বাঙালির কাছে প্রেমের নিরিখে কিন্তু বসন্তকে টেক্কা দেয় শরত। আশ্বিনের শারদ প্রাতে প্রথম দেখা, কিম্বা দেখা আগেই, ষষ্ঠীতে প্রথম হাতে হাত রাখা। সদ্য কৈশোর কিম্বা কৈশোর ফুরিয়ে আসার বেলা, জীবনের একেক বাঁকে পুজো প্রেম একেক রকম! বছর বছর কত্ত ভালবাসার গান আসছে যাচ্ছে। বছরের ওই চারটে দিনের ঢাকের আওয়াজের চেয়ে হিট লাভ অ্যান্থেম হয় না, হবেও না।

অন্য সময় বাড়িতে হাজার কড়াকড়ি! ষষ্ঠী থেকে দশমী কোনও শেকল নেই। বাড়ি ফিরতে একটু রাত হলে বড়দের চোখ রাঙ্গানিতেও যেন প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়। বুক ধুকপুকের কারণ যদি পাড়ার পুজোতেই থাকে, তাহলেও তো সোনায় সোহাগা! দিনরাত মণ্ডপেই বসে থাকা নানা অছিলায়। অষ্টমীর অঞ্জলিতে ফুল কাড়াকাড়ি-খুনসুটি! শাড়ি-পাঞ্জাবির রঙ মিলে গেলেও বাড়ির হিটলার মামা-কাকারা যেন দেখেও না দেখেন ওই দিনগুলোয়। কে জানে? ওদেরও বোধহয় মনে পড়ে যায় ঠোঁটের ওপর সরু গোঁফ ওঠা দিনগুলো।

ম্যাডক্সে একই স্ট্র থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কসে চুমুক! নতুন জুতোয় ফোসকা পড়তে না পড়তেই পাশে পাশে চলা আঙুলটা খপ করে ধরে ফেলা, গাদাগাদি ভিড়ে নিজেদের হারিয়ে ফেলে অসহায় ভাব, ফের খুঁজে পেয়েই লাজুক হাসি...দশমীর সন্ধেয় বুকটা খাঁ খাঁ করা, এসব বোধহয় চিরন্তন। ফর্মটা সামান্য পালটায়... কিন্তু অনুভূতিগুলো একই রকম, শাশ্বত।

পুজোর প্রেমে বোধন আসে যেমন, ভাসানও হয় অধিকাংশই। মনে হেমন্তের খালি খালি ভাব, শূন্যতা সব আসে, সব। পুজো-প্রেম-প্রকৃতি আসলে মিশে মিশে থাকে তো। প্রেমে বিসর্জন হলেও ক্ষত শুকোয় তো। বিসর্জনের মুহূর্ত থেকেই যে শুরু অপেক্ষা। হয়তো নতুন প্রেম, নতুন সম্পর্ক। আসছে বছর, আবার হবে, হয়তো আরও একটু পোক্ত, আরও পরিণত। বিসর্জনে বিষাদ থাকুক, ক্ষতি নেই, সঙ্গে থাকুক প্রাণ ভরা অপেক্ষা, সেটাই সবচেয়ে সুন্দর।