/anm-bengali/media/media_files/2025/07/06/screenshot-2025-07-06-pm-2025-07-06-13-22-26.png)
নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপি করার অপরাধে বাড়িতে জলের কানেকশন দেওয়া যাবে না, এমনই ফতোয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরের, এমনই অভিযোগ ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার। জল কানেকশন পেতে বাধ্য হয়ে পৌরসভার চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়ে লিখিত অভিযোগ করলে ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে ডেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে গেলে বচসা ও গন্ডগোল বাঁধে চন্দ্রকোনা পৌরসভার চেয়ারম্যান এর সঙ্গে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও তার স্বামীর মধ্যে। চেয়ারম্যানের দাবি, তাকে তার রুমে হেনস্থা থেকে শারীরিক নিগ্রহ করে কাউন্সিলর ও তার স্বামী। পাল্টা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ কাউন্সিলরের। চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরকে নিয়ে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস জেলা সভাপতির। আর এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনায় তৃণমূল পরিচালিত পৌরসভায় বিজেপি কর্মীর পরিবারের পানীয় জলের কানেকশন আটকে রাখাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের। সেই জল গড়ায় কাউন্সিলরের ইস্তফা দেওয়া পর্যন্ত, যদিও ইস্তফা না দিয়ে ফিরে আসেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ঘটনার সূত্রপাত, পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অযোধ্যা গ্রামের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী সনাতন কোলের পানীয় জল কানেকশন আটকে রাখাকে কেন্দ্র করে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিজেপি কর্মী সনাতন কোলের অভিযোগ, "পৌরসভায় পানীয় জলের জন্য আবেদন করেও মিলেনি। বিজেপি করায় পানীয় জলের কানেকশন জোর করে আটকে রেখে দিয়েছে কাউন্সিল সোমা চৌধুরী কোলে ও তার স্বামী ওই ওয়ার্ডের সভাপতি সৌমিত্র কোলে। এনিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে গেলে লিখিত আবেদন জমা দিতে বলায় তা জমা দিই। চেয়ারম্যান পানীয় জল আটকে রাখার বিরোধীতা করে কানেকশন দিতে চাইলেও কাউন্সিলর ও তার স্বামী চেয়ারম্যানের সাথে উল্টে গন্ডগোল করে"। পৌরসভায় চেয়ারম্যানের রুমে তাদের পানীয় জলের কানেকশন দেওয়াকে নিয়ে কাউন্সিলরকে বলতে গেলে চেয়ারম্যান হেনস্থা হয়েছিলেন তা মানছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দা সনাতন কোলে। সূত্রের খবর, পানীয় জলের কানেকশন আটকে রাখা নিয়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দার থেকে অভিযোগ পেয়ে গত ৩০ শে জুন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোমা চৌধূরী কোলেকে ডেকে জানতে চাইলে কাউন্সিলর তার স্বামীকে চেয়ারম্যানের রুমে ডাকেন। আর তারপরই চেয়ারম্যানের সাথে বচসায় জড়ানো থেকে এমনকি নিজের দলেরই চেয়ারম্যানকে তার রুমে হেনস্থা থেকে শারীরিক নিগ্রহও করে বলে অভিযোগ কাউন্সিলর ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা যে সত্য তা স্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান প্রতিমা পাত্র। ঘটনার পর মেডিক্যাল পরীক্ষা সহ মৌখিক ভাবে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন ও জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। দলের ভাবমূর্তির কথা ভেবে সেসময় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ বা কোথাও মুখ না খুলে জেলা নেতৃত্বের সাথে সকলে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি চেয়ারম্যান প্রতিমা পাত্রের। কিন্তু সেই ঘটনা নতুন করে উস্কে