যেখানে চোখে জল, সেখানেই ইতিহাস— বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত!

দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬-এ অলআউট। শেফালি ও দীপ্তির বল-ঝড়ে ছিন্নভিন্ন প্রতিপক্ষ। এই জয় মহিলা ক্রিকেটের নতুন ইতিহাস, নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। দেশজুড়ে উচ্ছ্বাস, আনন্দ, চোখে জল।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
indian woman cricket team aaaa

নিজস্ব সংবাদদাতা:  ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে ভারত নারী দল জিতে নিল আইসিসি উইমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৫। এই জয় কেবল ক্রিকেটের নয়, লক্ষ কোটি মেয়ের স্বপ্নের, মায়ের কপালে লুকোনো আশার, মাটির গন্ধে বড় হওয়া অবহেলিত প্রতিভার জয়।


দীর্ঘ বৃষ্টিবিঘ্নের পর মাঠে নেমে প্রথম বল থেকেই যেন আগুন ছুঁড়লেন স্মৃতি মন্ধানা ও শেফালি বর্মা। দু’জনে মিলে করলেন ১০৬ রানের সোনার জুটি। ৪৫ রানে স্মৃতি ফিরে গেলেও শেফালি থামেননি। প্রতিটি শটে ছিল বছরের পর বছর চেপে রাখা কান্না আর তীব্র লড়াইয়ের গল্প। ৮৭ রানের অমর ইনিংস টিমকে দিল পাহাড় সমান আত্মবিশ্বাস। জেমাইমা ২৪ রানে ফিরলে মাঠে নেমে নিজের গল্পকে নতুন রঙ দিলেন হরমনপ্রীত। ২০ রানের ছোট্ট ইনিংসেও ছিল সাহস, ছিল জেদ।

shafali verma

তারপরই মঞ্চে আগুন ধরালেন মার্চের মতো নরম অথচ ইস্পাতের মতো শক্ত দীপ্তি শর্মা। ৫৮ রান— একটাও বল নষ্ট নয়। তাঁর চোখে ছিল অদেখা পথের কালি। সাথে রিচা ঘোষের বজ্র-ঝড় ৩৪ রানের ইনিংস। ঠিক সেই হাসি, যেটা শিলিগুড়ির মাঠে একদিন কেউ দেখে ভাবেনি, একদিন সে বিশ্বকাপের আলো ছড়াবে! ২৯৮— সংখ্যাটা তখন শুধু রান নয়। ছিল দেশের হৃদস্পন্দন।

২৯৯ রানের লক্ষ্যে নেমে আফ্রিকার শুরুটা আত্মবিশ্বাসী ছিল। কিন্তু মাঠে তখন দাঁড়িয়ে শুধু এগারোটা মেয়ে নয়, গোটা ভারতের আকাশভরা আশা। অমনজ্যোত কৌরের ঝলক, শ্রী চরানীর আর্তনাদ-মেশানো শিকার আর তারপর…

শেফালির স্পেল। যেন বল হাতে ফের জন্ম নিলেন। সুনে লুয়াস (২৫) আর কাপ (৪)-কে ফিরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয়েই আগুন ধরিয়ে দিলেন তিনি। দীপ্তির স্পিনে আরেকবার নতজানু হল প্রোটিয়া ব্যাটিং। ডেরক্সেন (৩৫) ফিরতেই স্টেডিয়ামের আকাশে উঠল “ভারত! ভারত!” চিৎকার। ক্যাপ্টেন লরা ভলভার্ট শতরান করলেন বটে, কিন্তু সেই পথের প্রতিটা ইট ছিল ভারতীয় বোলারদের রক্ত-ঘামের প্রতিচ্ছবি। শেষমেশ ২৪৬-এ থামল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিজয়-মুহূর্তে সব চোখে জল— হাসির, স্বপ্নপূরণের, বিসর্জনের।

এই জয় প্রকাশ করে— “মেয়েরা ঘর সামলাতে পারে, মাঠও জয় করতে পারে। দিল হারালে তারাও অজেয়।”