নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পরবর্তী সমাজ

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পরবর্তী সমাজ ও সুভাষচন্দ্র বসুর মৌলিক চিন্তা।

author-image
Aniket
New Update
das

File Picture

সজল কান্তি মণ্ডল, প্রধানশিক্ষক, লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠ, কোল ৬৪:

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারতবর্ষকে স্বাধীন রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তরের মুহূর্তে পশ্চিমের সমাজতত্ত্ববিদরা ঘোরতর সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন - তাঁদের বক্তব্য ছিল এই স্বাধীনতা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না । ভারতীয় সমাজে নেমে আসবে  গভীর সংকট ।বিপন্ন হবে সার্বভৌমত্ব ।এই সন্দেহকে অলীক প্রমাণ করে স্বাধীনতা লাভের প্রায় ৮০ বছর পরেও স্বমহিমায় বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে ভারতবর্ষ। অথচ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অব্যবহিত পরে ভারতবর্ষের  প্রায় সঙ্গে কোরিয়া(১৯৪৫),ইন্দোনেশিয়া(১৯৪৫)  ভিয়েতনাম(১৯৪৫)  সিরিয়া (১৯৪৬)জর্ডন(১৯৪৬) পাকিস্তান (১৯৪৭)বার্মা(১৯৪৮) শ্রীলঙ্কা(১৯৪৮) ইজরায়েল(১৯৪৮) লাউস(১৯৪৯) লিবিয়া(১৯৫১) কম্বোডিয়া (১৯৫৩)সুদানের(১৯৫৬) মত যে ১২-১৩ টি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল তাদের রাজনৈতিক অবস্থা বারবার সমাজ জীবনকে বিব্রত করেছে। কোন না কোন সময় সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রচলিত শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে অপর কোন অভ্যন্তরীণ শক্তি ।অথচ ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অবিচল স্বতঃস্ফূর্ত আনুগত্য রয়েছে দেশের শাসন ব্যবস্থার প্রতি । এই বিপরীত স্বকীয়তা বিস্মিত করেছে আধুনিক সমাজবিজ্ঞানীদের ।আসলে স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষের এই ভাস্বর আত্ম প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচিত হয়েছে ১৯৪৭ সালের বহু পুর্বে মূলত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৌলিক চিন্তায় সুসংঘটিত নিরবচ্ছিন্ন বৈদেশিক যুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ আন্দোলনে ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে রাষ্ট্র বা দেশ নিছক শাসনব্যবস্থা নয় - তা হল প্রতিটি মানুষের সর্বোচ্চ আত্ম বিকাশের সামগ্রিক পরিমণ্ডল বা মাতৃকা স্বরূপ। তাদের কাছে স্বাধীনতা আন্দোলন নিছক দাবি আদায়ের কৌশল ছিল না ।এই সকল মহামানবদের কাছে স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল দেশ মাতৃকার সেবা রূপ নিষ্কাম কর্ম যার  দ্বারা আত্ম মুক্তি লাভ সম্ভব ।স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ধারার অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের মানস পুত্র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ।সমাজ গঠনে ব্রতী সুভাষচন্দ্র আই সি এস পরীক্ষায় পাস করেও অবহেলায় ত্যাগ করলেন উচ্চ বেতনের চাকরি। ছাত্র জীবনে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনার দ্বারা বহুলাংশে  প্রভাবিত হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র ,হয়তো মনে মনে গ্রহণ করেছিলেন তার কর্মযোগ ; যেখানে স্বামীজি বলছেন নাম যশের জন্য কৃত বৃহৎ কর্ম মানব চরিত্রের প্রকৃত পরিচায়ক নয় আসল পরিচয় হলো তার প্রাত্যহিক জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সরল অকপট মানবিক পদক্ষেপ ।প্রায় সারা ভারতবর্ষের গ্রাম থেকে নগর ভ্রমণ করে তিনি প্রত্যক্ষ করলেন স্বামী বিবেকানন্দের আবিষ্কারকে- ভারতবর্ষে প্রকৃত প্রাণ ভোমরা নিহিত রয়েছে অগণিত তথাকথিত নিম্ন শ্রেণীর সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই সকল অজ্ঞ ,মূর্খ, দরিদ্র, শ্রমজীবী সাধারণ নিষ্পাপ ভারতবাসীর অন্তর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত হয় সততা, সারল্য ও পদার্থপরতা। কুড়ি হাজার বছরের এই ঐতিহ্য পৃথিবীর অন্য কোথাও বিরল। অথচ দাম্ভিক ইউরোপীয় জাতি এই ভারতীয় সভ্যতাকে অত্যন্ত হীন ও অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে। অন্যদিকে ভারতের উচ্চবিত্ত শ্রেনি অন্ধ অনুসরণ করে চলেছে পাশ্চাত্যকে ।এই শ্রেণী সাংস্কৃতিক ভাবে মৃত এবং "মমির মিছিল মাত্র "। উপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসক এই উচ্চ বৃত্তের ভারতবর্ষকে সামান্য তয়াক্কা করলেও চরম ঘৃণা প্রদর্শন করে শ্রমজীবি সাধারন  ভারতবাসীর প্রতি। বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র মর্মে মর্মে অনুভব করলেন স্বাধীনতা ছাড়া এই ভারতবর্ষকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। নিজের অসম্ভব ধী শক্তি ও তীব্র বুদ্ধিমত্তার দ্বারা বিশ্লেষণ করতে লাগলেন ১) সমসাময়িক আন্তর্জাতিক ঘটনা সমূহ ২) বিশ্বের স্বাধীন দেশগুলির স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট এবং ৩)ভারতবর্ষের চলমান ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতিকে । আন্তরিকভাবে যুক্ত হলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে ।ঐকান্তিক কর্মকুশলতায় অনেকাংশে সাফল্য লাভ করলেন। উঠে এলেন নেতৃত্বের প্রথম সারিতে। কিন্তু দেখলেন পাশ্চাত্যবাদী নেতারা যে স্বাধীনতা আনার চেষ্টা করছেন তাতে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটলেও ভারতবর্ষ অধিকৃত হবে ইংরেজিআনায়। কুড়ি হাজার বছরের  সাধারণ নিষ্পাপ ভারতবাসীর অবদান এই আন্দোলনে উপেক্ষিত। অহিংস আন্দোলনের নামে পাশ্চাত্য সংগঠনের ধাঁচে তাদেরকে প্ররোচিত করা হচ্ছে নিছক দাবি আদায়ে । নয়তো সশস্ত্র বিপ্লবের নামে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। এই সকল আন্দোলনের সাফল্যে অর্জিত স্বাধীনতা হয়তো দেশকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা দেবে কিন্তু তা নিশ্চিহ্ন করবে ভারতের ভিত্তিভূমিকে। দেশ নায়ক সুভাষচন্দ্র পরিণত হলেন চিন্তা নায়ক দার্শনিক সুভাষচন্দ্রে। খুঁজতে লাগলেন সেই দর্শন যা বাঁচাবে কুড়ি হাজার বছরের সভ্যতাকে আবার এনে দেবে দেশের পূর্ণ স্বাধীনতা ।সম্পূর্ণ মৌলিক চিন্তায় উদ্ভাবন করলেন নিজস্ব সংগ্রম পথ।

যে হাতে শোভা পাওয়ার কথা লেখনি সেই হাতে তুলে নিলেন আধুনিক রাইফেল ।তিনি জানতেন এই অস্ত্র বয়ে আনবে মানব শোণিত-স্রোত। লাঞ্ছিত করবে মানব সভ্যতাকে। তবুও দেশমাতৃকার পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য সুভাষচন্দ্র আত্মনিয়োগ করলেন এই মারন খেলায়। নিজেকে আধুনিক সামরিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করলেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পর্যালোচনা করলেন সমসাময়িক আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ।অনুধাবন করলেন ব্রিটিশ সামরিক শক্তির। অবস্থা দেখলেন প্রতিপক্ষের চাপে ব্রিটিশ সামরিক শক্তি সন্ত্রস্ত। অপরদিকে সারা ভারতের গ্রাম শহরে শক্তিশালী হচ্ছে সশস্ত্র বিদ্রোহ। সুভাষচন্দ্র পড়লেন দু টানায় ।কোন পথ বেছে নেবেন? প্রাথমিকভাবে সমর্থন করলেন অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিদ্রোহকে ।কিন্তু অচিরেই বুঝলেন এইভাবে সাধারণের হাতে অস্ত্র তুলে দিলে ভারত হারাবে তার প্রাণ ভোমরা- শ্রমজীবী সাধারণ নিষ্পাপ জনগণকে। স্বাধীনতা লাভ করলেও তা রক্ষিত হবে না । আজ ৮০ বছর পরে আমরা ভাবলে অবাক হই কত সুদূর প্রসারই ছিল তার এই ভাবনা। সুভাষচন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন নিজের উপলব্ধ দর্শনকে । প্রবাহমান জীবনকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন পূর্ণ সামরিক মর্যাদার যুদ্ধ ।সীমারেখা টানতে হবে সামরিক ভারতবর্ষ ও সাধারণ জনগণের ভারতবর্ষের মধ্যে। কারণগুলিও ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট

