ব্রিটেনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় সংকট ও প্রতিকার নিয়ে ৭০০-র বেশি কারি হাউসের সম্মেলন

তরকারির সঙ্গে ব্রিটেনের প্রেমের সম্পর্ক কয়েক শতাব্দী পুরানো। কিন্তু এখন ব্রিটেনের সমস্ত জনপ্রিয় কারি হাউসগুলো প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে।

New Update
,ন্মন

জুয়েল রাজ, লন্ডনঃ  জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের কারণে দেউলিয়া হল সেই কারি হাউস যেখানে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বিভিন্ন শিফটে কাজ করতেন। ট্রেজারিতে প্রায় ২০ হাজার স্বাক্ষর সম্বলিত পিটিশন থাকা সত্ত্বেও রেস্টুরেন্ট শিল্পে উদ্বেগ সৃষ্টি করে চলেছে ২০ শতাংশের বেশী 'ভি.এ.টি.' হারের চাপ।  ক্রমবর্ধমান এনার্জি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস ইত্যাদি জ্বালানি বিল) ও  খাদ্য উপকরণের খরচ, কর্মী নিয়োগ এবং ট্রেন ধর্মঘটের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ব্রিটেনের  কারি শিল্প।  সরকার মনে করে কোভিড শেষ হয়ে গেছে এবং রেস্টুরেন্ট শিল্পে এরইমধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসা উচিত। কিন্তু বাস্তবে ব্যবসা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অনেক দূরে। কারি শিল্পের এসব সংকট ও প্রতিকার নিয়ে লন্ডনে  অনুষ্ঠিত হয়েছে কেইটরিং সার্কেলের বিজনেস কনফারেন্স ও গালা ডিনার। যুক্তরাজ্য থেকে প্রায় ৭০০ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী  ৬ষ্ঠ কেইটরিং সার্কেল সম্মেলনে ৬ই জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত লন্ডনের মেরিডিয়ান গ্র্যান্ডে জড়ো হয়েছিলেন। 

আলোচনায় বর্তমান শক্তময় পরিস্থিতির কথা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে। উঠে আসে নানা উদ্বেগের কথা। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, ২০ শতাংশের বেশী 'ভি.এ.টি.', উচ্চ সুদের হারের পাশাপাশি ব্যয়বহুল জ্বালানি বিলের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রেস্টুরেন্ট মালিকরা।  ইউক্রেন/রাশিয়া যুদ্ধের পর সাপ্লায়ার কস্ট (পণ্য সরবরাহকারীর খরচ) বেড়ে যাওয়ায়, রান্নার তেল, পেঁয়াজ এবং চালের মতো প্রধান খাদ্য-পণ্যের রুদ্ধশ্বাস মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগজনক হারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক রেস্টুরেন্ট। এখনও মহামারী ও ব্রেক্সিটের প্রভাব অনুভব করছে এই শিল্প। টিকে থাকার কঠিন লড়াইয়ের মধ্যেও এই সেক্টরে ১০০ হাজার কর্মী নিয়োগ এবং ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ৪ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অবদান অব্যাহত আছে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ব্রিটিশ মূলধারার জনপ্রিয় টিভি প্রেজেন্টার, সামান্থা সাইমন্ডস।

