করোনার তৃতীয় ঢেউকে রুখতে অভিনব উদ্যোগ "রাস্তার মাস্টার "-এর

author-image
Harmeet
New Update
করোনার তৃতীয় ঢেউকে রুখতে অভিনব উদ্যোগ "রাস্তার মাস্টার "-এর

হরি ঘোষ, জামুড়িয়াঃ রোগ নয় ভয়ই মানুষের সবচেয়ে বড়ো শত্রু সে কথা যেন আবারও চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করল 'করোনা' নামক ভয়াবহ রোগটি। প্রথমদিকে এই রোগের কারণে মানুষকে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে হতাশাগ্রস্থ থাকতে দেখা গেছে। কিন্তু এবারের ভয় রোগের ভয় নয়; এবারের ভয় ভ্যাকসিন নেবার ভয়। রোগের ভয়কে সমাজ কাটিয়ে উঠতে পারলেও ভ্যাকসিনের ভয়কে সমাজ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি। তারই একটি জ্বলন্ত চিত্র দেখতে পাওয়া গেলো জামুড়িয়ার জবা আদিবাসী পাড়ায়। "স্যার ভ্যাকসিন নিলে আমরা ম্যরে যাব  না ত ? ভীত সন্ত্রস্তভাবে ঠুরকি মুর্মু, সনামনি কিস্কু ও অন্যান্য আদিবাসী মায়েরা এমনই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন রাস্তার মাস্টার তথা তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়েকের কাছে। বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী অমৃতা মুর্মুর মা কিরানী মেঝান এর প্রশ্ন ছিল " স্যার আমি ভ্যাকসিন নিলে আমার মেয়ের কিছু হবেক নাই ত ?" এরপর কাপা কাপা গলায় আতঙ্কের সুরে আচমকাই সুরজমণি সরেন বলে উঠেন "স্যার ভ্যাকসিন নিলে হাত- পা টানবেক নাই তো ?" এইসব প্রশ্নগুলোই চিৎকার করে প্রমাণ করছিল সমাজ বিশেষত আদিবাসী সমাজ এখনো পর্যন্ত কতটা অনভিজ্ঞ কতটা অসচেতন ও কতটা ভীত সন্ত্রস্ত করোনা ভ্যাকসিন নেবার বিষয়ে।

              

অন্যদিকে মাস্টার মশাই কিন্তু তাদের সব প্রশ্নগুলিকে খুব শান্তভাবে, ধীর স্থির মস্তিষ্কে মনোযোগ সহকারে শুনছিলেন এবং তাদের প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলছিলেন। যেন কোনো মায়ের মধ্যে ভ্যাকসিন সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ভীতি না থাকে সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখছিলেন। তার জন্য তিনি নিজে যে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিয়েছেন তার সার্টিফিকেট তাদেরকে দেখিয়ে বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি কথার কথা বলেননি, তিনি তথ্য প্রমাণ সহকারে তাদেরকে দেখাচ্ছেন ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। এবং তার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারাও সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ  আছেন। এছাড়াও তিনি তাদের মনোবলকে আরো বাড়ানোর জন্য দেশের রাস্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী,  মুখ্যমন্ত্রী সহ এলাকার বিধায়ক ও বিশিষ্ট মানুষদের ভ্যাকসিন নেওয়ার ছবি তাদেরকে দেখিয়ে বলেন, " এই সমস্ত মানুষেরা প্রত্যেকেই ভ্যাকসিন  নিয়েছেন এবং প্রত্যেকেই সুস্থ আছেন। সুতরাং ভ্যাকসিন নিলে কোনো ভয় নেই,  করোনা ভ্যাকসিন একদম সুরক্ষিত। করোনা রোগ থেকে মানুষকে বাচাতে করোনা ভ্যাকসিন অত্যন্ত জরুরী।' 

তিনি আরও বলেন করোনার যে তৃতীয় ঢেউ আসছে তাতে ছোটো ছোটো শিশুরা সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হবে বলে জানা গিয়েছে। তাই করোনার এই তৃতীয় ঢেউকে রোধ করার একমাত্র হাতিয়ার মায়েদের করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া। তিনি সকল মায়েদেরকে নিজেদের আধার কার্ড এনে ওনার কাছে নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য অনুরোধ জানান। এরপর সকল মায়েরা স্যারের কথার গুরুত্ব বুঝতে পারেন ও নিজ নিজ আধার কার্ড এনে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য মাস্টার মশায়ের কাছে নাম নথিভুক্ত করেন । এভাবেই তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা রাস্তার মাস্টার দীপ নারায়ণ নায়ক মালতী পাড়া, মোড় পাড়া , স্কুল পাড়া,  বাউরী পাড়া, শিমুলিয়া, উপর জবা সহ জবা আদিবাসী বিভিন্ন পাড়ায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভ্যাকসিনের জন্য প্রায় পাঁচশো জনের অধিক মানুষের নাম নথিভুক্ত করেন ও আদিবাসীদের বিশেষত আদিবাসী মায়েদের করোনার টিকা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন। নাম নথিভুক্ত করানোর পর পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রোহিত মাঝির মা কালতি মেঝান বলেন, "আমাদের করোনার ইঞ্জেকশন ট নিতে বড় ভয় লাগছিল, এখন মাস্টারের সাথে কথা বলে বুঝলম ভয় নাই, ইঞ্জেকশন ট লিয়া ভাল। আমারা নাম লিখালম...আমরা ইঞ্জেকশন ট লিব।"