ইতিহাস স্মরণ করাতে চার বিপ্লবীর নামে মেদিনীপুরের রাস্তার নামকরণ

মেদিনীপুরের রাস্তার নামকরণ।

author-image
Aniket
New Update
ওই

নিজস্ব প্রতিনিধি: ব্রিটিশ শাসনের রক্তাক্ত ইতিহাস আজও রক্তিম হয়ে আছে বিপ্লবীদের আত্মবলিদানে। সেই বীর শহীদদের স্মরণে এক অভিনব উদ্যোগ নিল মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। সংশোধনাগার সংলগ্ন চারটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে চার বাঙালি বিপ্লবীর নামে, যাঁরা ব্রিটিশ আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে শহীদ হয়েছিলেন। চার বিপ্লবী হলেন, প্রদ্যোত ভট্টাচার্য্য, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায় এবং নির্মল জীবন ঘোষ। এই চার বিপ্লবীর নামে নামকরণ করা হলো সংশোধনাগার সংলগ্ন চারটি রাস্তা। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, চার বিপ্লবীর নামে সংশোধনাগার সংলগ্ন রাস্তাগুলি তাঁদের নামে নামকরণ করা হয়েছে। রাস্তায় বিপ্লবীদের ছবি সহ বোর্ডও লাগানো হয়েছে। ইতিহাসকে স্মরণে রাখতে এমন উদ্যোগ বলে জানানো হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই চারজন বিপ্লবীর ফাঁসি হয়েছিল এই মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই। তাই তাঁদের স্মরনীয় করে রাখতে সংশধনাগার কর্তৃপক্ষের এমন উদ্যোগ। ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মেদিনীপুরে এক প্রবল তরঙ্গ তৈরি হয়েছিল। ওই সময় দুই অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস ও বার্জকে হত্যা করেন বাংলার বিপ্লবীরা। এই চার বিপ্লবী শহিদের নাম ইতিহাসে অমর হয়ে আছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নজিরবিহীন অধ্যায়ে। ১৯৩৩ সালের ১২ জানুয়ারি, প্রদ্যোত ভট্টাচার্যকে ফাঁসি দেওয়া হয় ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস হত্যার দায়ে। পরের বছর, ১৯৩৪ সালের ২৫ অক্টোবর, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী ও রামকৃষ্ণ রায় এবং ২৬ অক্টোবর নির্মলজীবন ঘোষকে ফাঁসি দেওয়া হয় আরেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ হত্যায়। এই সবকটি ফাঁসির ঘটনাই ঘটেছিল মেদিনীপুর সংশোধনাগারেই। যা আজও রক্তস্মৃতির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। সেসময় মেদিনীপুর ছিল বিপ্লবীদের শক্ত ঘাঁটি। "বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স" নামক সংগঠনের ছত্রছায়ায় সংগঠিত হয়েছিল এই প্রতিশোধমূলক হত্যা, যা ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবিচারের বিরুদ্ধে এক রক্তাক্ত প্রতিবাদ।

মেদিনীপুরের চার শহিদের নামে চার রাস্তা, রক্তাক্ত ইতিহাসকে স্মরণে রাখল সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। স্মৃতির পাতায় ফের একবার ফিরে এলো ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সেই রক্তঝরা অধ্যায়। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ আজ শুধু স্থানীয় মানুষজন নয়, ইতিহাসপ্রেমীদেরও আবেগে ভাসাল। ইতিহাসবিদ, নাড়াজোল রাজ কলেজের অধ্যাপক ডঃ মঙ্গল কুমার নায়েক বললেন, "আমরা ছোটবেলায় শুনেছি ও পড়েছি এইসব শহিদের কথা। ছোট বেলায় এসব কথা যেন কল্পকাহিনি মনে হতো। আজ তাঁদের নামে রাস্তাগুলো হয়েছে শুনে খুব ভালো লাগছে। ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার এর চেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি আর কিছু হতে পারে না। এমন মহতী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে আমি কুর্নিশ জানাই।" স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ইতিহাসের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের সংযোগ তৈরি হলো নতুনভাবে। এ যেন ইতিহাসের প্রতি এক নীরব প্রণাম। মেদিনীপুর সংশোধনাগারের এক আধিকারিক বলেন, "সংশোধনাগারের ভিতরে ছায়ায় ছায়ায় এখনও যেন ঘুরে বেড়ায় সেইসব শহিদদের আত্মা। এই নামকরণ শুধু শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত রাখার এক গৌরবময় প্রয়াস। মেদিনীপুরের পথ যেন আরও গর্বিত হয়, আরও গৌরবান্বিত হয়। তাই এমন উদ্যোগ।"