মিলানে মডেল পামেলা জেনিনি খুন—সম্পূর্ণ দেশ কাঁপানো ফেমিসাইড আতঙ্ক!

ইতালির মডেল ও উদ্যোক্তা পামেলা জেনিনি মিলানে নির্মমভাবে খুন। প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে খুন, স্টকিং ও পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণের অভিযোগ। তিনি ২০২৫ সালের ৭২তম ফেমিসাইডের শিকার।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
italy protest 2

নিজস্ব সংবাদদাতা:  ইতালির জনপ্রিয় মডেল ও ব্যবসায়ী পামেলা জেনিনি—মাত্র ২৯ বছর। মিলানের বাসিন্দা এই তরুণী দেশে-বিদেশে পরিচিত ছিলেন তাঁর চমকপ্রদ ক্যারিয়ারের জন্য। রিয়েলিটি শোতে আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন আলোচিত ইনফ্লুয়েন্সার। পাশাপাশি উপার্জনের বড় অংশ আসত তাঁর রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে, যেখানে সাগরপাড়ের দামি প্রপার্টি বিক্রি করে মোটা কমিশন পেতেন। সম্প্রতি এক সহ-ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে মিলে তিনি শুরু করেছিলেন নিজের সাঁতারের পোশাকের ব্র্যান্ডও।

ইতালিতে তরুণদের বেকারত্বের হার খুবই বেশি। সেই বাস্তবতার মাঝেই পামেলা ছিলেন অনেকের অনুপ্রেরণা—একজন সফল, স্বাধীন, নিজের শর্তে চলা নারী। কিন্তু মাত্র এক রাতে সব শেষ হয়ে গেল।

অক্টোবরের মাঝামাঝি এক সন্ধ্যায় তাঁর ৫২ বছরের সাবেক প্রেমিক জিয়ানলুকা সনসিন তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়েন। পরে অভিযোগ ওঠে—তিনি পামেলাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। প্রতিবেশীদের ফোন পেয়ে পুলিশ পৌঁছোতে পৌঁছোতেই দেখা যায়, পামেলার নিথর দেহ তাঁর ব্যালকনিতে পড়ে আছে, আর পাশে বসে আছে ওই মানুষটি। তদন্তকারী বিচারকের বক্তব্যও সেই দিকেই ইঙ্গিত করে।

itali protest

সনসিন এখন সলিটারি কনফাইনমেন্টে রয়েছেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের অপেক্ষায়। তাঁর বিরুদ্ধে খুন, নিষ্ঠুরতা, নির্মম আচরণ, স্টকিং, এবং পূর্বপরিকল্পিত হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন—তিনি এখনও পর্যন্ত তদন্তকারী সংস্থাকে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

ইতালিতে ফেমিসাইড—অর্থাৎ নারীকে লিঙ্গের কারণে খুন করার ঘটনা—ভয়ঙ্কর হারে বাড়ছে। পর্যবেক্ষক সংস্থা Non Una Di Meno জানিয়েছে, ২০২৫ সালে পামেলা ছিলেন সেই বছরের ৭২তম ফেমিসাইডের শিকার। তাঁর মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ পরেই আরও চারজন নারী নির্মমভাবে খুন হয়েছেন—যাদের মধ্যে আছেন ৬২ বছরের লুচিয়ানা রোনকি এবং ৮০ বছরের ভান্ডা ভেনদিত্তি। ষোলটির মতো ঘটনা এখনও তদন্তাধীন, এগুলিও ফেমিসাইড কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এক বছর আগেই দেশে ১১৬টি ফেমিসাইডের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। যদিও আগের দুই বছরের তুলনায় সামান্য কম, কিন্তু এখনই যে সংখ্যাটা আবার বাড়ছে—পামেলাকে ঘিরে নতুন করে সেই আতঙ্কই ধরা পড়ছে গোটা ইতালিতে।

এই তরুণীর মৃত্যু এখন ইতালির নারী–নিরাপত্তা, আইনি সুরক্ষা এবং সম্পর্কের নামে লুকিয়ে থাকা সহিংসতা নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভের ঝড়, রাস্তায় প্রতিবাদ, এবং নারীনিধনের বিরুদ্ধে নতুন আইন প্রয়োজন কি না—সেসব প্রশ্ন আবার বড় হয়ে উঠছে।
পামেলার পরিবার ও বন্ধুদের কথায়—"সে জীবনকে ভালোবাসত। নিজেকে গড়ে তুলেছিল নিজের শক্তিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজন পুরনো সম্পর্কের ভয়ঙ্কর ছায়া ওকে কেড়ে নিল।"

ইতালি জুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন—আর কত পামেলা, আর কত মৃত্যু?