তিন বছর অতিক্রান্ত, মেলেনি পুনর্বাসন! তার মধ্যেই ফের ধস

ধসের পর ধস। শাসক দল এসেছে, বিরোধী শিবির এসেছে তবে শুধুই গালভরা কথা। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মেলেনি পুনর্বাসন। তার মধ্যেই আবার ধ্বস নামল। আতঙ্কে সাধারণ মানুষ।

New Update
andalland

হরি ঘোষ, অন্ডাল: পুরনো ধসের আতঙ্কে দিন কাটছিল হরিশপুর গ্রামের মানুষের। সেই আতঙ্ক আবার ছড়াল এলাকায়। বুধবার রাত্রে হরিশপুর গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় আবার ধসের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে হরিশপুর গ্রামে থাকা বাসিন্দারা। আবারও গ্রামের অবশিষ্ট বাড়িঘর মাটির তলে যেতে বসেছে, এমনটাই দাবি গ্রামবাসীদের।



ঘটনার সূত্রপাত ২০২০ সালের ১৪ ই জুন সময় দুপুর ১:৩০ মিনিট। বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল অন্ডালের হরিশপুর গ্রামের মাটি। হুড়মুড়িয়ে বাড়িঘর ভেঙে পড়ে যায়। একাধিক বাড়ি মাটির নিচে তলিয়ে যায়। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভিটেমাটি হারা হয়ে যায় গ্রামবাসীরা। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে ওঠার পর গ্রামবাসীরা বুঝতে পারে গ্রামের সন্নিকটেই থাকা ইসিএলের খোলা মুখ খনির কয়লা উৎপাদনের কারণেই ধসে তারা সর্বহারা হয়ে গেছে। ইসিএল ও রাজনৈতিক নেতারা গ্রামে এসে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মিলেছিল পুনর্বাসনে আশ্বাসও। প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসক বিরোধী সব দলেরই শুধুই আশ্বাস পেয়েছে হরিশপুর গ্রামের মানুষ, এমনটা জানায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ। সেদিনের ধসের আতঙ্ক এতটাই ছিল যে গ্রামবাসীরা পুরো গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালাতে বাধ্য হয়েছিল। আশ্রয় নিয়েছিল শরণার্থী শিবিরে। যারা আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছল গ্রাম ছেড়ে তারা অন্যত্র বসবাস করছে। কিন্তু গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের দাবি যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল দীর্ঘদিন বাইরে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ফিরে এসেছে ধস কবলিত গ্রামেই। তিন বছর ধরে গ্রামের সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। পুনর্বাসন নিয়ে বারবার গ্রামবাসীরা বহু আন্দোলন করেছে ইতিমধ্যেই। বিগত লোকসভা ও বিধানসভা ভোট বয়কটও করেছিল গ্রামের মানুষ।

সবকিছু করার পরও কোন কাজই হয়নি। গ্রামের অসহায় মানুষদের স্বার্থের কথা ভাবেনি কেউই। সেদিনের ঘটনার তিন বছর পর আজও হরিশপুর গ্রামের মানুষ পুনর্বাসন পায়নি। আতঙ্কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে তারা ধস কবলিত গ্রামেই। অজয় ও দামোদর নদ দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। কিন্তু হরিশপুর আছে হরিশপুরেই। ক্ষতিপূরণ বা  পুনর্বাসন কিছুই মেলেনি। তিন বছর আগের সেই দুপুরের ঘটনা স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠে হরিশপুরের বাসিন্দারা।

গত কয়েকদিন ধরে খনি অঞ্চলে বেড়েছে বৃষ্টিপাতের মাত্রা। বৃষ্টিপাতের কারণেই বুধবার রাত্রে ফের ধ্বস দেখা দিয়েছে হরিশপুর গ্রামে। সেই পুরনো আতঙ্কে আতঙ্কিত গ্রামের মানুষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আতঙ্কিত গ্রামের মানুষ কী করবে, কোথায় যাবে এটা ভেবেই আকুল। আজ পর্যন্ত শাসক বিরোধী ও প্রশাসনের বহু কর্তা ব্যক্তিত্ব এলাকায় এসেছেন, শুধুই আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। আজ তারা কার কাছে যাবে? কোথায় গেলে তাদের সমস্যার সমাধান হবে? এটাই ভাবাচ্ছে হরিশপুর গ্রামের মানুষদের।