ডিজিটাল বাংলাদেশে অ্যানালগ আওয়ামী লীগ

ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশের নামে একদল ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠী তৈরী করে চলছে রাষ্ট্র। এবং সেটি কোনভাবেই তাদের দোষ নয়। আজ ২০২৩ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর ডিজিটাল বাংলাদেশেই উদযাপিত হয়েছে।

New Update
Awami-League-logo-Daily-Bangladesh-2206230341

ফাইল ছবি

জুয়েল রাজ, লেখক-সাংবাদিক-কলামিস্ট: ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কথাটি প্রথম সামনে আসে ২০০৮ সালে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ পরিণত হবে। 

আজ ২০২৩ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর ডিজিটাল বাংলাদেশেই উদযাপিত হয়েছে। শুরুর দিকে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ কথাটি এক ধরণের হাস্যরসের বিষয় ছিল।  পত্রিকায় তখন নানা রকম ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়েছে। কিন্তু আজ সেসব আর গল্প নয়।সব এখন ইতিহাস। শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন বাস্তবেই করে দেখিয়েছেন।  

ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার চারটি সুনির্দিষ্ট বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছিল।  মানব সম্পদ উন্নয়ন, জনগণের সম্পৃক্ততা, সিভিল সার্ভিস এবং দৈনন্দিন জীবনের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার।  প্রথম তিনটি বিষয়ে সরকারের জায়গা থেকে আওয়ামী লীগ শতভাগ সফল। সরকারি পরিষেবায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। কিন্ত দৈনিন্দন জীবনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে দল হিসেবে পিছিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। সেখানে রাজত্ব করছে আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিনোদন মাধ্যম সব তাদের দখলে। কিছু গণমাধ্যমের মালিকানায় সরকার সমর্থিত মানুষজন থাকলে ও  কর্মীদের অধিকাংশই মূলত আওয়ামী বিরোধী শিবিরের লোকজন। সেটি সংবাদ প্রকাশের ধরণ সমূহ দেখলেই ধারণা পাওয়া যায়। এর সর্বশেষ উদাহরণ যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর বিবিসি বাংলা থেকে শুরু করে বহু মূল ধারার গণমাধ্যম তার নামের আগে তার অপরাধের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। কোথাও রাজাকার, মানবতা অপরাধী, কিংবা দন্ডপ্রাপ্ত আসামী এই জাতীয় কোনও শব্দই ব্যবহার করেনি। একজন স্বভাবিক ধর্মীয় নেতা হিসাবেই প্রচার করেছে। সাংবাদিক হিসাবে বেশ কিছু গ্রুপে যুক্ত থাকার সুবাদে দেখছি,  সাঈদীর মৃত্যুর পর সেই সব গ্রুপগুলোতে প্রবাসী, দেশী সাংবাদিকদের শোক আর হাহাকার। আমি অবাক হয়ে শুধু দেখে গেছি, সেই প্রেম এবং শোক। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে যাত্রা করেছে বাংলাদেশ। সেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। কিন্ত সেই স্মার্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই  সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত। 



ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা বা পথচলা

সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন  CRI আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আর আছে সরকারিভাবে অ্যাসপায়ার টু ইনোভেশন A2I। আইসিটি বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইউএনডিপির সংযুক্তিতে তৈরি একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এজেন্ডার একটি বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবিক কার্যক্রম গ্রহণে কাজ করছে। A2I পাবলিক সেক্টরের ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করতে পাবলিক সার্ভিস উদ্ভাবনের সুবিধা এবং সুবিধা দেয়। 

অন্যদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিনটিকে স্মরণ করে বিগত কয়েক বছর ধরে আয়োজিত হয়ে আসছে ‘জয় বাংলা কনসার্ট’। একদিনের এই কনসার্টে নগরকেন্দ্রিক তরুণ প্রজন্ম একদিন গান বাজনা উপভোগ করেন। শুধু মাত্র ৭ই মার্চের ভাষণের জন্য তারা সেখানে সমবেত হয় না। তারা সমবেত হয় সেখানে উল্লাস করতে। কিন্ত যে কোটি কোটি তরুণ তরুণী এর বাইরে রয়ে গেছে তাদের কাছে পৌঁছানোর কোনও মাধ্যম কি তৈরী হয়েছে? শুধু ৭ মার্চের ভাষণ নয়, বঙ্গবন্ধুর  অসমাপ্ত  আত্মজীবনী হতে পারত সেই বিশাল ক্যানভাস, তরুণ প্রজন্মকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী  প্রকাশ পরবর্তী সময়ে  খুব প্রচার প্রচারণা হয়েছিল। কিন্ত  এর পর আর কোন উদ্যেগ চোখে পড়েনি। 

অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান  আছে  সুচিন্তা ফাইন্ডেশন , যারা মূলত গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এরা কিছু সেমিনারেই সীমাবদ্ধ। এর বাইরে উল্লেখ করার মত কিছু আসলেই নাই। এর মাঝেই সীমাবদ্ধ আওয়ামী লীগ।  হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন মন্ত্রী আছেন যারা সরব আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন। বাকিরা এসবের ধারে কাছে ও নাই। এসব বুদ্ধিভিত্তিক  সংগঠনের নামও হয়তো সাধারণ মানুষ জানে না। কিংবা তারা কি কাজ করে তাও জানে না। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নেতা কর্মীরা ও এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচিত না। তাদের কাছে  এর চেয়ে বেশী পরিচিত পিনাকী, ইলিয়াস, কনক গং।  

কিন্ত বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা কি? 

সরকারি তথ্যমতে, ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ইন্টারনেট ব্যবহার করত মাত্র ০.২৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে আজকে বাংলাদেশের ৭৭.৫৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী সুবিধা গ্রহণ করে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মোবাইল সিম ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ১৯ মিলিয়ন আর সেখানে ২০২৩ সালে মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮৩.৫ তিন মিলিয়ন। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ আমলে ডিজিটাল সকল সুবিধা পেলেও ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সবথেকে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে এই আওয়ামী লীগই। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে কিশোর কিশোরী কিংবা শিশুদের ও নিত্যসঙ্গী এখন মোবাইল, ট্যাব, আইপড। আর সেখানে ইউটিউব এবং  ফেইসবুক  সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। আর এই দুই জায়গায় দল হিসেবে  আওয়ামী লীগের উপস্থিতি  খুবই সামান্য। বরং আওয়ামী বিরোধী প্রচারকগণ একেকটি  প্রতিষ্ঠান  হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। 

এইসব গুজব, মিথ্যা প্রচারণা অনেকেই আমলে নেন না। আমরা হেসে উড়িয়ে দেই। কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে,  মানুষের মনো জগতে ব্যাপক ভাবে প্রভাব বিস্তার করে এইসব আলোচনা। নানা রকম সত্য মিথ্যার মিশেলে তাদের নাটকীয় উপস্থাপনা কিংবা চটকদার শিরোনাম সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে ব্যাপক ভাবে। এর বাইরে মোবাইল টিভি বা অনলাইন টিভিগুলোর দৌরাত্ম্য  আর ও ভয়ানক।  এইসব মাধ্যমে আওয়ামী সমর্থক খুঁজে পাওয়া খুবই দুস্কর। আর যদিও বা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো কিছু মানুষ কাজ করছে, তাদের ক্ষেত্রেও  কোন ধরনের সহযোগিতার  হাত বাড়িয়ে দেয় নি আওয়ামী লীগ। বরং ফোলে ফেঁপে উঠে সাহেদ সাবরিনা পাপিয়ারা। মানবতাবিরোধী  অপরাধে আজীবন দন্ডপ্রাপ্ত  দেলোয়ার  হোসেন সাঈদীর  মৃত্যুর পর সেই দৃশ্যপট  আর ও প্রকট হয়ে উঠেছে,  অনেকেই বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখে মাঠের রাজনীতি যাচাই করা সম্ভব নয়।কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  রাষ্ট্রীয়  ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেয়ার বহু উদাহরন আমরা বিশ্বের বহু দেশেই দেখেছি। কেউ যদি এই সময়ে এসে এসব উপেক্ষা করেন, তাহলে বোকামীই করবেন। 

অনলাইনে বাহাস বিতর্ক করে সমাধান আসে না। সমাধান হয়তো রাজনৈতিক ভাবে রাজথেই আসে। কিন্ত সেই সমাধানে জন মানসের ভাবনা, মানসিক সমর্থন একটি বড় বিষয়। উদাহরণ হিসাবে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে  অস্ত্র হাতে সরাসরি  যুদ্ধে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা ছিল  সীমিত কিন্ত রাজাকার আলবদর ছাড়া সারা দেশের সাধারণ মানুষ তাদের সাথে ছিল। এই সাথে থাকাটা ব্যাপক ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে । সাধারণ মানুষ সাথে না থাকলে  বিজয় লাভ করতে কত ৯ মাস লাগত আমরা জানি না। ঠিক তেমনি জনমনে বা  এই ডিজিটাল প্রজন্মের বিশ্বাস এবং মতামত গ্রহণ করার ক্ষেত্র তৈরী করে  দিচ্ছে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো। 

