রথের চাকা ফেরাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাস

author-image
Harmeet
New Update
রথের চাকা ফেরাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাস

হরি ঘোষ, জামুড়িয়াঃ কারো হাতে ঠাকুমার ঝুলি, কারো হাতে ঈশপের গল্প, কারো হাতে দেশনায়কের জীবনী, কেউ বা বসে রাস্তার ধারে গাছের ছায়ায়কেউ বা দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে একমনে পড়ছে রামের সুমতি, মেজদিদি, ছুটি, পথের পাঁচালী'র মতো  আকর্ষণীয় গল্পের বইগুলি। কখন যে প্রচন্ড গরমে তাদের পরিধানের কাপড়গুলো ঘামে ভিজে গেছেমুখ ভরে গেছে ঘামে সেদিকে তাদের কারোরই হুঁশ নেই। এমনই এক বিরল চিত্র দেখা গেল জামুড়িয়ার মালতি পাড়া, কাঠাল পাড়া, মোড় পাড়া সহ জবা আদিবাসী পাড়ার বিভিন্ন এলাকায় ।

হাতের মুঠোয় নূতন বই পেয়ে তারা আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু প্রশ্নটা হলো যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেই  দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের হাতে এতো নতুন বই এল কোথা থেকে! আরো একটু এগোতেই দেখা মিললো আরো বড় চমক। এ কী! এরা তো কেউ শিক্ষার্থী নয়। ঝুড়ি কোদাল ও গাঁইতি হাতে মাঠে কাজ করতে যাওয়া আদিবাসীরা হাতে করে নিয়ে যাচ্ছে একটি করে নতুন বই। কিন্তু কেনো? জানতে চাওয়া হলে সনমনি বাস্কি, সীতা ওরাং, টিনকু কোড়ারা জানায় ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার  ও একইসঙ্গে আকর্ষণীয় পুরস্কার জেতার কথা। আরেকটু আগে এগোলেই চোখে পড়ে একটা চমৎকার রথের আদলে তৈরি ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগার। কিন্তু এ কী জগন্নাথ দেবের সঙ্গে এ রথে রয়েছে সারি সারি ভাবে সাজানো সুন্দর সুন্দর আকর্ষণীয় বই।যা দেখলে যে কারো একবার হাতে নিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে। শুধু গল্পের বই নয়, এই রথে আপনি পাবেন গল্প কবিতা থেকে শুরু করে নীতিকথা, চাষবাসভেষজ উদ্ভিদ, প্রাথমিক চিকিৎসা সহ কুসংস্কার থেকে মুক্তির উপায়ের বইও। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ভাষা ছাড়াও এই রথে রয়েছে অলচিকি,উর্দু ও সাঁওতালি ভাষার বইও।এই রথযাত্রার প্রধান কান্ডারী রাস্তার মাস্টার তথা তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ নারায়ণ নায়ককে এই অভিনব  রথাকৃতি ভ্রাম্যমান  গ্রন্থাগার  সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে  রথযাত্রা সম্বন্ধে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই  একটা অন্য রকমের উৎসাহ মিশ্রিত আনন্দ থাকে। শিশুদের মধ্যেও এই উৎসাহ থাকে চোখে পড়ার মতো। প্রত্যেক শিশুই এই দিনটিতে নিজের রথ বের করে রথযাত্রা পালন করতে চায়। আজকের এই রথযাত্রার মাধ্যমে তাদের সেই  উৎসাহকে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করে একদিকে যেমন শিক্ষার প্রতি তাদেরকে আকৃষ্ট করে বই পড়ার অভ্যাসকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনই সমাজের মধ্যে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা, যোগাভ্যাস, চাষবাস, শিশু ও মায়ের সুস্বাস্থ্য সহ দেশনায়কদের জীবনী সমাজের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন  করোনা অতিমারীর কারণে এক বছরেরও অধিক সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী তথা তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও শিক্ষার প্রতি একটা অনীহা গড়ে উঠেছে। এই অনীহাকে কাটিয়ে শিক্ষার প্রতি তাদেরকে আকৃষ্ট করতে এই ভ্রাম্যমান গ্রন্থাগার বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।  তিনি এই অভিনব রথযাত্রার নাম রেখেছেন " চলো বই পড়ি, গল্প বলি " অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের  পছন্দমতো একখানি বই পড়তে দেওয়া হচ্ছে ।