/anm-bengali/media/media_files/2025/11/25/whatsapp-image-2025-11-25-at-165327-2025-11-25-20-25-33.jpeg)
File Picture
নিজস্ব সংবাদদাতা: আড়াই বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান। শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরল ডাউকা গ্রামের হারিয়ে যাওয়া কিশোর উত্তম পাত্র। সময়টা ২০২৩ সালের ২৯ মে। মাত্র ১৬ বছরের ছেলে উত্তম সে দিন আচমকাই উধাও হয়ে যায়। পরিবার, আত্মীয়, প্রতিবেশী সকলেই খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত। আশপাশের থানায় খোঁজখবর, পোস্টার টাঙানো, আত্মীয়দের বাড়ি তল্লাশি সবই করা হয়েছিল। কিন্তু ছেলের কোন হদিশ না মেলায় পাত্র পরিবার একপ্রকার আশা হারিয়েই ফেলেছিল।
সেই অন্ধকারের মধ্যেই আলো দেখালো নারায়ণগড় থানার পুলিশ। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ছেলেকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও হাল ছাড়েননি তদন্তকারীরা। ১১ নভেম্বর হঠাৎই নারায়ণগড় থানার ওসি সুজয় লায়েকের কাছে ফোন আসে মেঘালয়ের নং-শিলংয়ের একটি হোম থেকে। সেখানে আশ্রিত একজন কিশোরের বর্ণনা ও নাম মিলছে ডাউকা গ্রামের নিখোঁজ উত্তমের সঙ্গে। খবরটি হাতে পেয়ে এক মুহূর্ত দেরি না করে দায়িত্ব দেন থানার এএসআই (ASI) পিনাকী রঞ্জন রাহাকে।
/filters:format(webp)/anm-bengali/media/media_files/szigBXDlGOKYGenF2s8k.jpg)
দায়িত্ব পেয়েই পিনাকীবাবু একজন কনস্টেবলসহ ছেলেটির বাবা কিঙ্কর পাত্র, দাদা ও জামাইবাবুকে নিয়ে ১৬ নভেম্বর রওনা দেন শিলংয়ের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ যাত্রা শেষে তারা পৌঁছন রাইলাঙ্গ চিলড্রেনস হোমে। সেখানে বহুদিন ধরে থাকা অসহায় কিশোরের মধ্যেই মিলল উত্তম পাত্রকে। শারীরিকভাবে আগের মতো না হলেও মানসিকভাবে স্থিতিশীল, সুস্থ। ২০২৪ সালের জুন মাসে শিলং থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছিল রাস্তায় ঘুরতে দেখার পর। ভাষাজনিত সমস্যায় কাজ হারিয়ে অসহায় অবস্থায় ঘুরে বেড়াত বছরখানেক। এরপর শিশু কল্যাণ কমিটির তত্ত্বাবধানে চলে দীর্ঘ চিকিৎসা।
চিলড্রেনস হোমের কর্মীরা জানান, উত্তম তেমনভাবে কিছু বলতে না পারলেও ‘নারায়ণগড়’ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারছিল। সেই সূত্রেই যোগাযোগ হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় থানার সঙ্গে। রবিবার উত্তমকে নিয়ে ফিরে আসে নারায়ণগড় থানার উদ্ধারকারী দল। পরের দিন সোমবার সকালে থানার গাড়িতে করে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে। ছেলেকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা কিঙ্কর পাত্র। তাঁর কথায়, “নারায়ণগড় থানার পুলিশের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। কখনও ভাবিনি ছেলেকে ফিরে পাব। আজ যেন নতুন করে বাঁচলাম। আর তাকে কখনও চোখের আড়াল হতে দেব না”।
স্থানীয় বাসিন্দারাও নারায়ণগড় থানার এই মানবিক ভূমিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “একজন নিখোঁজ নাবালককে বাড়ি ফেরানো পুলিশের দায়িত্ব। আমরা শুধু সেই দায়িত্ব পালন করেছি। পরিবার ছেলেকে পেয়ে খুশি—এটাই আমাদের প্রাপ্তি”।
আড়াই বছরের অজস্র জিজ্ঞাসা, দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর প্রচেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত বাড়ি ফিরল ডাউকা গ্রামের হারানো ছেলে উত্তম। পরিবারের কাছে—এই ফিরে আসা শুধু একজনের নয়, যেন পুরো পরিবারের নতুন জীবন ফিরে পাওয়া।
/anm-bengali/media/agency_attachments/IpyOoxt2orL626OA8Tlc.png)
Follow Us