বৈরুত কাঁপাল ইসরায়েলের নিশানা! হিজবুল্লাহর চিফ অফ স্টাফ আলি তাবাতাবাই খতম—বাড়ছে যুদ্ধের আগুন

ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলায় বৈরুতের দাহিয়েহ অঞ্চলে হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার আলি তাবাতাবাই নিহত হয়েছে বলে দাবি IDF-এর।

author-image
Tamalika Chakraborty
New Update
hizbullah

নিজস্ব সংবাদদাতা: বৈরুতের আকাশে রবিবার বিকেলে আচমকা বিস্ফোরণের শব্দ ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দারা। একাধিক ভবন কেঁপে ওঠে, ধুলোয় ঢেকে যায় আশপাশের ব্যস্ত রাস্তাগুলি। পরে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF) জানায়, এই হামলায় তারা হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার আলি তাবাতাবাইকে ‘নিরসন’ করেছে। ১৯৮০-র দশক থেকে সক্রিয় এই প্রবীণ নেতা হিজবুল্লাহর রাদওয়ান ফোর্সের স্থপতি বলেই পরিচিত ছিলেন।

ইসরায়েলের দাবি, তাবাতাবাই শুধু সিরিয়ায় অপারেশন তদারকি করেননি, লেবানন সীমান্তে গত বছরের যুদ্ধের পর হিজবুল্লাহর সামরিক পুনর্গঠনের নেতৃত্বও তিনিই দিয়েছিলেন। গত কয়েক মাস ধরে তিনি হিজবুল্লাহর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে ইসরায়েল সূত্রে জানা গেছে। যদিও হিজবুল্লাহ এখনও তাঁর মৃত্যু নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

বৈরুতের দাহিয়েহ অঞ্চলে যে এলাকায় হামলা হয়, সেটি দীর্ঘদিন ধরেই হিজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের আগেই আকাশে যুদ্ধবিমানের শব্দ শোনা গিয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে কয়েকটি গাড়ি ও আশপাশের দোকানখানা জ্বলে ছাই হয়ে যায়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়েছেন এবং ২০-র বেশি মানুষ গুরুতর আহত।

israel defence force

মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, হামলার আগে ওয়াশিংটনকে কিছুই জানায়নি ইসরায়েল। তবে ঘটনার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করা হয়েছে। আমেরিকার একাধিক আধিকারিকের দাবি, কয়েক দিন ধরেই ইসরায়েলের লেবাননে বড়সড় অভিযানের প্রস্তুতির কথা তাদের জানা ছিল।

২০১৬ সালে মার্কিন ট্রেজারি আলি তাবাতাবাইকে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত করেছিল এবং তাঁর সম্পর্কে তথ্য দিতে ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই এই হামলাকে হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের উপর বিরল ও অত্যন্ত বড় আঘাত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

হিজবুল্লাহ সাংসদ আলি আম্মার বলেন, ইসরায়েল বারবারই ২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। তাঁর অভিযোগ, “ইসরায়েলি শত্রু ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক বাড়ি, মানুষ ও জনবহুল এলাকা টার্গেট করছে।”

গত দুই বছরে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর বহু জ্যেষ্ঠ কমান্ডার এবং হাজার হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে। এমনকি সংগঠনের প্রাক্তন প্রধান হাসান নাসরাল্লাহও নিহত হয়েছেন বলে সাম্প্রতিক অভিযোগ। রবিবার ক্যাবিনেট বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফের স্পষ্ট করেন, হিজবুল্লাহ যাতে আবার শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই ইসরায়েলের একাধিক ফ্রন্টে অভিযান চলবে।

বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ফের চরমে উঠেছে। সীমান্তের দুই প্রান্তেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তা লেবানন ও ইসরায়েল—দুই দেশের নাগরিকের।