নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ হাতির পালে আতঙ্ক ছড়িয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর সদর ব্লকে। বিঘার পর বিঘা কৃষি জমির ফসল নষ্ট। সন্ধ্যা হলে বাড়ি থেকে বের হতে ভয়। এই মুহূর্তে প্রায় একশোটি হাতি রয়েছে মেদিনীপুর বনবিভাগে। যার মধ্যে মেদিনীপুর সদরের চাঁদড়া বনাঞ্চলে রয়েছে বেশিরভাগ। যেগুলো ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া হয়ে প্রবেশ করেছে। পুজোর সময় এই বিপুল সংখ্যক হাতি এলাকায় থাকলে পুজো মাটি হয়ে যাবে-এই আশঙ্কায় ধেড়ুয়া এলাকার লোকজন প্রতিদিনই হাতিকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বিঘার পর বিঘা ধান জমি তছনছ হাতির হানায়। ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার শিয়াড়বনি বিট অফিসে বিক্ষোভ দেখান শিরষী, কাননডিহি, চাপাশোল, বাঘঘরা, ডালকাটি সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষজন। তাদের অভিযোগ, হাতি তাড়াতে বন দফতরের কোনো গুরুত্ব নেই। সন্ধ্যা হলে লোকালয়ে প্রবেশ করছে হাতির পাল। পুজোর সময় বাড়ি থেকে বের হওয়া মুশকিল। অন্যদিকে গতবছরের ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ। দ্রুত হাতি সরানোর দাবি তুলেছেন এদিন। জানা গিয়েছে, হাতির পালকে কংসাবতী নদী পার করে মানিকপাড়া পাঠানোর চেষ্টা করে বন দফতর। কিন্তু মানিকপাড়াতে বন দফতরের হুলা টিম পথ আটকে পুনরায় ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। নদীর দুই প্রান্তে দুই জেলার গ্রামবাসী ও হুলা পার্টির সদস্যদের তাড়াতে নদীতে সারা রাত ঘুরতে থাকে হাতির পাল। মেদিনীপুর সদরের ধেড়ুয়া এলাকার বাসিন্দা বাপি মাহাত বলেন, "পুজোর মুখে হাতি হাজির। রাত জেগে পালা করে হাতি তাড়াতে হচ্ছে। হাতিতে ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। তারপরও বন দফতরকে বললেও হাতি তাড়ানোর নূন্যতম সহযোগিতা পাচ্ছি না। এই পরিস্থিতি চললে আমাদের বাটি হাতে রাস্তায় বসতে হবে।" মালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা দয়াল মাহাত বলেন, "হাতিতে প্রচুর ফসলের ক্ষতি করছে। কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণের জন্য বন দফতরকে ফর্ম চাইতে গেলে তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে। দিতেই চাইছেন না আমাদের। সবদিক থেকে সর্বশান্ত আমরা।" স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় মাহাত বলেন, "প্রতিদিনই আমরা হাতিকে তাড়ানোর চেষ্টা করছি নিজেদের বাঁচাতে। কিন্তু উল্টো প্রান্তে থাকা ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ার লোকজন সেদিকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। প্রতিদিন তাড়ালেও সকাল হলে হাতি পুনরায় ফিরে আসছে আমাদের এলাকাতে। সব ক্ষতি করে দিয়েছে হাতিতে। বন দফতরের কোন সহযোগিতা নেই।" মেদিনীপুর বনবিভাগের এক বনকর্মী বলেন, "বিট অফিসগুলোতে দু-তিন জন কর্মী। এত কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে দিনরাত জেগে কিভাবে কাজ করা সম্ভব? তার উপর স্থানীয়দের একাংশ চড়াও হচ্ছে বনকর্মী ও হুলা টিমের সদস্যদের ওপর। হাতির পালকেও প্রতিদিন সরানো চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যাতায়াতের পথে বাধা পেয়ে পুনরায় ফিরে আসছে।"