 ১) আধুনিক বিজ্ঞানে কল্যাণে ব্রিটিশ বিরোধী শক্তির হাতেও চলে এসেছে আণবিক/ পারমানবিক বোমা ,যা যুদ্ধক্ষেত্রের পরিধিকে বিস্তৃত করেছে সাধারণ গ্রাম ওনগর পর্যন্ত । সেদিন মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ভারতবর্ষের যুবশক্তি পূর্ণ সামরিক সাজে ব্রিটিশ শক্তিকে সাহায্য করলে সমসাময়িক কালের ব্রিটিশ বিরোধী ইংরেজ সাম্রাজ্যের স্বর্ণ ডিম্ব প্রসবকারি শ্বেত হংস ভারতবর্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অবশ্যই সাধারণ নগর ও বাণিজ্য কেন্দ্রে বোমা নিক্ষেপ হত । কিন্তু সুভাষচন্দ্রের ঐতিহাসিক কূট কৌশলের জন্য তা হয়নি। দুঃখ দারিদ্র্য সহ্য করেও টিকে গেছে ঐতিহ্যশালী প্রবাহমান ভারতীয় সমাজ। হয়তো সুভাষচন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত অন্যরকম হলে ভারত পরিণত হতে পারতো জাপানি বোমার ভস্মস্তূপে। ভারতে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ বা বোমা নিক্ষেপে সাধারণ নাগরিকের প্রাণহানি সবথেকে কম।

২) অন্যদিকে এইভাবে সাধারনের হাতে অস্ত্র তুলে দিলে ভারতবর্ষ হারাবে তার নিষ্পাপ অহিংস নাগরিক সমাজকে। সহিংস ভাবে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে অভ্যস্ত হলে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটলেও তার  পুনরাবৃত্তি হবে দেশীয় শাসকের ক্ষেত্রে। ফলস্বরূপ মাথা চড়া দেবে প্রবল অভ্যন্তরীন সন্ত্রাসবাদ ।যা হয়েছে উপরোক্ত ১২-১৪ টি দেশের ক্ষেত্রে।

৩) সুভাষচন্দ্র উপলব্ধি করলেন ভারতের প্রবাহমান জীবনকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন পূর্ণ সামরিক মর্যাদার যুদ্ধ। সীমারেখা টানতে হবে সামরিক জীবন ও সাধারণ মানুষের জীবনের মধ্যে। সাধারণ মানুষের ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ আন্দোলনকে জোরালো করতে হবে কিন্তু সশস্ত্র ভাবে  নয়। তীব্র গণআন্দোলনে জরজরিত করতে হবে ইংরেজ প্রশাসনকে ।একই সাথে সুশিক্ষিত সমর কুশলী যুবকবৃন্দের দ্বারা গঠিত সেনাবাহিনী সার্বভৌম দেশের তীব্র আক্রমণ আনবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উপর। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হচ্ছে রাশিয়া -জার্মান -জাপান সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করতে। বিদেশ থেকে সার্বভৌম ভারতীয় সামরিক শক্তি যুদ্ধ ঘোষণা করলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী আরো বেশি নাস্তানাবুদ হবে। ইংরেজ প্রশাসন কখনোই মূল সামরিক শক্তি ভারতের অভ্যন্তরীণ গণ আন্দোলন দমনে ব্যবহার করতে পারবে না। টিকে যাবে সাধারণ ভারতীয় সমাজ ।

