ধর্ম-বর্ণ ভুলে একসাথে ছট উৎসবে মেতেছে পাণ্ডবেশ্বর! ভোরে সূর্য অর্ঘ্যে খনি অঞ্চলে ভক্তির স্রোত

পাণ্ডবেশ্বরের খনি অঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলে ভক্তির আবহে পালিত হলো ছট পুজো। ভোরে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দিয়ে শেষ হলো ছট মাইয়ার পূজো। নিরাপত্তায় ছিল পুলিশ প্রশাসন, বিধায়কের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার ব্রতীকে দেওয়া হয় পুজোর ডালা।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
WhatsApp Image 2025-10-28 at 2.09.49 PM

নিজস্ব সংবাদদাতা:  শিল্পাঞ্চলের মানুষ। ভক্তি ও নিষ্ঠার আবহে পাণ্ডবেশ্বর, কুমারডিহি ও সিপি সংলগ্ন ঘাটজুড়ে সম্পন্ন হলো ছট উৎসবের সমাপন পর্ব। ভোরের আলো ফুটতেই একগলা জলে নেমে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দিয়ে ছোট মাইয়ার উদ্দেশে প্রার্থনা জানালেন হাজারো ছট ব্রতী।

চারদিনের এই মহাব্রত মূলত সূর্যদেব ও তাঁর বোন ষষ্ঠী দেবী— যাঁকে ভক্তরা স্নেহভরে ‘ছট মাইয়া’ বলেন— তাঁদের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত। পৃথিবীতে জীবনের ধারাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সূর্যদেবকে ধন্যবাদ জানানো এবং পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় পালিত হয় এই ব্রত।

প্রধানত বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে এই উৎসবের প্রাচীন প্রচলন থাকলেও, এখন পশ্চিমবঙ্গের বহু জেলাতেই মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় ছট পুজো। বিশেষত খনি অঞ্চল ও শিল্পাঞ্চলগুলিতে এই উৎসব এখন একতার প্রতীক।

chatt puja s

পাণ্ডবেশ্বরের কুমারডিহি ও সিপি সংলগ্ন ছট মাইয়া পুকুর ও সায়ের পুকুরে ভোর থেকেই ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে। বাংলা, হিন্দি— দুই ভাষাভাষী মানুষই সমান ভক্তিভরে অংশ নেন এই প্রার্থনায়।

স্থানীয় হিন্দিভাষী বাসিন্দা রাম লক্ষণ পাসওয়ান জানান, “সোমবার সূর্য ডোবার সময় থেকে মঙ্গলবার সূর্য ওঠা পর্যন্ত চলে এই ব্রতের নিয়ম। সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দিয়েই শেষ হয় আমাদের ছটমাইয়ার পূজো।”

পুলিশ প্রশাসনও ছিল পুরোপুরি তৎপর। পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ কর্মীরা লাইফ জ্যাকেট ও টিউব নিয়ে ঘাটে ছিলেন, যাতে ভিড়ের মধ্যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

ব্লকের তৃণমূল সভাপতি কিরিটি মুখার্জি জানান, “আমাদের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নির্দেশে প্রতিটি ঘাটে দলের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এবছর পশ্চিম বর্ধমান জুড়ে প্রায় ২৫,০০০ ছট ব্রতীকে পুজোর ডালা বিতরণ করা হয়েছে বিধায়কের পক্ষ থেকে।” তিনি আরও বলেন, “ছট মাইয়ার কাছে আমাদের একটাই প্রার্থনা— তিনি যেন সকলের মঙ্গল করেন, সুস্থ রাখেন গোটা অঞ্চলকে।”

পাণ্ডবেশ্বরের আকাশে যখন ভোরের সূর্য উঠল, তখন ঘাটজুড়ে ধ্বনিত হচ্ছিল ভক্তদের জয়ধ্বনি— “ছট মাইয়া কি জয়!”— একতার সেই সুরে মিলেমিশে গেল ধর্ম-বর্ণের সব সীমানা।