মান্থার দাপটে উত্তরবঙ্গে জলজোয়ার! ভাঙল বাঁধ, শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি ছাড়ল

মান্থা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তরবঙ্গে দুর্যোগ। টানা বৃষ্টিতে শিসামারা নদীর নির্মীয়মান বাঁধ ভেঙে প্লাবিত শালকুমার ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। ২০০-র বেশি মানুষ আশ্রয় নিলেন স্কুলে। তিস্তায় জলছাড়া, জেলাজুড়ে আতঙ্ক। 48 নম্বর এশিয়ান হাইওয়েতে ধস। রবিবারেও বৃষ্টির সম্ভাবনা।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
maldah flood

নিজস্ব সংবাদদাতা: আবারও উত্তাল উত্তরবঙ্গ। ‘মান্থা’র প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে জলস্তর বাড়ছে একের পর এক নদীর। মানুষজনের মুখে কেবল একটাই প্রশ্ন—আবার কি প্লাবন? উদ্বেগ আর আতঙ্কে দিন কাটছে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি শালকুমার এলাকায়। ভুটানের দিক থেকে নামা জলে শিসামারা নদীর নির্মীয়মাণ বাঁধ ভেঙে মুহূর্তের মধ্যেই ডুবে যায় শালকুমার ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু বাড়িঘর। আতঙ্কে রাতারাতি বাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে অন্তত ২০০ জনকে। আশ্রয় নিতে হয়েছে স্থানীয় নতুনপাড়া লাল্টুরাম হাইস্কুলে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শালকুমার ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুবাশ রায় জানান, “জরুরি ভিত্তিতে করা বাঁধটা ভেঙে জল ঢুকে পড়েছে নতুনপাড়া, মুন্সিপাড়া—সহ আশপাশের গ্রামগুলোতে। ইতিমধ্যে ২০০–২৫০ পরিবারকে সরিয়ে স্কুলে নিয়ে আসা হয়েছে। গবাদি পশু বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। আরও জল বাড়লে পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে।”

এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা। জেলা পরিষদও নজর রাখছে। নিচু এলাকা খালি করার কাজ শুরু হয়েছে, চলছে মাইকিং। স্থানীয় বাসিন্দাদের আতঙ্ক আরও বাড়ছে কারণ মাত্র মাসখানেক আগেই ৫ অক্টোবরের দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই অঞ্চল। সেই ক্ষত শুকায়নি, তার মধ্যেই ফের জলবিপর্যয়।

Flood

দুর্গতি থামেনি অন্যত্রও। বীরপাড়ার ৪৮ নম্বর এশিয়ান হাইওয়েতে গেরগান্ডা ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোডে ধস নেমেছে। ফলে ভুটান ও উত্তর–পূর্ব ভারত থেকে শিলিগুড়ির দিকে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত।

জলপাইগুড়িতেও টানা বৃষ্টি। ইতিমধ্যে পড়েছে প্রায় ১৬৯ মিলিমিটার। নদীগুলো ফুলেফেঁপে উঠছে, তিস্তা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া শুরু হওয়ায় আতঙ্কে তিস্তাপাড়। সেচদপ্তর সারাক্ষণ পরিস্থিতি নজরে রাখছে। দার্জিলিংয়েও বৃষ্টি অব্যাহত; ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকেছে পাহাড়। দৃশ্যমানতা অত্যন্ত কম, যান চলাচলে সমস্যা।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শনিবার জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। দমকা হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। রবিবারও বৃষ্টি থাকলেও সোমবার থেকে ধীরে ধীরে আবহাওয়া বদলের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ এখন অপেক্ষা করছে একটু রোদের—আর একটু স্বস্তির।