সুভাষ চন্দ্রের মানস পটে হয়তো ভেসে উঠেছিল বোমা বিধ্বস্ত বা সন্ত্রাস আক্রান্ত ভারতের ছবি।কেঁদে উঠেছিল বীর সৈনিকের অন্তর। যে প্রতিজ্ঞা তিনি আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রকাশ্যে করেছিলেন হয়তো মনে মনে তা করেছিলেন এলগিন রোডের গৃহ অভ্যন্তরে। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে মনস্থির করলেন জাপান ও জার্মান যাত্রার। প্রস্তুত হলেন মহানিষ্ক্রমনের জন্য ।সারা বিশ্বের তাবড় ব্রিটিশ সামরিক ও গোয়েন্দা শক্তিকে বোকা বানিয়ে প্রচন্ড সাহস ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বার্লিন পৌঁছানোর রোমাঞ্চকর কাহিনী সকলের জানা। ১৯৪২ সালে সাক্ষাৎ করলেন হিটলার, মুসোলিনি তেজো সহ বিশ্বের সকল ব্রিটিশ বিরোধী জোটের নেতাদের সাথে। মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে দায়িত্ব নিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর। বহু গুণে বৃদ্ধি পেল বাহিনীর আয়তন ও শক্তি। প্রতিষ্ঠা করলেন স্বাধীন আজাদিন সরকার ।স্বীকৃতি মিলল জাপান ,বার্মা ,ক্রোয়েশিয়া ,জার্মান, ইটালি ফিলিপাইন, নানকিং ও মানচুং এর মত ৮টি শক্তিশালী দেশের থেকে ।স্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করলো ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ।ভারতের ইংরেজ সরকার প্রমাদ গনলেন। তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগলো ভারতের সাধারণ মানুষ কি সমর্থন করবে আজাধীন সরকার কে? করলে তো অবদমন করা দায় হবে  স্বাধীনতার আনন্দে আপ্লুত ভারতকে। শুধুমাত্র সুভাষচন্দ্রের সামরিক সিদ্ধান্তের জন্য দিশেহারা ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষে অস্ত্র ছেড়ে নেতাদেরকে বারবার আহ্বান জানাতে লাগলেন আলোচনার জন্য। প্রেরিত হল ক্রিপস প্রস্তাব ।অপরদিকে প্রবল বিক্রমে রাষ্ট্রনায়ক সুভাষচন্দ্রহুঙ্কার ছাড়লেন- দিল্লি চলো ।তার অভীষ্ট লক্ষ্য বিদেশের মাটি থেকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জন ।অর্থাৎ ভারতের অভ্যন্তরে সর্বনিম্ন রক্তপাত ঘটানো ।সুভাষ চন্দ্রের কাছে ..........ভারতবাসী আমার ভাই ।......অজ্ঞ ভারতবাসী ,মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, তার উপাস্য দেবতা ।হিরোশিমা নাগাসাকিতে রক্ত প্লাবন ঘটিয়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জয়লাভ করল ইংরেজ শক্তি ও তার দোসররা কিন্তু ভারতে ইংরেজ সরকারকে শঙ্কিত করল সুভাষের স্বপ্ন ।আজও আমাদের কাছে পরিতাপের বিষয় বিবেকানন্দের ভাব শিষ্য সুভাষচন্দ্রের অন্তর ভাবনা আমরা কিছু হলেও অনুধাবন করতে পারছি কিন্তু সমসাময়িক ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বতা কেন পারলেন না ? হয়তো আজাদ হিন্দ সরকার স্বদেশবাসীর সঠিক সহযোগিতা পেলে দিল্লি আজ আত্মপ্রকাশ করতো উন্নত দেশ হিসাবে ।অভ্যন্তরীণ ভারতের সমর্থিত আজাহিন্দ সরকার হলে মহাযুদ্ধের আলোচনা টেবিলে নিশ্চিতভাবে ডাক পেতেন তারা। কখনোই লালকেল্লায় প্রকাশ্য রাজপথে বিচারের প্রহসন হতো না। আসলে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি তা সুভাষচন্দ্রের চরিত্র ও কূটকৌশলের কাছে পরাজিত ইংরেজ জাতির সমঝোতা পত্র। এইটুকু সম্বল করেই আজও যে ভারতবর্ষ বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসাবে সমস্ত দেশের কাছে সম্মানের দাবি রাখে তার অন্যতম প্রধান কারণ ভারতবর্ষকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বোমার খোরাক না হতে দেওয়া ।এখনো সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা এলেও আমরা আমাদের ঐতিহ্যশালী মূল সামাজিক জীবনী শক্তি দিয়ে তার মোকাবেলা করতে পারি । এর অন্যতম প্রধান  কারণ মহাযুদ্ধ ভাঙতে পারেনি আমাদের সবল মেরুদন্ডকে। এখনো বেদান্ত তথা রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের চিরন্তন  ভারতীয় ভাব প্রচারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বহুত্ববাদ(PLURALISM) প্রচারে এবং প্রসার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেয় ভারতবর্ষ  । হয়তো সুভাষ চন্দ্রের মহান আত্মত্যাগের প্রভাবে  বিবেকানন্দের শূদ্রোজাগরনের উষালগ্ন সমাগত ।আজ স্বাধীনতার সগর্ভ ৭৫ বছর পূর্তির পুণ্য লগ্নে বিস্তৃত হওয়া উচিত নয় পরাধীন দেশে জন্মগ্রহণ করেও সুবিশাল ইংরেজ সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করতে এক নিমেষের জন্যও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আর উপলব্ধ আধ্যাত্মিকতাকে বাস্তব জীবন থেকে নির্বাসন দেননি, বিচ্যুত হননি সত্যবাদিতা ,অপটতা ও পরার্থপরতার আদর্শ থেকে ।সঠিকভাবে দেখতে গেলে সুভাষচন্দ্র বসু ব্যর্থ নায়ক নন একজন সফল উজ্জ্বল রাষ্ট্রনায়ক যিনি প্রতিমুহূর্তে ভারতীয়দেরbকে প্রলুব্ধ করেন তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে। আসুন এই মহা সন্ধিক্ষণে আমরা সকলে  মহামানবের কাছে প্রার্থনা করি - শক্তি দাও তোমার স্বপ্ন পূরণের।

(লেখক স্বনামধন্য শিক্ষক এবং সম্পূর্ণ বক্তব্য লেখকের নিজের)

hiring 2.jpeg