ব্রিটেনের ব্রেক্সিটের সময় দেখেছি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম   কিভাবে মানু্ষকে প্রভাবিত করেছে পক্ষ অবলম্বন করতে । আজ ব্রেক্সিট  পরবর্তী  সময়ে যারা ব্রেক্সিট এর পক্ষে ছিল তারা অনুধাবন  করছে এবং স্বীকার করছে তারা ভুল করেছিল। নিকট অতীতে বাংলাদেশে গণজাগরণ মঞ্চ,  আরব বসন্ত সহ বহু ঘটনা আছে। 

দেলোয়ার  হোসেন সাঈদীর মৃত্যুর পর তার অপরাধের রেফারেন্স হিসাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  আইনের  অধ্যাপক  আসিফ নজরুল এবং অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত   সাংবাদিক   ফজলুল বারীর দুইটা লেখা অনেকেই শেয়ার করছেন, এবং ব্যাপক ভাবে আলোচিত ও হচ্ছে। এর বাইরে সাঈদীর অপরাধ নিয়ে অনলাইনে ঘাটাঘাটি করলে খুব বেশী কিছু পাওয়া যায় না। আমি নিজেই গুগোলে বহুভাবে চেষ্টা করেছি।  খুব বেশী তথ্য নেই।  কেউ যদি অনলাইন থেকে তথ্য নিতে চায়, সেখানে  সাঈদীকে ইসলামী নেতা  হিসাবে পাবে। এক সময় বিভিন্ন ব্লগে সাঈদীর কুকর্ম নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি ছিল। ব্লগারদের খুনের পর ব্লগ গুলোই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।  তাই অনলাইনে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকেই সাঈদীকে  ইসলামী চিন্তাবিদ  মনে করে ,  অন্য ভয়, জামায়াত বা শিবির এমন ভাবে তাদের শক্তি প্রদর্শন করেছে বাংলাদেশে , সাধারণ মানুষ ঝুঁকি  নিতে চায় না। নিজেদের কে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। তারা মূলত নেতাদের  জন্মদিনের শুভেচ্ছা কিংবা নেতার দেয়া ছবিতে সহমত ভাই দিতেই বেশী ব্যস্ত। হাজার হাজার ছাত্রলীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক  সাঈদীর মৃত্যুতে শোকাভিভূত  হয়েছেন। 

এর কারণ খুব পরিকল্পিত ভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  ব্যবহার করে সুক্ষভাবে ধর্মের সাথে রাজনীতি  মিশিয়ে  বিগত ১০ বছর প্রচার প্রচারনা চালিয়ে মানুষের মনোজগতে এক ধরণের দোদুল্যতা তৈরী করেছে। তাই ছাত্রলীগ করা ছেলেটিও ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর  ছবি শেয়ার করে, রাজাকার দেলোয়ার  হোসেন সাঈদীর  মৃত্যুতে ও শোক প্রকাশ করে। 

অনলাইনের এই যুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রচন্ড ভাবে পিছিয়ে আছে।আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অনেক কমিটি উপকমিটি আছে৷ বড় বড় এম পি  নেতারা সেসব কমিটির সদস্য, যাদের হয়তো একটি ফেইস বুক আইডিও নাই। কিংবা থাকলে ও বেতনধারী কেউ সেই আইডিতে নেতার ছবি আপলোড করা ছাড়া আর কিছুই করে না। 

জামায়াত ইসলাম কিংবা তাদের সমর্থক গণ এত ব্যাপক পরিমাণে সরব  যে, তাদের কে প্রশ্নবিদ্ধ করে, কিংবা তাদের বিরুদ্ধে যায়  এমন সত্য প্রকাশ করলে ও তারা সেখানে   জঘন্যভাবে গালি গালাজ শুরু করে  করে, স্ত্রী  সন্তান নিয়ে আজেবাজে অশ্লীল  মন্তব্য শুরু করে। নানা ধরণের   হুমকি ধামকি দিয়ে ঐ ব্যাক্তিকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারে বাধ্য করে ফেলে।  অথবা একযোগে তার আইডিতে রিপোর্ট  করে, ফেইসবুক  থেকেই তাকে হারিয়ে যেতে বাধ্য করে। 

