৬৭টি শিশুর জীবন বিপন্ন! একজন স্পার্ম ডোনারের বিরল জিন কাণ্ডে কাঁপছে ইউরোপ

ডেনমার্কের এক স্পার্ম ডোনারের শুক্রাণু থেকে জন্মানো শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বিরল ক্যানসারে। সামনে এল ভয়াবহ জিনগত মিউটেশনের তথ্য। উঠছে নতুন নীতির প্রশ্ন।

author-image
Debapriya Sarkar
New Update

নিজস্ব সংবাদদাতা : ২০০৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এক ডেনিশ স্পার্ম ডোনারের শুক্রাণু ব্যবহার করে ইউরোপের আটটি দেশে জন্ম নিয়েছে অন্তত ৬৭টি শিশু। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে দশজন ইতিমধ্যেই ক্যানসারে আক্রান্ত। আরও ১৩ জন শিশুর শরীরে রয়েছে এমন একটি জিন মিউটেশন, যা ভবিষ্যতে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

publive-image

এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান জেনেটিক্সের বার্ষিক সম্মেলনে। ফ্রান্সের রুয়ান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বায়োলজিস্ট এডউইজ ক্যাসপার জানিয়ে দেন, ওই ডোনারের শরীরে ছিল TP53 নামের একটি জিন মিউটেশন, যা Li-Fraumeni syndrome-এর সঙ্গে সম্পর্কিত—একটি বিরল জিনগত রোগ যা মানুষের ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

এই মিউটেশন সেই সময়কার সাধারণ জেনেটিক স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে ধরা পড়েনি। ডোনার ছিলেন সুস্থ, এবং তাঁর শুক্রাণু বিতরণ করা হয় শুধুমাত্র ডেনমার্কের একটি প্রাইভেট স্পার্ম ব্যাংকের মাধ্যমে। কিন্তু কয়েক বছর পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকদের চোখে পড়ে, ওই ডোনারের বাচ্চাদের মধ্যে অনেকেই নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন—যেমন ব্রেন টিউমার, লিউকেমিয়া, হজকিন ও নন-হজকিন লিম্ফোমা।

বায়ু দূষণের জেরে পুরুষদের কমছে স্পার্ম কাউন্ট

চিকিৎসকদের মতে, এই জিনগত ত্রুটিটি যেন একটা টাইম বোমার মতো। যার ফলে আক্রান্ত শিশুদের জীবনভর পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে, নিয়মিত MRI, ব্রেন স্ক্যান, এবং আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে। যদিও সেই সঙ্গে এটাও সত্য, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়ায় অনেক শিশু বাঁচার সুযোগ পেয়েছে।

এই ঘটনায় সামনে এসেছে আরও একটি গুরুতর প্রশ্ন—একজন ডোনারের শুক্রাণু থেকে কতজন সন্তানের জন্ম হওয়া উচিত, সেই সংখ্যায় কি কোনও আন্তর্জাতিক সীমা থাকা উচিত নয়? যদিও ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক পরে নিজেরা ৭৫টি পরিবার পর্যন্ত সীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু ততদিনে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে।

স্পার্ম কাউন্ট হ্রাস যৌনজীবনে প্রভাব ফেলছে? জেনে নিন সমাধানের প্রাকৃতিক উপায়

স্পার্ম ব্যাংকের মুখপাত্র জুলি পাউলি বুটজ বলেন, “আমরা আমাদের সব নিয়ম মানার পরও এমন কিছু এড়ানো যায়নি, কারণ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের জিনের সব কটি স্ক্রিন করা সম্ভব নয় যদি আপনি না জানেন আপনি কী খুঁজছেন।” এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে আন্তর্জাতিক স্তরে স্পার্ম ডোনেশন নীতি কতটা বদলাবে।