২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কারি ইন্ডাস্ট্রির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার লন্ডনের মেরিডিয়ান গ্রান্ডে ছিল ক্যাটারিং সার্কেলের আয়োজনে ৬ষ্ট বিজনেস কনফারেন্স। প্রায় ৮০ টি রেস্টুরেন্টের মাঝে চুলচেরা বিশ্লেষণ আর যাচাই বাছাই শেষে জমজমাট এই আয়োজনে তিনটি সেরা রেস্টুরেন্টকে দেওয়া হয় স্টার শো এওয়ার্ড। বিচারকদের বিবেচনায় শীর্ষ স্থান অধিকারী ক্রিয়েটিভ ডিশ 'ম্যাক্রোল থ্রী'-র বদলে, স্টার অফ দা সিজন এওয়ার্ড অর্জন করে কেমব্রিজের তাজ তান্দুরি রেস্টুরেন্ট। অনুষ্ঠানে শেফ জুলাল সৈয়দের হাতে ষ্টার শো উইনার অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। শীর্ষ তালিকার পরবর্তী দুই ডিশ স্যামন এন্ড ক্যালামারী ও কাসুন্দি স্ক্যালপের জন্য ফাইনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয় যথাক্রমে শোরডিচ ফিশ এন্ড চিপসের জসিম হুসাইন এবং ভাইসরয় অফ উইন্ডসর রেস্টুরেন্টের তাজওয়ার সেলিমের হাতে।

ক,ম্ন

শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কেইটরিং সার্কেলের ফাউন্ডার মোহাম্মদ আব্দুল হক। তিনি মনে করেন অর্থনীতির সংকটময় সময়ে এই বিজনেস কনফারেন্স কারি ইন্ডাস্ট্রির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। তিনি বলেন, "আমাদের জরুরীভাবে সরকারের কাছ থেকে সাহায্য দরকার। জীবনযাত্রার সংকট ('কস্ট অফ লিভিং ক্রাইসিস') কারি সেক্টরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের রেস্টুরেন্ট যারা এরমধ্যে নানা ভাবে ব্রেক্সিট এবং কোভিডের কারণে সৃষ্ট সংকটের শিকার তাদের জন্য এটি একটি কঠিন সময়। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এবং জ্বালানি বিলের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি, বিশেষ করে ২০% 'ভি.এ.টি.' হার, এসব কঠিন সংকটের মুখে ব্যবসাগুলো চালু রাখাই দুষ্কর। আমাদের রেস্টুরেন্ট শিল্পের তরফ থেকে আমরা ক্রমাগত চেষ্টা করছি পরিবেশ বান্ধব ইকো-হেলদি প্যাকেজিং, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং খরচ কমানোর উপায় অনুসন্ধানের উপর ফোকাস করে বেঁচে থাকার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক থাকার সমাধান খুঁজে বের করার। কিন্তু জরুরিভাবে আমাদের সহায়তা দরকার।"

প্রেজেন্টার সামান্থা সাইমন্ডসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল কারি ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা। এসময় ক্ষুদে বার্তায় কারি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন লর্ড কিরণ বিলিমোরিয়া সিবিই, শ্যাডো সেক্রেটারি জোনাথন রেনল্ডস, থেরেসা ভিলিয়ার্স এমপি, মিশেলিন স্টার শেফ জন বার্টন-রেস। 

অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে চ্যানেল এস এর চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি শুভেচ্ছা জানান, এসময় টেলিভিশনের ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল, এম ডি তাজ চৌধুরীও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। 

কনফারেন্স-এ অনলাইন জায়ান্টের বিকল্প সমাধান হিসেবে ডায়িননেট অনলাইন সিস্টেম ব্যাবহার করে নিজস্ব বিজনেস ব্র্যান্ডিং-এর মাধ্যমে যারা ব্যবসায় সাফল্য অর্জন করেছেন তাদের মধ্য থেকে সেরা ৫ জনকে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে রেস্টুরেন্ট সাকসেস স্টোরি ভলিউম থ্রির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রেসক্লাব প্রেসিডেন্ট এমদাদুল হক চৌধুরী এবং বিবিসিডব্লুইর প্রেসিডেন্ট দিলারা খান।

অনুষ্ঠানে অংশ নেন ব্রিটিশ এমপি আফসানা বেগম, বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাঈদ মুনা তাসনিম সহ ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টরা এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা। এসময় অতিথিরা কারি ইন্ডাস্ট্রির এই কঠিন সময় নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার আশ্বাস দেন। জমকালো এই আয়োজনে কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।