অভিনব উপায়ে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালন

রাজ্যে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। তাই ঝাঁটা হাতে, সচেতনতার বার্তা নিয়ে নিজেরাই নেমে পড়েছে ময়দানে। অভিনব উপায়ে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালন করা হল এভাবেই। ঘটনাস্থল জামুড়িয়া। নেতৃত্বে রাস্তার মাস্টার।

author-image
Pallabi Sanyal
New Update
11111

হরি ঘোষ,  জামুড়িয়া : কারো হাতে ঝাঁটা, কারো হাতে ঝুড়ি, কারো হাতে কোদাল, কারো হাতে কেরোসিন, কারো হাতে ব্লিচিং এভাবেই খুদে আদিবাসী পড়ুয়ারা ও মায়েরা রাস্তায় নেমে 'নিজের গ্রাম নিজেরা পরিষ্কার করো' বলে এক অভিনব অভিযান চালাচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের মুখে এক কথা, ,"নির্মল গ্রাম গড়বো, কুসংস্কার দূর করবো"। মূলত এই বার্তাকে সামনে রেখেই এক অভিনব উপায়ে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালন করলেন রাস্তার মাস্টার তথা তিলকা মাঝি, আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ নারায়ন নায়ক। বর্তমানে রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গত সপ্তাহেও বেড়েছে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তর সংখ্যা। গত সপ্তাহে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৫০ জন। 

১১১১১১১১১



এদিন তিনি নিজেও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে গ্রাম পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমে পড়েন। কোথাও জমা জল দেখলেই প্রথমে সেটাকে পরিষ্কার করেন, বাড়ির কাঁচা নর্দমাগুলিকে পরিষ্কার করে সেখানে ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দেন, জমা জলে একটু কেরোসিন তেল ছড়িয়ে দেন। এটি কোনো একটি বিশেষ গ্রামের কর্মসূচি নয়, একসঙ্গে অনেকগুলি আদিবাসী গ্রামে এমনই অভিনব কর্মসূচি পালন করছেন রাস্তার মাস্টার। তাদের মধ্যে অন্যতম পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়া ব্লকের অন্তর্গত নীলপুর আদিবাসী গ্রাম, আসানসোল দক্ষিণ থানার অন্তর্গত নামো জামডোবা গ্রাম সহ বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বেশ কিছু আদিবাসী গ্রাম। আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাস জুড়ে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। এ বিষয়ে রাস্তার মাস্টারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য আদিবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ও একই সঙ্গে কুসংস্কারকে দূর করা। তাঁর কথায়, পাঠ্য পুস্তকের মাধ্যমে প্রথাগতভাবে পড়ানোর চেয়ে রাস্তায় নেমে হাতে-কলমে শিক্ষা দিলে ছাত্র-ছাত্রীদের সেটি বোধগম্য করতে অনেক সুবিধা হয়। তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য দপ্তরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জুন থেকে অক্টোবর মাস মশা বাহিত রোগের মাস হিসেবে চিহ্নিত, এই সময়ে ডেঙ্গি ম্যালেরিয়ার মতো মারণ রোগের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। এই সময়েই মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।

১১১

এদিনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী আলতা হাঁসদাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, 'জমা জল যেখানে  ডেঙ্গু রোগ সেখানে', তাই 'জল জমতে দেব না ডেঙ্গু রোগ ছড়াবো না'। আরেক ছাত্রী শানু হাঁসদাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে, রাস্তার মাস্টার আমাদেরকে শেখালো 'রোগ হলে হাসপাতালে যাব ওষুধ খাব কখনো ওঝা-ঝাড়ফুকের কাছে যাব না'। আজকের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী মা রাসমনি মারান্ডি বলেন, আজকে স্যার আমাদের শেখালেন আমাদের চারিদিক পরিষ্কার থাকলে আমরাও সুস্থ থাকবো, মশা বা সাপে কামড়ানোর ভয় থাকবে না, ভয় থাকবে না ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া রোগের। আরেক মা মঙ্গলি মুরমু বলেন, আজকে বিশ্ব আদিবাসী দিবসে আমরা শিখলাম, 'সচেতনতা গড়বো কুসংস্কার দূর করব'। আজকের কর্মসূচির বিষয়ে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস. অরুণ প্রসাদকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রাস্তার মাস্টারের ভূয়সী  প্রশংসা করে বলেন, 'প্রশংসনীয় উদ্যোগ, আমি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।'