দিয়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোমা চৌধুরী কোলে তার স্বামী সৌমিত্র কোলেকে সাথে নিয়ে ঘাটাল মহকুমা শাসকের কাছে ইস্তফা পত্র দিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণ হয়নি বলে খবর। গতকালই ঘাটলে দলীয় কার্য্যালয়ে জেলা সভাপতির হস্তক্ষেপে কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান উভয়কে নিয়ে আলোচনায় সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেয় জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। ঘটনা প্রকাশ্য আসে দলের নির্দেশ অমান্য করে সংবাদমাধ্যমে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কাউন্সিলরের মিথ্যা অভিযোগ ও মুখ খোলা নিয়ে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, পুরসভার চেয়ারম্যান তাকে মানসিকভাবে হেনস্থা করছেন। চেয়ারম্যানের অনৈতিক কাজকে তিনি সাপোর্ট করেন না সেই কারণেই তাকে মানসিকভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। যদিও তার বিরুদ্ধে তার পাশের বাড়ির এক বিজেপি পরিবারের পানীয় জল কানেকশন আটকে রাখার ফতোয়া নিয়ে কিছু বলতে চাননি ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোমা চৌধুরী কোলে। অন্যদিকে চন্দ্রকোনা পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রতিমা পাত্র জানান, "দলের ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে আমি সবকিছু মেনে নিয়ে চুপ ছিলাম, জেলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে উভয়ের সমস্যা মিটে গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল কার ইন্ধনে কাউন্সিলর ইস্তফা দিতে গিয়েছিল আর সে উল্টে আমার বিরুদ্ধেই নানান অভিযোগ তুলছে"। তিনি অভিযোগ করছেন, "১০ নম্বর ওয়ার্ডের এক ব্যক্তিকে সরকারি জলের কানেকশন দেওয়া হয়নি। সনাতন কোলে নামে ঐ ব্যক্তি এসে পৌরসভায় আমার কাছে অভিযোগ জানায়, পরবর্তী ক্ষেত্রে আমি ওই কাউন্সিলরকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাই কেন জল দেওয়া হয়নি। তৎক্ষণাৎ ওই কাউন্সিলর তার স্বামীকে আমার ঘরে ডাকে"। চেয়ারম্যানের অভিযোগ, তাকে হেনস্থা করে তার হাত ধরে টেনে শারীরিক নিগ্রহ করে আহত করা হয় এবং অশালীন কথাবার্তাও বলেন কাউন্সিলর ও তার স্বামী। যদিও চেয়ারম্যান বলেন, "দলীয়ভাবে আমি উপরে মহলে সব জানিয়েছি দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে বলে আমি পুলিশে অভিযোগ করিনি। বিষয়টা দলীয়ভাবে মিটে গেছিল। পরবর্তী ক্ষেত্রে আমার নামেই মিথ্যে অভিযোগ আনা হচ্ছে"। অন্যদিকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের প্রতিবেশীর অভিযোগ বিজেপি করায় জল কানেকশন দেওয়া আটকে রেখেছে, এমনকি বাড়ির পাশের একটি সরকারি ট্যাপের কানেকশনও বন্ধ করে দিয়েছে কাউন্সিলর। তবে সমস্ত অভিযোগই মিথ্যে বলে জানিয়েছে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সোমা চৌধুরী কোলে। বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, "বিরোধী দল করলে তাকে সরকারের কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া যাবে না। তৃণমুলের এই নোংরা রাজনীতির আমরা অব্যাহতি চাইছি। এটা কেবল চন্দ্রকোনা নয়, রাজ্য জুড়েই চলছে"। যদিও এবিষয়ে তৃণমুলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অজিত মাইতি জানিয়েছেন, "চন্দ্রকোনা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও তার স্বামীর মধ্যে একটা সমস্যা হয়েছিল। আমি আগেও ওদের নিয়ে বসে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কালকেও ঘাটালে ওদের নিয়ে বসে সমস্যা মিটিয়ে নিয়েছি।" বিজেপি কর্মীর পানীয় জল বন্ধের অভিযোগ দলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এনিয়ে জেলা সভাপতি বলেন, "দলমত নির্বিশেষে আমাদের সরকার পরিষেবা দেয়, মিথ্যা অভিযোগ করছে বিজেপি।"