে প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছে হাতির দল। দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় প্রতি বছর বহু হাতি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে, কিংবা জমিতে পাতা বৈদ্যুতিক ফাঁদে শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের জীবন। শুধু তাই নয়—কখনো কখনো ক্ষিপ্ত জনতা লাঠি, আগুন বা বিস্ফোরক ব্যবহার করেও তাদের তাড়াচ্ছে। অন্যদিকে, বনভূমি দখল আর অবৈধ গাছ কাটার ফলে হাতির স্বাভাবিক চলার পথ ভেঙে গেছে। 'হাতির করিডর' বলে পরিচিত পথগুলোতে এখন গড়ে উঠেছে ইটের বাড়ি, ফসলের জমি আর রাস্তা। ফলস্বরূপ মানুষ-হাতির সংঘর্ষ বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। ভূগোল বিভাগের প্রধান প্রভাত কুমার শীট বলেন, "সাম্প্রতিক বিশ্ব হাতি দিবস গিয়েছে। হাতিদের সুরক্ষা, সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা করতে এই আলোচনা। আমাদের লক্ষ্য ছিল হাতি সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। এটি কেবল বন্যপ্রাণীর বেঁচে থাকার বিষয় নয় বরং পরিবেশগত সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং মানব স্বার্থ রক্ষার বিষয়ও"।

WhatsApp Image 2025-08-20 at 6.42.01 PM