২৩৪ বছরের ঐতিহ্য: কুলটির লছমনপুরে দুর্গাপুজোর রাজকীয় ছোঁয়া

এএনএম নিউজ-এর সঙ্গে কুলটির লছমনপুরে দুর্গাপুজো।

author-image
Aniket
আপডেট করা হয়েছে
New Update
WhatsApp Image 2025-09-28 at 15.58.40

অনন্যা, এএনএম নিউজ: আলো-ঝলমলে প্যান্ডেল, থিমের ঝলক আর ঢাকের বাদ্য—এসবই আজকের দুর্গাপুজোর চেনা ছবি। তবে এই কোলাহলের মাঝেও আছে এমন কিছু পুজো, যেগুলো বাঁচিয়ে রেখেছে সাবেকিয়ানা আর ঐতিহ্যের আলো। তেমনই এক নিদর্শন কুলটির লছমনপুরের দুর্গাপুজো।

প্রায় ২৩৪ বছর আগে, সন ১২৭২-এ, মায়ের স্বপ্নাদেশে তৈরি হয়েছিল এই উমার বাড়ি। কথিত আছে, জমিদার আমলেই উমা নিজেই স্বপ্নে মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল পুজো। সময় বদলেছে, প্রজন্ম পাল্টেছে, কিন্তু নিয়ম-কানুন আজও অটুট।

বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন গ্রামের স্বনামধন্য দুঃখহরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এটি শুধু একটি পরিবারের নয়—গ্রামের অসংখ্য মানুষ নিজেদের দায়িত্ব নিয়েই মায়ের আরাধনায় মত্ত থাকেন ।

এই পুজোর বিশেষত্ব তার আচারবিধি। চারদিন ধরে নিরামিষ ভোগ পরিবেশন করা হয়। তবে দশমীতে ভিন্ন এক প্রথা—সেদিন মাকে পোড়া মাছ নিবেদন করা হয়, আর তারপরই ভক্তরা ভোগ গ্রহণ করেন। বিসর্জনের দিনও রয়েছে আলাদা মাত্রা। মা এখানে ট্রাক বা গাড়িতে নয়,কৈলাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন গ্রামবাসীর কাঁধে চেপেই।

আরও এক অনন্য ছবি দেখা যায় লছমনপুরে। দুর্গাপুজোর চারদিন কারোর বাড়িতে চুলো জ্বলে না। গ্রামের প্রতিটি মানুষ মায়ের ভোগেই পেট ভরান। ফলে এই উৎসব হয়ে ওঠে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, সামাজিক বন্ধনেরও প্রতীক।

মন্দিরে হয়েছে সংস্কার, যুক্ত হয়েছে নতুন রূপ, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী নিয়মকানুনের রং আজও মলিন হয়নি। লছমনপুরের দুর্গাপুজো তাই শুধু ভক্তির প্রতীক নয়, ইতিহাসেরও এক জীবন্ত দলিল—যেখানে দেবী দুর্গা কেবল পূজিত নন, তিনি যেন সবার আপন ঘরের মা।