জন্মদিনই যাঁর মৃত্যুদিন, তাঁর স্মরণে পালিত হয় জাতীয় ডাক্তার দিবস

আগামী ১ জুলাই ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্মদিন। ওই একই দিনেই মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। তাঁর স্মরণে ১ জুলাই দেশজুড়ে পালিত হয় জাতীয় ডাক্তার দিবস।

author-image
Ritika Das
আপডেট করা হয়েছে
New Update
bidhan.jpg

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা: ১ জুলাই, ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্মদিন। ওই দিনই সারা দেশজুড়ে পালিত হয় জাতীয় ডাক্তার দিবস। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়, যাঁর খ্যাতি রয়েছে সারা দেশ জুড়ে, তিনি শুধুই একজন চিকিৎসক ছিলেন না, চিকিৎসা করার পাশাপাশি সমাজসেবক, শিক্ষাবিদ এবং সমাজকর্মী হিসাবে তাঁর যথেষ্ট নামডাক ছিল। ১৪ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 

ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়কে "ভারতের প্রথম ডাক্তারি পরামর্শদাতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সমসাময়িকদের তুলনায় অনেক বেশি অপ্রতিরোধ্য ছিলেন।" সাধারণ মানুষের মধ্যেও তিনি ভীষণ ভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। দেশের অভ্যন্তরে তিনি দুটি মর্যাদাপূর্ণ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন। এই দুই প্রতিষ্ঠানের নাম ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল। এর মধ্যে প্রথমটি তৈরি হয়েছিল ১৯২৮ সালে। 

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রথম সভাপতি ছিলেন তিনি। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ, ইনফেকশন ডিজিজ হাসপাতাল এবং কলকাতার প্রথম স্নাতকোত্তর মেডিক্যাল কলেজ চালু করতে সাহায্য করেছিলেন।

১৮৮২ সালের ১ জুলাই, বিহারের পাটনায় ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের জন্ম। তিনি পাটনা কলেজে গণিত এবং পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় স্কুলে পড়তেন বিধান চন্দ্র রায়। পরে লন্ডনের সেন্ট বার্থোলোমিউ'স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য ডিনের সঙ্গে রয়কে প্রায় ৩০টি বৈঠক করতে হয়েছিল, কারণ ডিন তাঁকে কলেজে ভর্তি করতে আগ্রহী ছিলেন না।

১৯১১ সালে স্নাতকোত্তর করার পর, তিনি রয়্যাল কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস (MRCP) এর সদস্য এবং রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনস (FRCS)-এর ফেলো হন।লন্ডন থেকে ফিরে বিধান চন্দ্র রায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর ১৯৩১ সালে কলকাতার মেয়র হিসেবে সুভাষ চন্দ্র বসুর স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি মহাত্মা গান্ধীর বন্ধু এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসক হয়ে ওঠেন।

১৯৩৩ সালের মে মাসে, যখন গান্ধী ২১ দিনের জন্য উপবাস করেছিলেন, তখন রায় তাঁর পাশে ছিলেন এবং তাঁর যত্ন নিতেন। স্বাধীনতার পর ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল হন এবং এক বছর পরে, অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৬২ সালের ১ জুলাই ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নিজের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। যে তারিখে তাঁর জন্ম, সেই তারিখে মৃত্যু হয় তাঁর। 

মৃত্যুর এক বছর আগে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়কে ভারতরত্ন দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বাড়িটি একটি নার্সিং হোম তৈরি করার জন্য দান করে দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সাল থেকে বিধান চন্দ্র রায় জাতীয় পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। মূলত চিকিৎসা, রাজনীতি, বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য ও শিল্পকলায় ভাল কাজের জন্য তাঁর স্মরণে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে।