বিশ্বকর্মা নগরী আজ নিঃসঙ্গ, স্বপ্নের উৎসব এখন শুধু স্মৃতিতে

বিশ্বকর্মা নগরীর আলো ম্লান হয়ে গিয়েছে।

author-image
Anusmita Bhattacharya
New Update
Screenshot 2025-09-16 165036

হরি ঘোষ, এমএএমসি নগরী: এককালে এমএএমসি নগরী কাঁপত ধুমধাম ভরা বিশ্বকর্মা পুজোতে। ঢাকের তালে, লাইটের ঝলকানি আর শ্রমিক-পরিবারের আনন্দে তখন পুরো শহর ছিল প্রাণচঞ্চল। এমএএমসি কারখানার প্যান্ডেলগুলো সাজাত আনন্দময় উত্তেজনায়, আর শহর ভরে থাকত উৎসবের রঙে। ১৯৬৫ সালে প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু উদ্বোধন করেছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত মাইনিং অ্যালাইড মেশিনারী কর্পোরেশন (এমএএমসি), যা মাইনিং যন্ত্রাংশ উৎপাদনের উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছিল। প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিকের জন্য গড়ে উঠেছিল বিস্তৃত এমএএমসি নগরী, যা “বিশ্বকর্মা নগরী” নামেও খ্যাতি পেয়েছিল। কিন্তু ২০০২ সালে আচমকাই পড়ে সংকট। উৎপাদন থমকে যায়, শ্রমিকদের অনেককে স্থানান্তর করতে হয়, কেউ কেউ চাকরিও হারান। ২০০৭ ও ২০১০ সালের বিভিন্ন পুনঃপ্রচেষ্টার পরও কারখানার চিমনি নিভে যায় ২০২২ সালে। কারখানার বন্ধ হওয়া প্রভাব ফেলেছে শিল্প, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনেও। যেখানে একসময় শ্রমিকদের পরিবার মিলিত হয়ে পরম্পরাগতভাবে বিশ্বকর্মা পুজো করতেন, আজ সেই পুজো হয় শুধু এক-দু’জনের উপস্থিতিতে, ছোট্ট মূর্তির সঙ্গে নিঃসঙ্গভাবে। রাজনৈতিক টানাপোড়েনও তীব্র। 

অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর ছেলে সুব্রত সরকার বলেন, "বিশ্বকর্মা পুজো আজ আর হয় না। আগে মেলা বসত, যাত্রা নাটক সব হত। কারখানা বন্ধের জেরে উধাও বিশ্বকর্মাও"। বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই অভিযোগ করেছেন, "এমএএমসির বন্ধের পিছনে তৃণমূল ও সিপিএমের ভূমিকা আছে। সব জায়গায় ইউনিয়নবাজি করার জন্য এই অবস্থা"। তৃণমূল নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় বলছেন, "রাজ্যের সবকিছুই বন্ধ করতে চাইছে ভারত সরকার। এই জন্যই মানুষ বারবার বিজেপিকে বিদায় দিচ্ছে"। হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ভূত বাংলোয় পরিণত হয়েছে এই কারখানা। কবে খুলবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বারে বারে ভারত সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়। ভোটের সময় শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয় খোলা হবে। ভোট পেরোলেই আর কারোর মনেই থাকে না। আমরা চাইছি বিশ্বকর্মার কৃপায় কারখানাটি সচল হোক"।

যেখানে একসময় শ্রমিকদের কোলাহলের স্মৃতি মিশে ছিল প্রতিটি কোণে, সেখানে এখন কেবল নীরবতা আর ফিকে পুজোর উপস্থিতি রয়ে গেছে।

Screenshot 2025-09-16 164956