/anm-bengali/media/post_banners/m1TRbfmcW9bqpPkNYq4C.jpg)
দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : চন্দ্রকোনায় ঘোষাল পরিবারে এখন যেন উৎসবের আমেজ সকাল থেকেই শুরু হয়েছে গ্রামবাসীদের আনাগোনা। এযেন এক চিত্রনাট্য! ১৬ বছর আগে দুই বছরের কন্যা সন্তানকে হোমে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় মা। তারপর থেকে আর দেখা মেলেনি। সন্ধান পাওয়া যায়নি মায়ের। পরিবার কোথায় থাকে! পরিবারে আর কে আছেন কিছুই বলতে পারেনি ছোট্ট সোহিনী। সেই থেকে তার আশ্রয় হয়েছিল মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন (হোমে)। খোঁজ পাওয়া যায়নি তার পরিবারের। ১২ বছর ধরে জেলা শিশু সুরক্ষা দপ্তর ও হোম কর্তৃপক্ষ পরিজনদের খোঁজ শুরু করে। অবশেষে সন্ধান পাওয়া যায় সোহিনীর বাবার। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মঙ্গলবার বিকেলে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় ১৬ বছরের সোহিনী’কে। দীর্ঘ কয়েক বছর আগে সোহিনীর মা পরিবার ছেড়ে ছোট্ট মেয়েকে হোমে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। কোথায় চলে যায় আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। হোমে থেকেই বড় হতে থাকে সোহিনী।
কিন্তু হাল ছাড়েনি শিশু সুরক্ষা দপ্তর। বিভিন্ন ভাবে খোঁজ চালাতে থাকে এই দপ্তর। অবশেষে গোবিন্দ ঘোষাল এই নামের সূত্র ধরেই হোম কর্তৃপক্ষের তরফে চলে পরিবার পরিজনদের খোঁজ। জানা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার ভগবন্তপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বারিন্যা গ্রামের গোবিন্দ ঘোষালের। স্থানীয় প্রশাসন ও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে পরিবারের সন্ধান করে আগে যোগাযোগ করে ডেকে পাঠানো মেয়ের বাবা গোবিন্দ ঘোষালকে। দীর্ঘ কথপোকথন ও আলোচনার পর মেয়ের সম্মত্তি নিয়ে মঙ্গলবার সোহিনীকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বাবা গোবিন্দ ঘোষালের কাছে। সূত্রের খবর, সোহীনীর মা মেয়েকে হোমে ছেড়ে কোথায় চলে যায় খবর নেই তার। তারপর থেকে স্বামীর সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ রাখেনি। সোহিনীর বাবা-জেঠ্যুরাও জানতেন না মেয়ে কোথায় থাকে। অনেক খোঁজ চালিয়েও তারা ব্যর্থ হয় সোহিনীর খোঁজ পেতে। দিন কয়েক আগে প্রশাসনের থেকে খোঁজ মেলে সোহিনীর। তারপর মঙ্গলবার মেদিনীপুরে গিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যান বাবা ও পরিবার। দীর্ঘ কয়েক বছর পর মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি বাবা সহ পরিবারের লোকজন। স্ত্রী বাড়ি ছাড়া হয়ে যায় ছোট্ট সোহিনীকে নিয়ে। কিন্তু তারপর বিয়ে না করে মেয়ের ফেরার আশায় অপেক্ষায় ছিলেন বাবা গোবিন্দ ঘোষাল। গোবিন্দবাবুর একান্নবর্তী পরিবার, পেশায় কৃষক পরিবার। এত বছর পর বহু খোঁজার পরও যে মেয়েকে ফিরে পাবে ভাবতেই পারেননি গোবিন্দ ঘোষাল ও তার পরিবারের সদস্যরা। দুবছর বয়সে মায়ের কারণেই তখন ছোট্ট সোহিনীর স্থান হয়েছিল হোমে, প্রায় ১৬ বছর পর এখন সে কিশোরী। অনেক কিছুই বুঝতে বা শুনতে পেয়েছে সে। হোমের তরফে তার মতামত জানতে চাওয়া হলে সে বাবার কাছেই ফিরবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল।কারণ তার কথায় বাবাই তার সব। এখন সে লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হতে চায়। বাবাও চায় মেয়ে হলেও সোহিনী তার কাছে সবকিছু। তাই তার সব আশা পুর্ন করবে বাবা গোবিন্দ বাবু। মেয়ে জন্মালে বাঁকা চোখে দেখা এবং নানান অবহেলার ঘটনা আকছার সামনে আসে। কিন্তু ১৬ বছর পর একমাত্র মেয়ের আশায় বসে থেকে হোম থেকে সাদরে সোহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে অন্যন্য নজির সৃষ্টি করলেন চন্দ্রকোনার গোবিন্দ ঘোষাল।ঘটনায় উচ্ছসিত এবং খুশি ঘোষাল পরিবার থেকে পাড়া প্রতিবেশীরাও।
/anm-bengali/media/agency_attachments/IpyOoxt2orL626OA8Tlc.png)
Follow Us