​নিজস্ব সংবাদদাতাঃ এএনএম নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বরাবরই বলে আসছেন এই ঘটনা পরিকল্পিত। দোষীদের কড়া শাস্তির বার্তাও দিয়েছেন তিনি। তবে এবারে এএনএম নিউজের অন্তর তদন্তে ধরা পড়ল কুমিল্লার ঘটনার আসল কাহিনী। রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে স্থানীয় ইকবাল হোসেন, কোরআন শরিফটি রেখে যান মন্ডপে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। গদা হাতে তার চলে যাওয়ার দৃশ্যও ধরা পড়েছে ওই এলাকারই কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায়। মন্দির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগের দিন রাত আড়াইটা পর্যন্ত মন্দিরে পূজা সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছিল। এরপর বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দুজন নারী ভক্ত মন্ডপে এসে হনুমানের মূর্তিতে প্রথম কোরআন শরিফটি দেখতে পান। রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে স্থানীয় এক ব্যক্তি কোরআন শরিফটি রেখে যান মন্ডপে। এ সময় হনুমানের হাতের গদাটি সরিয়ে নেন তিনি। কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ জানিয়েছেন, সিসি ক্যামরার ফুটেজ দেখে ইকবাল হোসেনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই ঘটনার পিছনে একটি চক্র কাজ করেছে। ইকরাম তাদের একজন। তিনিই সকালে ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯-এ কল করেন। তারপর ওসি আনওয়ারুল আজিম ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি কোরআন শরিফটি উদ্ধারের পাশাপাশি ইকরামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যান। ওসি আনওয়ারুল আজিম মন্ডপ থেকে কোরআন উদ্ধারের সময় সেটি ফেসবুকে লাইভ করেন ফয়েজ নামের এক যুবক। সেই লাইভের পরেই উত্তেজিত মানুষ জড়ো হন ঘটনাস্থলে, শুরু হয় সহিংসতা। এই ফয়েজকেও আটক করেছে পুলিশ। স্পর্শকাতর ইস্যুতে ফয়েজ ফেসবুক লাইভের সুযোগ কীভাবে পেলেন, জানতে চাইলে ওসি আনওয়ারুল আজিম বলেন, ‘আমি তখন মোবাইল ফোনে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় ৩০-৪০ জন ঘটনাস্থলে ছিল, তাই কে লাইভ করছে খেয়াল করতে পারিনি।’ লাইভে আপনি নিজেকে কোতোয়ালির ওসি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন- এমন তথ্য তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘তখন আমি বুঝতে পারিনি লাইভ হচ্ছে।’ নানুয়া দিঘির পাড়ের পূর্ব পাড়ের একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করেন চিনু রানী দাশ। তিনি বলছিলেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি মন্ডপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখতে পান দুই নারী মন্ডপে কোরআন শরিফ দেখে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। এ সময় এক ছেলে ছুটে এসে চিৎকার করে বলে, হনুমানের পায়ের কাছে কোরআন, কেউ এখানে থাকবেন না। আর যে কোরআন এখান থেকে সরিয়ে নেবে তার হাত কেটে ফেলা হবে।’ চিনু রানী বলেন, ‘আমি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখছিলাম। ছেলেটা কাকে যেন ফোন দিয়ে কোরআনের বিষয়টা জানায়। এর কিছুক্ষণ পর সিএনজি দিয়ে একজন লোক আসে। সে এসে কোরআন শরিফটিকে বুকের মধ্যে নেয়।’ গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ চক্র ছড়িয়ে দিয়েছিলো, মন্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার সময় সেখানে পুরোহিত উপস্থিত ছিলেন। তারা কোরআন সরাতে অস্বীকৃতি জানান।’ এই বিষয়েও মিলেছে সঠিত তথ্য। অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে পুরোহিত শিমুল গোস্বামী বলেছেন,‘তারা হাঙ্গামার খবর পেয়ে সেদিন সকালে মন্ডপেই যাননি।’ এলাকাবাসী ও মন্ডপ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা মিলেছে। এদিকে মন্ডপটিতে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলেও আশপাশের কয়েকটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্তের ছবি। যে কোনও সময়ে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশাবাদী পুলিশ কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্ডপে যিনি ভোররাতের দিকে কোরআন শরিফ রেখেছেন, তাকেও চিহ্নিত করা গেছে। আশপাশের কয়েকটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে মূল অভিযুক্তের ছবি।