নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ভগবন্তপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের চৈতন্যপুরে শিলাবতী নদীর উপর কাঠের সেতু নির্মান করেছিল গ্রাম পঞ্চায়েত। নদী পারাপারে এই সেতুর উপর নির্ভরশীল চৈতন্যপুর, কেশেডাল, নিশ্চিন্তপুর,পরমানন্দপুর,পাঁচামি, ঘোষকিরা, ধর্মপোতা, কৃষ্ণপুর সহ ২০-২৫ টি গ্রামের বাসিন্দারা,পাশাপাশি ভগবন্তপুর ১ ও ভগবন্তপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সংযোগস্থাপন করে এই কাঠের সেতুটি।
এছাড়াও নদী পেরিয়ে যাতায়াত স্কুল কলেজ, হাসপাতাল থেকে বাজারহাট। এমনকি নদীর একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে কৃষিকাজের জন্য যাতায়াত করতে হয় এলাকার কৃষকদের। গত বন্যায় শিলাবতীর জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে কাঠের সেতুর একাংশ,নদীতে জল থাকায় ভাঙা সেতুর পাশেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে নৌকায় যাতায়াত। চাষের মরসুম ধান তুলে আলু চাষ শুরু হয়েছে এলাকায়। চাষের সামগ্রী বাজার থেকে কিনে বাড়ি নিয়ে যেতে ভরসা নৌকা। তাতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।
চাষের সামগ্রী ট্রাক্টরে করে নদীর জল পেরিয়ে নিয়ে যেতে গিয়ে দূর্ঘটনাও ঘটেছে,নদীর জলে ডুবে গিয়েছে একটি ট্রাক্টর। তাকে উপেক্ষা করেই চাষের সামগ্রী নিয়ে নদীর জলে ডুবে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে ট্রাক্টর। এক কথায় নিত্যযাত্রী থেকে এলাকার কৃষকদের নদীপারে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে দাবি তাদের। আর এতেই ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার বাসিন্দারা। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে শুনে আসছে তাদের এলাকায় হবে পাকা ব্রীজ কিন্তু আজও তা অধরা। পঞ্চায়েত, বিধানসভা হোক কিংবা লোকসভা ভোট। ভোট আসলেই সব রাজনৈতিক দলের মুখে পাকা ব্রীজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির বন্যা বয় কিন্তু, ভোট মিটলেই আর কারও তৎপরতা দেখা যায় না অভিযোগ এলাকাবাসীর।
প্রতিবছর বর্ষায় নদীর জল বাড়লেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়,বন্যা হলে তো দুর্ভোগের শেষ থাকেনা এমনটাই জানাচ্ছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। জানা গিয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকে পাকা ব্রীজের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করে আসছে এলাকাবাসীরা। ব্রীজের দাবিতে একাধিক বার আন্দোলনও হয়েছে এলাকায়। তার ফল স্বরুপ বেশ কয়েকবার পূর্ত দপ্তরের টিম এলাকায় গিয়ে সার্ভে করে,পরবর্তী সময়ে ব্রীজ সংলগ্ন নদীর দুই পাড়ে সংযোগকারী পিচ রাস্তা তৈরি হলেও ব্রীজ নির্মাণে কোনো প্রশাসনিক তৎপরতা চোখে পড়েনি।
এলাকার এক বাসিন্দা পাকা ব্রীজের দাবিতে অন্যতম পিটিশনার দুলাল বাগ জানান, '' নদীর দুই পাড়ে ব্রীজ সংলগ্ন অ্যাপ্রোচরোড তৈরি হয়েছে। কিন্তু ৮০'র দশক থেকে আমাদের দাবি নদী পারাপারে পাকা ব্রীজ নির্মাণ,এনিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসন তৎপরতা দেখায়নি। আমরাই একাধিক বার জেলা থেকে রাজ্য বিভিন্ন দপ্তরে তাগাদা দিয়েছি। ২০২০ সালে রাজ্য থেকে জেলায় একটি চিঠি পাঠানো হয় জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে। কিন্তু সেই চিঠি জেলাতেই পড়েছিল ব্লকে পাঠানো হয়নি। ব্রীজ নির্মাণে অগ্রগতির খোঁজ নিতে গিয়ে আমরা তা জানতে পারি। এনিয়ে জেলায় খোঁজ খবর নেওয়ার পর সম্প্রতি জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সেই চিঠি জেলা থেকে ব্লকে পাঠানো হয়েছে।
ব্লকের বর্তমান বিডিও চিঠি হাতে পেয়ে ব্রীজ নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন। ইতিমধ্যে বিডিও অফিসে জমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত একটি বৈঠকও হয়েছে বলে জানান দুলাল বাবু। এবিষয়ে চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক জানিয়েছেন," জেলা প্রশাসনের থেকে সম্প্রতি আমরা একটা চিঠি পেয়েছি জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত। ব্লক প্রশাসন ছাড়াও পূর্ত দপ্তর, বিএলআরও, ল্যান্ড অ্যাকুইজেশন। কৃষি দপ্তরকেও এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। সবাইকে নিয়ে ইতিমধ্যে দুটি বৈঠক করা হয়েছে। বিএলআরও দপ্তরকে নিয়ে পূর্ত দপ্তর সরাসরি জমি অধিগ্রহণ করবে তার আগে সার্ভের কাজটা করতে হবে সবাইকে নিয়ে। আমরা আরও একবার সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসবো। এই মুহূর্তে আবাস যোজনার সমীক্ষার কাজ চলছে ব্লকেআবাস যোজনার সমীক্ষার কাজ শেষ হলে ব্রীজ ও ব্রীজ সংলগ্ন জমি অধিগ্রহনের সার্ভের কাজটা শুরু করে দেবো আমরা। "
আপাতত, নদীতে জল রয়েছে জল কমলে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকে দিয়ে কাঠের সেতুর ভাঙা অংশটা মেরামত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে যাতে ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত করা যায় এমনও আশ্বাস দিয়েছেন ব্লকের বিডিও। ৮০র দশক থেকে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে নদী পারাপারে দুর্ভোগ যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে শিলাবতী নদীর উপর পাকা ব্রীজ নির্মাণের অপেক্ষায় এলাকাবাসীরা। এখন দেখার প্রশাসন কতোটা তৎপরতা দেখায়।