নারী শক্তির আরাধনায় নারীরাই ব্রাত্য! এ কেমন পুজো

নাড়াজোল এলাকার জঙ্গল সাফাই করে তৈরি করেন বাড়ি।

author-image
Atreyee Chowdhury Sanyal
New Update
WhatsApp Image 2025-09-06 at 12.52.39

File Picture

নিজস্ব সংবাদদাতা: মায়ের পুজোতে মায়েরাই ব্রাত্য এমনটাই চলে আসছে ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর এটাই প্রথা। আর সেই প্রথা আজও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন রাজ পরিবারের মহিলারা। 

রাজ পরিবার সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান রাজার নায়েব ছিলেন উদয়নারায়ণ ঘোষ। তিনি মেদিনীপুর জেলায় শিকার করতে এসেছিলেন। দাসপুরের নাড়াজোল জঙ্গলে শিকার করে ফেরার পথে হঠাৎই দেখেন একটি সারস পাখি বককে তাড়া করছে। এই দৃশ্য দেখে চমকে গিয়েছিলেন নায়েব মশাই। সেই সারস পাখি শিকার করতে গিয়ে সন্ধ্যা নেমে এলে এখানেই রাত্রিযাপন করেন। সেই রাতেই তিনি স্বপ্নাদেশ পান মা দুর্গার পুজো করার জন্য। ওই জঙ্গলেই একটি বাড়িতে রয়েছে মা দুর্গার অষ্টধাতুর মূর্তি। মায়ের নির্দেশে সেই মূর্তি জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। নাড়াজোল এলাকার জঙ্গল সাফাই করে তৈরি করেন বাড়ি। এই বাড়িতেই অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তির পুজো শুরু করেন বাংলার ৮২০ বঙ্গাব্দে। 

উদয়নারায়ণ ঘোষ দুর্গা পুজোর সূচনা করেছিলেন, পরবর্তীকালে উদয়নারায়ণ ঘোষ নাড়াজোল রাজ বাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন। দুর্গাপুজোর যাবতীয় বিধি নিষেধ তিনিই চালু করেন। আজ নাড়াজোল রাজবাড়ি ধ্বংসের পথে, রাজবাড়ির বহু ভবন ভগ্নপ্রায়, আগাছায় ঢাকা পড়ছে রাজবাড়ির সৌন্দর্য্য ও কারুকার্যের নিদর্শন। কিন্তু প্রথা মেনে আজও রাজবাড়িতে অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পূজিত হন। রাজবাড়িতে বৈষ্ণব মতে পূজিত হন মা দুর্গা তাই নেই বলি প্রথা। 

প্রথা মেনে আজও রাজবাড়ির মহিলারা মায়ের অঞ্জলি দিতে পারেন না। নিতে পারবেন না প্রসাদ ও বেলপাতাও। সমস্ত জোগাড় আয়োজন করে দিলেও মায়ের প্রসাদ ও ভোগ রান্না করেন পুরোহিত। তবে মায়ের বিদায় বেলায় সিঁদুর খেলায় অংশ নেয় রাজ পরিবারের মহিলারা। রাজবাড়ির অষ্টধাতুর মূর্তিতে মা একাই পূজিত হন। এখানে মায়ের সাথে থাকেনা কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী। এখানে যেহেতু অষ্টধাতুর দুর্গা তাই বিসর্জন হয় না হয় শুধুমাত্র ঘট নিরঞ্জন। দাসপুর ছাড়াও দুরদুরান্তের বহু মানুষ পুজোয় ভিড় জমান নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গা পুজোয়।

রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যদের কথায়, পুজোয় আগের মতো জৌলুস না থাকলেও সমস্ত রীতিনীতি এখনও বজায় রয়েছে। তবে আর্থিক অনটনের জেরে পুজোর এলাহি আয়োজনে অনেক কাটছাঁট করতে হয়েছে। শুধু পুজো নই, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাজবাড়ির মূল ভবন ভগ্নপ্রায়, আগাছায় ঢাকা পড়েছে। রাজবাড়ির বর্তমান পরিস্থিতি যেমনটাই থাকুক রাজাবাহাদুরদের হাতে সূচনা হওয়া দুর্গা পুজো আজও সমস্ত রীতিনীতি মেনে পুজো করেন বর্তমান সদস্যরা।