হাবিবুর রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হচ্ছেন দেবী মনসা। সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতেই আপামর বাংলাদেশের ঘরে ঘরে মাটির সরায় দুধ-কলা দিয়ে দেবী মনসাকে পুজা করছেন। বুধবার উপবাস থেকে পুজা শেষে শাগু-দুধ-কলা ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে মা মনসার পুজা সম্পন্ন করে তবে উপবাস ভাঙ্গছেন মহিলারা।
খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার অব্দে সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্গত আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে মা মনসা দেবীর পূজার প্রচলন ছিল। পরবর্তীতে পৌরাণিক দেবী হিসেবে তিনি খ্যাত হন। পদ্মপুরাণ, দেবী ভাগবত পুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণসহ কয়েকটি উপপুরাণে এই দেবীর পরিচয় পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, মনসা দেবীর পূজার প্রচলন হয় দশম-একাদশ শতকে। সাধারণত সর্পক‚লের অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে পূজনীয় হলেও তাঁকে কৃষির দেবীও বলা হয়। পুরাণ মতে, দেবী মনসা জরৎকারু মুনির পত্মী, আস্তিকের মাতা এবং বাসুকির ভগিনী। ব্রহ্মার উপদেশে ঋষি কশ্যপ সর্পমন্ত্র সৃষ্টি করেন এবং তাঁর তপস্যার দ্বারা মন থেকে অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে মা মনসার আবির্ভাব হয়।
মন থেকে সাকার রূপ লাভ করেছেন বলে তাঁর নাম হয়েছে ‘মনসা’। মা মনসাকে শিবের কন্যা রূপেও কল্পনা করা হয়। মনসার অপর নাম কেতকা, বিষহরি, পদ্মাবতী প্রভৃতি। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার পর পঞ্চমী তিথিকে (শ্রাবণ) নাগপঞ্চমী বলে। একসময় নাগপঞ্চমীতে উঠোনে সিজগাছ স্থাপন করে মনসা দেবীর পূজা করা হতো। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা পঞ্চমী পর্যন্ত পূজা করার বিধান আছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একমাস ধরে পূজা অথবা শুধুমাত্র শেষ দিনে পুরোহিত দ্বারা পূজা করা হয়।
দেবী মনসার পূজা কালক্রমে বাঙালি সনাতনী সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের কেরালা, তামিলনাড়–সহ দক্ষিণ ভারতে, নেপালের কাঠমুন্ডুতে নাগপঞ্চমী অন্যতম প্রধান উৎসব। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, দিনাজপুর ও বরিশালসহ অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের পল্লীতেও গড়ে উঠেছে মনসা দেবীর মন্দির। তবে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রমনা কালী মন্দিরে মনসা দেবীর পূজা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু অঞ্চলে মনসা পূজায় ছাগলবলি চালু রয়েছে। এই বলি মাংসাহারের জন্য নয় বরং জরাগ্রস্ত পশুকে নতুন ও উন্নত জীবন দান করার জন্য। যজ্ঞস্থলে বলিকৃত পশু বৈদিক মন্ত্রশক্তির প্রভাবে পুনরায় উন্নত দেহ লাভ করতো। মনের মধ্যে বিষ থাকতে পারে, সেই বিষ মনকে বিষাক্ত করে এবং চিন্তার খোরাক যোগায়। তাই মনকে বিষমুক্ত করতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনসা পূজা করে আসছেন।