/anm-bengali/media/media_files/yMDHyNeL3iOrP1861FRs.jpg)
হরি ঘোষ, জামুড়িয়া : ফের দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট। ভোট এলেই রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা চলতে থাকে। এই আবহে স্বামীহারা দুই মহিলার আর্জি বন্ধ হোক সন্ত্রাস। বন্ধ হোক রক্তপাতের রাজনীতি।
২০১৩ সালের ১৫ জুলাইয়ের পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাসের জেরে খুন হয়ে যান সিপিএম কর্মী শেখ হাসমত সাগা ও তৃণমূল কর্মী রাজেশ কোড়া। জামুরিয়ার মধুডাঙায় ঘটে বোমবাজি ও কুপিয়ে খুনের ঘটনা। তখনই মৃত্যু হয় ওই দুজনের। ঘটনায় নিহত সিপিএম কর্মী শেখ হাসমত সাগার স্ত্রী মনোয়ারা বিবি এবং তৃণমূল কর্মী রাজেশ কোড়ার স্ত্রী গীতা কোড়া পড়েন অথৈ জলে। সেই রক্তাক্ত দিনের পরে ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। তবু ভোট এলেই বুক কাঁপে মনোয়ারা বিবি ও গীতা কোড়ার।
মনোয়ারা বলেন, 'খবরে দেখি ভোট এলেই লোক মরে। স্রেফ ক্ষমতা দখলের জন্য এই রক্তপাত বন্ধ হোক। কত মানুষের সংসার ভেসে যাচ্ছে এই করে'। অন্যদিকে গীতা কোড়ার আবেদন, 'রাজনৈতিক বা অন্য কোনও কারণেই খুন হোক না কেন, খুনটা বন্ধ হোক। ভোটে হার-জয়টা শেষ কথা নয়। মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি'।
তিনি জানান যে তাঁর পরিবার পাশে না থাকলে তাঁদের কী অবস্থা হতো সেটা ভাবলেই ভয় হয়। দল পাশে থাকেনি বলে অভিযোগ তুললেন। মন্ত্রী মলয় ঘটককে কাজের জন্য বারবার বলা হলেও আশ্বাস ছাড়া কিছুই জোটেনি। অবশেষে তাঁর বেকার দেওর তাঁর ও দুই বাচ্চার দায়িত্ব নেয়।
কী হয়েছিল ২০১৩-র ভোটের দিন?
মনোয়ারা বিবি ছিলেন সিপিএম প্রার্থী। সিপিএমের অভিযোগ, ভোটের দিন সকালে চুরুলিয়া পঞ্চায়েতের মধুডাঙা বুথের বাইরে তাদের প্রার্থী মনোয়ারার স্বামী হাসমতকে লক্ষ করে বোমা ছোড়ে তৃণমূল। মৃত্যু হয় হাসমতের। ওই একই জায়গায় এক ঘন্টার মধ্যেই ‘পাল্টা খুন’। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম কর্মীরা রাজেশ কোড়াকে মাথায় কুড়ুল মেরে খুন করে। যদিও, দুই পক্ষই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে।
এই ঘটনার পর রাজেশের স্ত্রী গীতার পাশে দাঁড়ায় তৃণমূল। আসানসোল পুরনিগমের ভোটে রাজেশের স্ত্রীকে তৃণমূল টিকিট দেয় ২০১৫ সালে। গীতা কাউন্সিলরও হয়েছিলেন। গীতা জানান যে রাজেশের মৃত্যুর সময় তাঁর দুই ছেলে রৌণক ও মানবের বয়স ছিল পাঁচ ও তিন বছর। এখন তারা নবম ও সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। তবে আর্থিক অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছে গীতাকে। পাশে রয়েছে দুই দেওরের পরিবার এবং রাজেশের জেঠিমা।
আবার ওই পঞ্চায়েত ভোটে মনোয়ারা জেতেন। কিন্তু সেই সময়ে ছেলে জুলফিকরের বয়স ১০ বছর আর মেয়ে জুলেখা সবে ১ বছর। তাই স্বামীর মৃত্যুতে জয়ের আনন্দ ছিল না। বরং, অথৈ জলে পড়েন তিনি। দলের তরফ থেকে কোনও কোনও মাসে ২০০০ টাকা সাহায্য করা হয়েছিল। বর্তমানে তাঁর বাপের বাড়ির আর্থিক সাহায্যে কোনও প্রকার সংসার চলছে। হাসমত কাজ করতেন একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থায়। স্বামীকে হারিয়ে দুই মহিলার জীবনই অনেকটা বদলে গিয়েছে। মানুষের জীবনের মূল্য অনেক এই বোধ যেন রাজনৈতিক দল বুঝতে পারে এটাই আর্জি মনোয়ারা ও গীতার।
/anm-bengali/media/agency_attachments/IpyOoxt2orL626OA8Tlc.png)
Follow Us