সামনে নির্বাচন, তাই  ধর্মের মোড়কে  মিথ্যাচার নিয়ে নামে বেনামে  সেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে এই গোষ্ঠী। সাধারণ মানুষের ভিতর আবেগ তৈরী করে সেই আবেগ দিয়েই প্রভাবিত করবে তাঁদের।  সেই  আন্তর্জালিক  যুদ্ধে আওয়ামী লীগ এর চেয়ে হাজার গুণ বেশী সুবিধা নিবে তারা। ২০১৩ সাল থেকেই সেটা প্রমাণ হয়ে আসছে। 



লন্ডনে  ডাক্তার দেখাতে গিয়ে   ওয়েটিং রুমে অপেক্ষায় আছি। বাঙালি  অধ্যুষিত  এলাকার কারণে বেশীর ভাগ অপেক্ষমান রোগী ও বাঙালি। এক কোনায় ৪/৫ জন মহিলা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। একজন  বয়স্ক মহিলা মোটামুটি  ভাষণের মতই দিয়ে যাচ্ছেন বলা যায়। লন্ডনে যারা মিথ্যা বলে সরকারের ভাতা খায়৷ তারা হালাল হারাম খুঁজে কেন?  আমি আলাপ শুনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম।তাই আগ্রহ নিয়ে শুনছিলাম। ভদ্রমহিলার কথাবার্তা।  

 

প্রসঙ্গক্রমে তাদের আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ  চলে আসে, তিনি এক পর্যায়ে বলেন তারেক জিয়া বসে আছে লন্ডনে,  এইখানে বসে নির্দেশ দেয়, দেশের মানুষ বেকুবের মত মিছিল মিটিং করে মারামারি  কাটাকাটি  করে, আবার শেখ হাসিনার ছেলে বসে আছে দুবাইয়ে, আমেরিকায় নাকী তাকে ,কতে দিচ্ছে না সরকার। তো আমি অনেক ক্ষণ  শুনে বললাম চাচী এইটা কোথায় পেলেন?  শেখ হাসিনার ছেলেকে আমেরিকা ঢুকতে দিচ্ছে না। তিনি জানালেন ফেইসবুকে ইউটিউবে নাকি দিছে এই সব। এই  ঘটনাটি  হয়তো খুবই ছোট,  কিন্ত এর প্রভাব কিন্ত ব্যাপক।  সেখানে তারেক রহমান এবং সজীব ওয়াজেদ জয়কে একই ভাবে চিন্তা করছে যে, দুইজনই দূর্নীতির সাথে জড়িত। 

ডিজিটাল  স্মার্ট বাংলাদেশের নামে একদল ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠী  তৈরী করে চলছে রাষ্ট্র। এবং সেটি কোনভাবেই তাদের দোষ নয়। যেখানে  সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য কিংবা  মুক্তিযুদ্ধ গৌণ হয়,  ধর্মীয় প্রচার প্রচারণা মুখ্য হয়, রাজাকার  আল বদর ধর্মীয় নেতার খেতাব পায়  সেই দেশে, এই প্রজন্মই গড়ে উঠবে। 

আমি অনেক মুক্তিযোদ্ধা কে প্রশ্ন করেছি, যুদ্ধ করে, জীবন বাজি রেখে একটি দেশ স্বাধীন করলেন,  সেই দেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা এত শক্তিশালী ভাবে ফিরে আসল কেমন করে? 

তাঁদের  প্রায় সবার উত্তরই ছিল , দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা ভেবেছি আমাদের কাজ শেষ।আমরা ঘরে ফিরে গিয়েছি।  বাকী কাজ দেশ করবে। কিন্ত বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শাসকগণ সেই কাজটি ভীন্ন ভাবে করেছে। তখন আর আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি সামর্থ ও ছিল না। আমার মনে হয়  ঠিক একই অবস্থা হবে এই ডিজিটাল এর ক্ষেত্রে ও।  শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে দিচ্ছেন, আর সেখানে রাজত্ব করছে সেই একই গোষ্ঠী। 

দল হিসাবে আওয়ামী লীগ এর চেয়ে অন্যন্য সংগঠন বরং বেশী ডিজিটাল। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের একটা ডাটা বেইজ পর্যন্ত এখনো তৈরী হয়নি। কর্মী সমর্থক  না হউক শুধুমাত্র মূল সংগঠন ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের পদ পদবীতে আছেন তাদের একটি তথ্যভান্ডার ও আওয়ামী লীগের নেই। মিছিল দিলে, সভা হলে হাজার হাজার মানুষ যে আসে এরা কারা?  যারা বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে যুদ্ধাপরাধী  সাঈদীর  জন্য শোক করে এরা কারা?  এদের সাথে নিয়ে কি সেই যুদ্ধে জিততে পারবে আওয়ামী লীগ?