দুই শিক্ষকের উদ্যোগে শিক্ষার আলো দেখল শিশুরা

author-image
Harmeet
New Update
দুই শিক্ষকের উদ্যোগে শিক্ষার আলো দেখল শিশুরা

দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবংয়ের ৩ নং দাঁররা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন খোলাগেড়্যা মৌজায় একটি 'বাগাল পাড়া' রয়েছে। প্রায় পাঁচ দশক ধরে একটি পুকুরকে ঘিরে এখানকার প্রায় তিরিশটি পরিবারের বসবাস। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাড়াটির দূরত্ব মেরেকেটে আটশো মিটার। অথচ সেই স্কুলের চৌকাঠ মাড়ায়না এখানকার শিশুরা। যে বয়সে হাতে পেন খাতা থাকা উচিত, সেই হাতে তখন জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে আনা কাঠ, ডালপালা ভরা থাকে! যে বয়সে পিঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে চলা উচিত, সেই বয়সে মাথায় চাপে মুনিষ খাটার নির্দেশ! "পড়াপাঠ আর ভরা পেট" এঁদের জীবনের অঙ্গ নয়! এই পাড়ার বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় একশো হলেও সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির গণ্ডি টপকেছে মাত্র একজনই! জাতিতে এঁরা খেড়িয়া শবর হলেও সব ধরনের স্বীকৃতির বাইরে এঁদের অবস্থান। রয়েছে চূড়ান্ত অভাব, বঞ্চনা আর অপুষ্টি। প্রতিদিন বাড়িতে চুলা জ্বলে না। হাঁড়িতে চাল পড়ে না। ভুখা পেটে কেটে যায় দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত এখানে প্রায় সকলেই। সকলেই ভূমিহীন। ভিক্ষা ও দিনমজুরিই উপার্জনের একমাত্র উপায় হলেও রোজগারের সিংহভাগই খরচ হয় নেশার পেছনে। ফলে নেই কোন মানসিক বিকাশ। আর মানসিক বিকাশটুকুও মুখ থুবড়ে। পরের বাড়িতে চেয়েচিন্তে আর মেগেপেতে জোগাড় করা সামগ্রীতেই ক্ষুন্নিবৃত্তি কোনো রকমে।এমতাবস্থায় একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেই স্কুলবিমুখ বাগালপাড়ার দুয়ারেই 'বর্ণপরিচয়' নামে একটি পাঠশালা স্থাপন করে এলাকার ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দানের কর্মসুচী গ্রহন করা হলো মহালয়ার দিন।অর্থাৎ দেবী পক্ষের চক্ষু দানের দিন। যাঁদের বর্ণের সাথে সামান্যতম পরিচয়টুকুও হয়নি তাঁদের হাতে স্লেট খড়ি, খাতা পেন আর বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় তুলে দিয়ে অক্ষরজ্ঞান করানোর প্রচেষ্টায় এই "বর্ণপরিচয়"! এনাদের উদ্যোগে আজ ওই ছেলে গুলির হাতে বই,খাতা,পেন,ব্যাগ,টুথ ব্রাশ,খেলার সরঞ্জাম,জামা প্যান্ট তুলে দেওয়া হয়। পরিচিত করানো হয় অ আ ই ঈ এর সঙ্গে। আগামী দিনে পিছিয়ে পড়া এই পাড়াকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ।