দীর্ঘ সময় গর্ভ যন্ত্রণা, শেষমেষ মৃত সন্তানের প্রসব- মানুষের প্রচেষ্টায় নিয়ে যাওয়া হল বনদপ্তরে

মানুষ হোক বা প্রাণী- মা তো মা-ই হয়।

author-image
Anusmita Bhattacharya
New Update
WhatsApp Image 2025-12-03 at 3.09.04 PM

নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুর: পিংলায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মানুষ যেমন কষ্টে আশ্রয় খোঁজে, তেমনি মা হওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করে বাঁচার শেষ আশায় মানুষের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াল এক মা হনুমান। অর্ধপ্রসব অবস্থায় মৃত সন্তানকে আঁকড়ে, অসহ্য ব্যথায় কাতর সে— যেন নির্বাক ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছিল, “আমাকে সাহায্য করুন"।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ। বেলাড়ের জগদীশ মণ্ডলের বাড়ির উঠোনে ধানের কাঁড়ের উপর এসে ধপ করে বসে পড়ে হনুমানটি। গ্রামের মানুষ প্রথমে ভেবেছিলেন হয়তো সাধারণভাবে খাবারের সন্ধানে এসেছে। কিন্তু একটু পরেই চোখে পড়ে—প্রসবের প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করছে সে। তার সঙ্গীরাও ত্রিপল দিয়ে ঢেকে তাকে সাহায্য করার মরিয়া চেষ্টা করলেও কোনওভাবেই সন্তানের জন্ম সম্পূর্ণ করাতে পারছিল না। আর ততক্ষণে স্পষ্ট হয়ে যায়—অর্ধেক বের হওয়া শিশুটি মৃত।

এই দৃশ্য দেখে চোখে জল আসে গ্রামের মানুষদের। সবাই মিলে ফোন করেন পিংলা প্রাণীসম্পদ দফতরে। সেখান থেকে খবর যায় ডেবরা বন বিভাগের কাছে। প্রায় এক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা নাগাদ রেসকিউ টিম ও পশুচিকিৎসক ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

অত্যন্ত মানবিকতা ও সাবধানতার সঙ্গে রেসকিউ টিম হনুমানটিকে খাঁচায় তুলে এনে চিকিৎসা শুরু করে। তারপর ডাক্তার মৃত শিশুটিকে প্রসব করান—মুহূর্তটি উপস্থিত গ্রামবাসীদের গলা বুজিয়ে দেয়। সবাই নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকে সেই অসহায় মায়ের দিকে। চিকিৎসার পর দেখা যায়, হনুমানের শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই তাকে তৎক্ষণাৎ নিয়ে যাওয়া হয় খড়গপুর বন বিভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

গ্রামবাসীদের অনেকে বলেন, “আজ বুঝেছি, কেবল মানুষ নয়; যে কোনো প্রাণীর কাছে সন্তানের কষ্ট একই রকম"। বন বিভাগ ও প্রাণীসম্পদ দপ্তরের এমন মানবিক উদ্যোগে এলাকার মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া মানুষের মুখে শুধু একটাই কথা— “এই পৃথিবী তখনই সুন্দর, যখন মানুষ প্রাণের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে পারে"।

Screenshot 2025-12-03 094502