/anm-bengali/media/media_files/2025/11/10/supreme-court-4-2025-11-10-16-46-45.jpg)
নিজস্ব সংবাদদাতা: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি যুগান্তকারী রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—ভাড়াটিয়া যত বছরই কোনো ভাড়াবাড়িতে থাকুক, পাঁচ বছর হোক বা পঞ্চাশ, ‘adverse possession’ দেখিয়ে কখনোই সেই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারবেন না।
জ্যোতি শর্মা বনাম বিষ্ণু গোয়াল মামলায় এই রায় দেয় শীর্ষ আদালত, যা ভূমির মালিকদের অধিকার রক্ষায় বড় সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আদালত বলেছে,
“ভাড়াটিয়া মালিকের অনুমতি নিয়ে বাড়িতে থাকেন। তাই তাঁর ক্ষেত্রে adverse possession প্রযোজ্য নয়।”
এই স্পষ্টীকরণ বহু বছরের বিভ্রান্তি ও মামলা-মোকদ্দমার অবসান ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে রায়টি নিয়ে দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে—মালিকরা খুশি, কিন্তু বহু ভাড়াটিয়া রায়টিকে কঠোর বলে মনে করছেন।
মামলার পটভূমি
মামলাটি শুরু হয় দিল্লিতে। জমির মালিক জ্যোতি শর্মা তাঁর ভাড়াটিয়া বিষ্ণু গোয়ালকে উচ্ছেদের মামলা করেন। গোয়াল ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বাড়িতে থাকছিলেন।
গোয়াল দাবি করেন—
১৯৮০-এর দশক থেকে তিনি অবিরাম বসবাস করছেন, ভাড়া বন্ধ করেছেন, মালিক তেমন ব্যবস্থা নেননি—তাই Limitation Act, 1963 অনুযায়ী তিনি মালিক হয়ে গেছেন।
কিন্তু জ্যোতি শর্মা জানান, গোয়াল শুরু থেকেই ভাড়াটিয়া, অর্থাৎ permissive possession, তাই তিনি কখনোই “adverse possession” দাবি করতে পারেন না।
দিল্লি হাই কোর্ট প্রথমে গোয়ালের পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি জে. কে. মহেশ্বরী ও কে. বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ সেই রায় বাতিল করে শর্মার পক্ষে চূড়ান্ত রায় দেন।
সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি
আদালত পরিষ্কার জানায়—
ভাড়াটিয়া মালিকের অনুমতি নিয়েই থাকেন
তাই তাঁর দখল কখনোই “hostile possession” হয় না
কেবল সময় পেরিয়ে গেলেই ভাড়াটিয়া মালিক হয়ে যেতে পারেন না
এর জন্য দরকার “animus possidendi”—অর্থাৎ মালিকের স্বার্থের বিরুদ্ধে দখল নেওয়ার অভিপ্রায়
ভাড়ার ক্ষেত্রে এই অভিপ্রায় কখনোই থাকে না
আদালত বলবন্ত সিং (১৯৮৬) এবং রবিন্দর কৌর (২০১৯)–সহ একাধিক পুরনো রায়ের উল্লেখ করে বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে দেয়।
ভারতীয় আইনে Adverse Possession-এর ইতিহাস
প্রচলিত ইংরেজ আইনের ভিত্তিতে ভারতে এই ধারণা আসে। উদ্দেশ্য ছিল—
মালিকেরা জমি অবহেলা করলে শাস্তি
জমিকে কাজে লাগানো ব্যক্তিকে পুরস্কার
সময়ের সঙ্গে এই আইন বহুবার পরিবর্তিত ব্যাখ্যা পেয়েছে—
সরকারি খাস জমিতে বসবাসকারীদের কখনো সুবিধা
কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে কঠোরতা
1902 সালে Secretary of State vs.কৃষ্ণমণি গুপ্ত মামলায় আদালত জানিয়ে দেয়—
অনুমতি নিয়ে থাকা কেউ কখনো মালিক হতে পারে না।
এ রায় সেই নীতিকেই আরও শক্তিশালী করল।
মালিকদের প্রতিক্রিয়া
দেশব্যাপী জমির মালিকেরা রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
All India Landlords Association বলেছে—
“অবশেষে ন্যায়বিচার। বহু বছর ধরে ভাড়াটিয়াদের থেকে সম্পত্তি ফেরত পাওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।”
রিয়েল এস্টেট সংস্থা CREDAI জানিয়েছে—
বিনিয়োগ বাড়বে
পুনর্নির্মাণের রাস্তা খুলবে
বড় শহরে হাজারো পরিত্যক্ত বাড়ি আবার ব্যবহারযোগ্য হবে
ভাড়াটিয়াদের উদ্বেগ
ভাড়াটিয়া সংগঠনগুলো রায় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
National Tenants Union-এর মীরা সিং বলেছেন—
“এটি শহরের গরিব মানুষের বাস্তবতা বুঝতে ব্যর্থ।”
তাঁর দাবি—
ভাড়া শহরে মানুষের আয়ের ৪০–৫০% খেয়ে নেয়
বহু ভাড়াটিয়া বাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে নিজেরাই খরচ করেন
মালিকেরা বহু বছর গা–ঢাকা দিয়ে থাকেন
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বলছে—
সিনিয়র সিটিজেন, বিধবা, নিম্ন-আয়ের ভাড়াটিয়ারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
কিছু সংগঠন আইন পরিবর্তনের দাবি তুলেছে—
Limitation Act-এ বিশেষ সুরক্ষা
আধুনিক Rent Control Act
মামলার প্রভাব: অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজ
রায়টি সম্পত্তি বাজারে স্বচ্ছতা আনবে
১.১ কোটি পরিত্যক্ত ভাড়াবাড়ি বাজারে ফিরতে পারে
তবে শহরে উচ্ছেদের হার বাড়তে পারে ২০% পর্যন্ত
নারীরা, যারা অনানুষ্ঠানিক চুক্তিতে থাকেন, বিশেষ সংকটে পড়তে পারেন
রাজনৈতিকভাবে—
বিজেপির সমর্থকরা বলছে—এটি “property rights” শক্তিশালী করবে
কংগ্রেস ও বামদল বলছে—রায়টি “গরিববিরোধী”
রাষ্ট্রভেদে প্রভাব
মহারাষ্ট্র: পাগড়ি সিস্টেমে বড় পরিবর্তন
পশ্চিমবঙ্গ: পুরনো ভাড়া আইন বদলাতে হতে পারে
তামিলনাড়ু: আধুনিক ব্যবস্থা থাকায় প্রয়োগ সহজ
উত্তর ভারত: প্রাথমিকভাবে মামলা বাড়বে
শেষকথা
সুপ্রিম কোর্টের রায় একদিকে মালিকের অধিকারকে শক্তিশালী করল।
অন্যদিকে লাখো দীর্ঘমেয়াদি ভাড়াটিয়ার মনে বাড়তি অনিশ্চয়তা তৈরি করল।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
ভারতের দ্রুত নগরায়ণের প্রেক্ষিতে ভাড়া আইন, সস্তা আবাসন প্রকল্প এবং দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি—এসব ক্ষেত্রে সরকারের এখন বড় ভূমিকা নিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট বার্তা—
“অনুমতি দিয়ে থাকার সুযোগ দেওয়া মানে কখনোই স্থায়ী মালিকানা নয়।”
/anm-bengali/media/agency_attachments/IpyOoxt2orL626OA8Tlc.png)
Follow Us